গত বৃহস্পতিবার থেকে রাজ্যে করোনা বিধি-নিষেধ শিথিলের পর থেকেই স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফেরার আশায়, বাড়ির বাইরে পা রেখেছেন অনেক ঘর-বন্দি মানুষ। লোকাল ট্রেন এখনও চালু হয়নি ঠিকই, তবে সরকারি-বেসরকারি বাস রাজ্য সরকারের কাছ থেকে ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে পথে নামার ছাড়পত্র পেয়েছে।
রাজ্যজুড়ে ফের বাস পরিষেবা চালু করার সরকারি অনুমতির পর কিছুটা স্বস্তি পান রাজ্যের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আম বাসিন্দারা। কিন্তু বাসের ভরসায় পথে নেমে রীতিমতো নাকাল হতে হচ্ছে নিত্যযাত্রীদের। কোথায় বাস! রাস্তায় অটো, ট্যাক্সি, টোটোর দেখা মিললেও বেসরকারি বাস তেমন একটা চোখে পড়ছে না।
‘হাতে গোনা’ সরকারি বাসের ভরসায় যাঁরা বাইরে বেরচ্ছেন, হয় তাঁদের বাসের জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হচ্ছে, নয় তো অটো, ট্যাক্সি ইত্যাদির ভরসায় মোটা টাকা খসিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
কিন্তু সরকারি অনুমতির পরেও রাস্তায় বেসরকারি বাসের দেখা মিলছে না কেন? এ প্রসঙ্গে রাজ্য বেসরকারি বাস সিন্ডিকেটসের জয়েন্ট কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক (জেনারেল সেক্রেটারি) তপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, সরকারি অনুমতি মিললেও ভর্তুকি তো মিলছে না! আকাশছোঁয়া ডিজেলের দাম। এ দিকে, ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে কোভিড বিধি মেনে বাস চালাতে হবে। বিপুল ক্ষতির চাপ সামাল দিতে পারবেন না বাস মালিকরা। তাই পথে নামেনি অধিকাংশ বাস।
এ রাজ্যে কলকাতা, হাওড়া, দুই ২৪ পরগনা মিলিয়ে প্রায় ৭ হাজার বেসরকারি বাস, মিনি বাস চলে। অন্যান্য সমস্ত জেলা মিলিয়ে আরও বেসরকারি বাসের সংখ্যা প্রায় ৩৫ হাজার। সব মিলিয়ে বছর দেড়েক আগে পর্যন্ত এ রাজ্যে প্রায় ৪২ হাজার বাস চলত।
রাজ্য বেসরকারি বাস সিন্ডিকেটসের জয়েন্ট কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক জানান, গত বছর আনলকের সময় থেকে রাজ্যে ধাপে ধাপে ১২-১৫ হাজার বাস চালু করা গিয়েছিল। তবে এ বারের পরিস্থিতি আরও শোচনীয়! সরকারি ছাড়পত্র মিললেও তাই লোকসানের ধাক্কায় প্রায় ৯৫ শতাংশ বেসরকারি বাসই বসে গিয়েছে।
তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “গত বছর ডিজেলের দাম লিটারে ৬৮-৭০ টাকা ছিল, এখন যা বেড়ে ৯৩ টাকা হয়েছে। কলকাতায় একটা বাস চালাতে সারাদিনে ৫০-৬০ লিটার তেল লাগে। কোভিড বিধি মেনে ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে বাস চালালে তেলের দামই উঠবে না। তার উপর কর্মীদের মাইনে, রক্ষণাবেক্ষণের খরচ রয়েছে। নিজের ঘর থেকে টাকা দিয়ে কে বাস চালাতে চাইবে! কেউ চাইলেও পারবে কী করে!”
রাজ্য বেসরকারি বাস সিন্ডিকেটসের জয়েন্ট কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক (জেনারেল সেক্রেটারি) জানান, পরিবর্তিত পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে ভাড়া না বাড়ালে লোকসান করে বাস চালানো সম্ভব নয়। রাজ্য সরকারকেও এ কথা একাধিক বার সবিস্তারে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। সরকার সম্প্রতি একটি কমিটিও গঠন করেছে এই বাস ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য। সদর্থক পরামর্শ বা সিদ্ধান্ত হলে তবেই বাঁচবে রাজ্যের পরিবহণ শিল্প। তবেই পথে ফের নামানো যাবে একশো শতাংশ বেসরকারি বাস।
তপনবাবু বলেন, “তেলের দাম বিবেচনা করে ভাড়া বাড়ালে এই মুহূর্তে বেসরকারি বাস মালিকদের কিছুটা সুরাহা হবে। রাজ্যে ৮৫ শতাংশ নিত্যযাত্রী বেসরকারি বাসের উপর নির্ভরশীল। কৃষির পর সব থেকে বেশী মানুষ বেসরকারি বাস শিল্পের সঙ্গে জরিত। করোনা মহামারির ফলে এই শিল্পটা কোমায় চলে গিয়েছে। রাজ্য সরকারের সদর্থক সিদ্ধান্তই এই শিল্পটাকে বাঁচাতে পারে।”