scorecardresearch
 

ছাপা অক্ষরে বাংলা! বাংলা হরফে ছাপা প্রথম বইয়ের ২২১ বছর!

বাংলা বই প্রথম ছাপা হয়েছিল আজ থেকে ২২১ বছর আগে ১৮০০ সালের আজকের দিনে। অর্থাৎ, ১৮০০ সালের ১৮ মার্চ প্রথম বাংলা হরফে বই ছাপা হয়েছিল। জেনে নিন তার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস...

Advertisement
--প্রতীকী ছবি। --প্রতীকী ছবি।
হাইলাইটস
  • বাংলা বই প্রথম ছাপা হয়েছিল আজ থেকে ২২১ বছর আগে ১৮০০ সালের আজকের দিনে।
  • বাঙালিরা তখন বাংলা ভাষায় কথা বলে বটে, কিন্তু কিছু চিঠিপত্রের কথা বাদ দিলে, গদ্য ভাষা লিখতে জানে না।
  • ১৮০০ সালের আজকের দিনে, ১৮ মার্চ শ্রীরামপুর মিশনের ছাপার মেশিনে ছাপা হয় দুই খণ্ডের বাংলা বাইবেল।

হাতে লেখা পুথি-পত্রের পরিবর্তে হরফে কালি মাখিয়ে কাগজের উপর ছাপার ব্যবস্থার প্রচলন হয় জোহান গুটেনবার্গের হাত ধরে। ১৪৩৬ সাল থেকে গুটেনবার্গ প্রিন্টিং প্রেস তৈরির কাজ শুরু করেন। এর মাঝে ১৪৪১ সালে চিনের বাই সিন মুভেবল টাইপ প্রিন্টিংয়ের উদ্ভাবন করেছিলেন। ১৪৪৮ সালে গুটেনবার্গ তাঁর ছাপার যন্ত্র দিয়ে সে বছরের ক্যালেন্ডার ছাপিয়ে ছিলেন। ১৪৫০ সালে জার্মানিতে প্রথম প্রিন্টের বাইবেল প্রকাশিত হয়। ছাপার কাজে গুটেনবার্গের প্রযুক্তি প্রথমে ইউরোপে পড়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

ভারতে অবশ্য বই ছাপার কাজ শুরু হয় অনেক পড়ে। আর বাংলা বই প্রথম ছাপা হয়েছিল আজ থেকে ২২১ বছর আগে ১৮০০ সালের আজকের দিনে। অর্থাৎ, ১৮০০ সালের ১৮ মার্চ প্রথম বাংলা হরফে বই ছাপা হয়েছিল। ইংরাজী হরফে বই ছাপার কাজ এখানে অনেক আগেই শুরু হয়েছিল। তবে বাংলা পুথি তখনও ছাপার অক্ষরে বই হয়ে ওঠেনি।

বাংলার পুথি থেকে ছাপার অক্ষরে বই হয়ে ওঠে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে ভারতে আসা ধর্মপ্রচারক উইলিয়াম কেরির হাত ধরে। তিনি ছিলেন ইংল্যান্ডের ব্যাপতিস্ত মিশনারি সোসাইটির প্রতিনিধি। মূলত খ্রিস্টধর্ম প্রসারেই উইলিয়াম কেরি ১৭৯৩ সালে বাংলায় আসেন। কিন্তু দুর্বোধ্য ভাষায় ধর্মকথা মানুষের মনে দাগ কাটতে পারবে না, বুঝেছিলেন কেরি। তাই বাঙালিকে তাঁর মাতৃভাষাতেই খ্রিস্টধর্মের মহিমা বোঝানোর কাজে লেগে পড়েন তিনি।

এর জন্য প্রথমে কেরিকে পুরোদমে বাংলা শিখতে হয়। সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ওই সময় উইলিয়াম কেরির বাংলা চর্চা প্রসঙ্গে লিখেছিলেন (২ নভেম্বর ২০১১ আনন্দবাজার পত্রিকায় লেখাটি প্রকাশিত হয়), “বাঙালিরা তখন বাংলা ভাষায় কথা বলে বটে, কিন্তু কিছু চিঠিপত্রের কথা বাদ দিলে, গদ্য ভাষা লিখতে জানে না। ছাপাখানা এসে গেছে, কিন্তু বাংলা সাহিত্যে ছাপার মতো বিশেষ কিছু নেই, পুরনো কালের কবিতা ছাড়া।”

Advertisement

বাঙালিকে তাঁর মাতৃভাষাতেই খ্রিস্টধর্মের পাঠ পড়াতে বাংলা ভাষায় বাইবেল অনুবাদ করার কাজ শুরু করেন উইলিয়াম কেরি। সোজা চলে যান উত্তরবঙ্গের মালদায়। সেখানে মুদ্রণযন্ত্র, কাগজ, কালি ও হরফ সংগ্রহ করে বাংলা হরফে বাইবেলের অনুবাদ ছাপার কাজ শুরু করেন তিনি। ১৭৯৯ সালে কেরির সঙ্গে যোগ দেন মুদ্রণ বিশারদ উইলিয়ম ওয়ার্ড। কিন্তু উত্তরবঙ্গের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্তাব্যক্তিদের বিরাগভাজন হয়ে সেখান থেকে বিতাড়িত হন কেরি।

উত্তরবঙ্গ থেকে বিতাড়িত হয়ে কেরি আশ্রয় নেন তৎকালীন ডেনমার্ক সরকারের উপনিবেশ শ্রীরামপুরে। ১৮০০ সালের ১৩ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠা হয় শ্রীরামপুর মিশন। সে বছর মার্চে উইলিয়ম ওয়ার্ডের নেতৃত্বে চালু হয় ছাপাখানা। ১৮০০ সালের আজকের দিনে, ১৮ মার্চ শ্রীরামপুর মিশনের ছাপার মেশিনে ছাপা হয় দুই খণ্ডের বাংলা বাইবেল। এর পরবর্তী ৩২ বছরে শ্রীরামপুরের এই ছাপাখানা থেকে মোট ৪৫টি ভাষায় ২ লক্ষ ১২ হাজার বই প্রকাশিত হয়েছিল। সেই সময়ের হিসাবে যা এক কথায় দৃষ্টান্তমূলক, নজিরবিহীন!
 

Advertisement