কলকাতার স্ট্রিট ফুডের টানে অনেকেই ভিন রাজ্য থেকে ছুটে আসেন এখানে। প্রবাসি বাঙালি ছাড়াও দেশি-বিদেশি অসংখ্য পর্যটকদের মতে, এ শহরের মতো এত রকম স্ট্রিট ফুড দেশের আর কোথাও পাওয়া যায় কিনা সন্দেহ!
শুধু কলকাতাতেই নয়, বাংলার আনাচে কানাচে এমনই অনেক রকম বাহারি, সুস্বাদু স্ট্রিট ফুড রয়েছে যেগুলির জনপ্রিয়তা এতটাই যে পাঁচতারা হোটেলেও বিভিন্ন ফেস্টিভে রাজকীয় একাধিক পদের সঙ্গে তালিকায় জায়গা করে নেয় সেগুলিও।
কিন্তু সমস্যা হল, এ রাজ্যের প্রায় ৭০ শতাংশ স্ট্রিট ফুডের ব্যবসায়ীর কোনও লাইসেন্স বা রেজিস্ট্রেশনের বালাই নেই! অর্থাৎ, মুখরোচক স্বাদের টানে হরেক রকম স্ট্রিট ফুড খাচ্ছেন ঠিকই, তবে ওই খাবারের গুণমান সম্পর্কে কোনও ধারণাই থাকছে না ক্রেতার বা বিক্রেতার। ফলে হয়তো অজান্তেই আপস করতে হচ্ছে স্বাস্থ্যের সঙ্গে।
স্ট্রিট ফুডের ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স বা রেজিস্ট্রেশনের সঙ্গে তাঁর বিক্রি করা খাবারের গুণমান বা বিক্রেতার স্বাস্থ্যের কী সম্পর্ক? লাইসেন্স বা রেজিস্ট্রেশন করা স্ট্রিট ফুডের ব্যবসায়ীরা কী বেচছেন, কী ভাবে বানাচ্ছেন আর কোথায় বিক্রি করছেন, সে সম্পর্কে একটা সুনির্দিষ্ট তথ্য রাজ্য সরকার বা সংশ্লিষ্ট প্রসাসনের কাছে থাকে।
এর ফলে লাইসেন্স বা রেজিস্ট্রেশন করা স্ট্রিট ফুড বিক্রেতার খাবার আর তার গুনমান সম্পর্কে নজরদারি করা সম্ভব হয়। একই কারণে ভোজনরসিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার দিকটিও খেয়াল রাখা যায়।
সম্প্রতি রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের খাদ্য নিরাপত্তা শাখার পর্যবেক্ষণে একটি গুরুতর তথ্য সামনে এসেছে যা চিন্তা বাড়িয়েছে স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের। হিসাব বলছে, এ রাজ্যে নেই নেই করেও প্রায় ১০ লক্ষ স্ট্রিট ফুডের দোকান রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৩ লক্ষ দোকানের লাইসেন্স বা রেজিস্ট্রেশন রয়েছে। অর্থাৎ, বাকি ৭ লক্ষ স্ট্রিট ফুডের ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স বা রেজিস্ট্রেশন করা নেই।
এই পরিস্থিতি বদলাতে স্ট্রিট ফুডের ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স বা রেজিস্ট্রেশনের বিষয়ে নজরদারি আরও বাড়াতে চাইছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের খাদ্য নিরাপত্তা শাখা। ছোট-বড়-মাঝারি প্রতিটি খাবারের দোকান ও হোটেলের লাইসেন্স তৈরির ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের সচেতন করা কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে।
স্ট্রিট ফুডের ব্যবসায় লাইসেন্স বা রেজিস্ট্রেশনের খরচ কত?
২০১১ সালের খাদ্য নিরাপত্তা এবং মান বিধি (Food Safety and Standards Rule 2011) অনুযায়ী, ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বার্ষিক আয়ের ক্ষেত্রে বছরে লাইসেন্স বা রেজিস্ট্রেশনের খরচ মাত্র ১০০ টাকা। যে সব দোকানের আয় বছরে ১২ লক্ষ টাকা থেকে ২০ কোটি টাকা পর্যন্ত, তাদের প্রতি বছর লাইসেন্সের খরচ ২-৫ হাজার টাকা। তবে যে সব দোকানের আয় বছরে ২০ কোটি টাকার বেশি, তাদের কেন্দ্রীয় সরকারের ফুড সেফটি লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হয়।