ভারতে সোনা ও রুপোর দাম সম্প্রতি নতুন রেকর্ড গড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির জেরে দেশীয় বাজারেও সোনার দর বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে।
এই প্রতিবেদন যখন লেখা হচ্ছে, সোনার দাম প্রতি ১০ গ্রামে ৯৬ হাজার টাকা (৯৯.৯% খাঁটি সোনার দাম) পৌঁছে গিয়েছএ। যা এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ।
এই দামের হঠাৎ বৃদ্ধি অনেকেই ভাবছেন, এবার বুঝি পুরনো গয়না বিক্রির সঠিক সময়। কিন্তু সত্যিই কি এখনই সোনার গয়না বেচে দেওয়া উচিত? বিশ্লেষকরা বলছেন, সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বুঝে শুনে চলাই বুদ্ধিমানের।
যাঁরা বহু বছর আগে সোনা কিনেছিলেন, তাঁদের জন্য এই মুহূর্তে সোনা বিক্রি করলে লাভ অনেকটাই হতে পারে।
কেননা, আগেকার তুলনায় বর্তমান দর প্রায় দ্বিগুণ বা তার বেশি। সেই সোনার দাম আজকালকার বাজার দরে বিক্রি করলে বড়সড় লাভ করা যায়।
এই লাভের অর্থ ব্যবহার করা যেতে পারে। অন্য কোনও অ্যাসেট বা বিনিয়োগে। জরুরি আর্থিক প্রয়োজনে। এমন কিছু কেনাকাটায়, যা দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনায় ছিল।
তবে এই সিদ্ধান্তটা নেওয়া উচিত আপনি সোনাকে কী চোখে দেখছেন তার উপর নির্ভর করে। যদি সোনা আপনার কাছে শুধুই একটি আর্থিক সম্পদ হয়, তবে দামের সর্বোচ্চ পর্যায়ে বিক্রি করাই যুক্তিযুক্ত। কিন্তু যদি সেটি আবেগের বা পারিবারিক ঐতিহ্যের অংশ হয়, তাহলে সিদ্ধান্ত একটু আলাদা হতে পারে।
সোনা বিক্রিতে লাভ হলেও, তার উপর সরকার কর ধার্য করে। নতুন আয়কর আইনের আওতায়, যদি আপনার গয়না দুই বছরের বেশি পুরনো হয়, তাহলে সেটি ‘লং-টার্ম ক্যাপিটাল গেইন’ (LTCG) হিসাবে গণ্য হবে।
এই ক্ষেত্রে আপনাকে ১২.৫% হারে কর দিতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, ইনডেক্সেশন সুবিধা এখানে প্রযোজ্য নয়। অর্থাৎ, আপনার ক্রয়মূল্য সময়ের সঙ্গে মূল্যস্ফীতির হারে সামঞ্জস্য করা হবে না। ফলে লাভের অঙ্কের উপর সরাসরি কর বসবে। অতএব, সোনা বিক্রির আগে কর বাবদ কতটা দিতে হতে পারে, তা হিসেব করে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
সোনার ভবিষ্যৎ দামের উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উপরে। বিশেষ করে আমেরিকার অর্থনীতির অবস্থা এখানে বড় ভূমিকা নেয়। যদি আমেরিকায় মুদ্রাস্ফীতি (inflation) দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার উচ্চ রাখবে। এই পরিস্থিতিতে সোনার দাম কমার সম্ভাবনা থাকে, কারণ তখন মানুষ ঝুঁকিহীন অথচ উচ্চ রিটার্নের দিকে ঝোঁকে।
তবে যুদ্ধ, ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা বা অর্থনৈতিক মন্দার ইঙ্গিত থাকলে সোনার প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ে, দামও চড়ে। ফলে বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী কয়েক মাসে এই দোলাচলে সোনার দাম ওঠানামা করতেই পারে।
আপনার আর্থিক প্রয়োজন কতটা জরুরি? আপনি সোনাকে বিনিয়োগ হিসাবে দেখেন, নাকি পারিবারিক ঐতিহ্য হিসেবে? কর বাবদ কতটা দিতে হবে এবং বিক্রির পর লাভ কতটা থাকবে? ভবিষ্যতে সোনার দর কেমন হতে পারে, সেই ধারণাটা কতটা পরিষ্কার?
যদি আপনার কাছে এমন পুরনো গয়না থাকে যেটি আবেগ বা ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িত নয়, এবং আর্থিকভাবে লাভদায়ক বিক্রি মনে হয়, তাহলে এই দাম বৃদ্ধি একটা ভাল সুযোগ হতে পারে। তবে আবেগ, কর এবং ভবিষ্যতের বাজার সবকিছুর দিক বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নিন।