ভারতের শহর হোক বা গ্রাম, আজ সর্বত্র রাজত্ব করছে ব্যাটারিচালিত ই-রিকশা। কারও কাছে এর নাম টুমটুমি, কারও কাছে টোটো বা ময়ূরী। সাশ্রয়ী ভাড়ায় সহজলভ্য হওয়ায় সাধারণ মানুষের যাতায়াতের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে এই তিনচাকার বাহন। শুধু যাত্রী নয়, এখন এটি অ্যাম্বুলেন্স, পুলিশ ভ্যান, বিয়েবাড়ির ডিজে ভ্যান, এমনকি ছোট ট্রেনের ইঞ্জিন হিসেবেও ব্যবহার হচ্ছে।
২০১০ সালের দিকে রাস্তায় নামা ই-রিকশা আজ রীতিমতো সংস্কৃতির অংশ। সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘তিরি’ মিম ও রিল ক্রমে ভাইরাল কনটেন্ট হয়ে উঠেছে। বৃষ্টির দিনে যাত্রী তুলতে সেতু বানানো তিরি কিংবা আলো-সজ্জিত বিয়ের ভ্যান, সবই নেটদুনিয়ায় জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
কিন্তু জনপ্রিয়তার পাশাপাশি সমস্যাও তৈরি হয়েছে। প্রায়শই দেখা যায় অপ্রাপ্তবয়স্ক বা অদক্ষ চালক ই-রিকশা চালাচ্ছে। আইন অনুযায়ী সর্বাধিক চারজন যাত্রী ও ৪০ কেজি মাল বহনের অনুমতি থাকলেও বাস্তবে তাতে ছ’সাতজন যাত্রী তোলা হয়, আবার এক কুইন্টালের বেশি মালও বহন করে। এর ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়েছে বহুগুণ। সম্প্রতি দিল্লি ও উত্তরপ্রদেশে একাধিক ই-রিকশা দুর্ঘটনায় প্রাণহানি হয়েছে, যা উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
তবুও অর্থনীতিতে ই-রিকশার ভূমিকা অস্বীকার করা যায় না। ২০১৫ সালে আইনি স্বীকৃতি পাওয়ার পর থেকে বিক্রি আকাশছোঁয়া। ২০২৩ সালে দেশজুড়ে ৫.৮ লক্ষেরও বেশি ইউনিট বিক্রি হয়েছে, বর্তমানে রাস্তায় চলছে প্রায় ১.৭৫ মিলিয়ন ই-রিকশা। লক্ষ লক্ষ মানুষ এই খাত থেকে জীবিকা অর্জন করছেন। পাশাপাশি, পেট্রোল-ডিজেলচালিত অটোর পরিবর্তে ই-রিকশা দূষণও কমাচ্ছে।
সরকারি ভর্তুকি, ব্যাটারির দাম কমা এবং স্বল্প বিনিয়োগে চালু করার সুবিধা এই খাতকে আরও বিস্তার দিয়েছে। কিন্তু সঠিক প্রশিক্ষণ, নিয়মকানুনের প্রয়োগ এবং নিরাপদ চার্জিং ব্যবস্থা ছাড়া এই সুবিধা বিপর্যয়ে পরিণত হতে পারে।
সব মিলিয়ে, ই-রিকশা বা ‘টোটো’ আজকের ভারতের রাস্তায় অপরিহার্য। এটি কর্মসংস্থান দিচ্ছে, পরিবেশ রক্ষা করছে এবং মানুষের যাতায়াতকে সহজ করেছে। কিন্তু নিরাপত্তা ও নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত না করলে, এই ‘টোটো’ হয়তো হাসির বিষয় নয়, বরং দুর্ঘটনার আতঙ্ক হিসেবেই বেশি পরিচিত হবে।