একদিকে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি আর অন্যদিকে এলপিজি গ্যাসের দাম বাড়া, দুইয়ের ধাক্কায় নাজেহাল আম জনতা। অবশেষে যেন খানিক হাঁফ ছেড়ে বাঁচল মধ্যবিত্ত। দেশেরবাসীকে স্বস্তিরবার্তা দিল মোদী সরকার।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা একটি জাতীয় মিশন চালু করার অনুমোদন দিয়েছে। ভোজ্য তেলের আমদানির উপর নির্ভরতা কমাতে এবং এর উৎপাদন বাড়াতে সরকার ১১,০৪০ কোটি টাকার একটি জাতীয় মিশন চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা বুধবার ভোজ্য তেলের আমদানির উপর নির্ভরতা কমাতে National Edible Oil Mission-Oil Palm (NMEO-OP) ১১,০৪০ কোটি টাকার জাতীয় মিশন অনুমোদন করেছে।
এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ভোজ্য দেলের জন্য বিদেশের উপর নির্ভরতা অনেকটা কমবে। তার জায়গায় ভারতের স্বকীয় একটি তৈল উৎপাদন ব্যবস্থা তৈরি হবে। যে ব্যবস্থায় ভোজ্য তেল উৎপাদন অনেকটা বেশি সহজ হবে। এমনকি আমদানিকৃত খরচ না থাকায়, দেশের নাগরিকদের জন্য তেলের দামেও অনেকটা হ্রাস পাওয়া যাবে।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা
৯ অগাস্ট, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশে ভোজ্য তেলের আকাশছোঁয়া দাম নিয়ন্ত্রণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করেছিলেন। তেলের দাম নিয়ন্ত্রণ এবং কৃষকদের আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী মোদী পাম তেল উৎপাদনের জন্য একটি জাতীয় পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলেন।
দেশকে ভোজ্য তেলে স্বনির্ভর করতে এবং কৃষকদের উপকারে আনতে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ভোজ্য তেল মিশন (পাম অয়েল) ঘোষণা করেছিলেন, যার জন্য সরকার প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। এই স্কিমের আওতায়, কেন্দ্রীয় সরকার ২০২৫-২৬ সাল পর্যন্ত দেশে পাম তেলের উৎপাদন তিনগুণ বাড়িয়ে ১১ লাখ মেট্রিক করার লক্ষ্য নিয়েছে।
বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে কৃষি মন্ত্রকের এই প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। সরকার খেজুর চাষে কৃষকদের দেওয়া ভর্তুকি এবং রোপণ সামগ্রীতে সহায়তা বৃদ্ধিরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী কী বললেন
এই স্কিম পাম অয়েল উৎপাদনে উৎসাহিত করবে এবং আমদানির উপর নির্ভরতা কমাবে। প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, 'আমাদের কৃষকরা যে কাজ ডাল দিয়ে করেছেন, এখন আমাদের তৈলবীজে কাজ করতে হবে। ভোজ্য তেলে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য জাতীয় ভোজ্য তেল মিশন (পাম অয়েল) সমাধান করা হয়েছে। এই মিশনের মাধ্যমে ভোজ্য তেলের উৎপাদন বাড়াতে ১১ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে। এর আওতায় কৃষকদের সব ধরনের সুযোগ -সুবিধা দেওয়া হবে। এর আওতায় ট্র্যাডিশনাল তৈলবীজ চাষকেও উন্নীত করা হবে।
তিনি বলেন, ভারতে পাম অয়েল চাষের জন্য সব ধরনের সম্ভাবনা রয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, ভারত বর্তমানে বছরে প্রায় ৯৩ লক্ষ মেট্রিক টন পাম তেল ব্যবহার করে, যার মধ্যে ৯৯ % মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা হয়।
পরিকল্পনাটি কী
কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমার সাংবাদিকদের বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার পাম তেলের কাঁচামালের দাম ঠিক করবে। এর সাথে এটাও ঠিক করা হয়েছে যে যদি বাজারে ওঠানামা হয় এবং কৃষকের ফসলের দাম কমে যায়, তাহলে ডিবিটি -র মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার কৃষকদের অর্থের পরিমাণ প্রদান করবে।
জানা যাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারের পাশাপাশি এই প্রকল্পে থাকছে রাজ্য সরকারের অবদানও। তবে ৮০-২০ শতাংশের অনুপাতে। মোট ১১,০৪০ কোটি টাকার মধ্যে কেন্দ্রের তরফ থেকে থাকছে ৮,৮৪৪ কোটি টাকা। রাজ্যের অবদান২,১৯৬ কোটি টাকা।
ভারতে বর্তমানে বার্ষিক ২.৪ কোটি টন ভোজ্য তেল উৎপাদন করা হয়। উৎপাদিত এই তেল দিয়ে গোটা দেশের চাহিদা মেটানো সম্ভবপর হয় না। তাই বিশাল বড় পরিমাণ তেল আমদানি করতে হয় বিদেশ থেকে। আমদানিকৃত এই তেলের পরিমাণ প্রায় ৫৫ শতাংশ। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা সয়াবিনের তেল, ইন্দোনেশিয়া-মালেশিয়া থেকে পাম তেল ও ইউক্রেন এবং রাশিয়া থেকে সূর্যমুখীর তেল আমদানি করে ভারত।