scorecardresearch
 

আয়করে পোর্টালে বিপত্তি, রিটার্ন জমা দেওয়া যাচ্ছে না, ক্ষোভ রাজ্যে

আয়কর দপ্তরের নতুন পোর্টালকে ঘিরে কর দাতাদের হেনস্তার অভিযোগে বিক্ষোভে নামল রাজ্যের অ্যাডভোকেট ফোরাম। পুরনো পোর্টালে দিব্যি কাজ চললেও পোর্টাল বদলে দিয়েই সমস্যা। কর দেওয়া যাচ্ছে না। ফলে সমস্যার মুখে করদাতারা।

Advertisement
আয়কর জমা দিতে না পারায় বিপত্তি আয়কর জমা দিতে না পারায় বিপত্তি
হাইলাইটস
  • আয়কর পোর্টালে বিপত্তি, ক্ষোভ
  • আয়কর জমা করা যাচ্ছে না
  • চালু পোর্টাল বন্ধ করাতেই সমস্য়া

আয়কর পোর্টাল নিয়ে অসন্তোষ

আয়কর দপ্তরের নতুন পোর্টালকে ঘিরে কর দাতাদের হেনস্তার অভিযোগে বিক্ষোভে নামল রাজ্যের অ্যাডভোকেট ফোরাম। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের কর বিশেষজ্ঞদের একটি সংগঠনের উত্তরবঙ্গ শাখার তরফ থেকে ১৭ অগাস্ট শিলিগুড়িক মাটিগাড়ার আয়কর দপ্তরের সম্মুখে একটি অবস্থান বিক্ষোভ সংঘটিত করা হয়।

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে চিঠি

স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মারফত মাননীয় কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রীর কাছে একটি স্মারকলিপি পাঠান তাঁরা। উক্ত কর্মসূচিতে সংগঠনের আহ্বায়ক সঞ্জীব চক্রবর্তী, বিশিষ্ট আইনজীবী রতন মারোদিয়া, নারায়ণ সাহা, সুবীর সরকার সহ বহু কর বিশেষজ্ঞ উপস্থিত ছিলেন।

অফলাইনে কর দেওয়া যায় না

কর সংক্রান্ত কাজ করা আইনজীবীদের দাবি, বর্তমানে আইন অনুযায়ী প্রায় সমস্ত আয়করদাতার রিটার্ন বাধ্যতামূলকভাবে অনলাইন পদ্ধতিতে জমা করতে হয়। এই অবস্থায় আয়কর দপ্তরের অনলাইন পোর্টাল সঠিকভাবে কার্যকর না থাকলে রিটার্ন দেওয়া বা অন্যান্য কর সংক্রান্ত সমস্যার সুরাহা হওয়া সম্ভব নয়।

পোর্টাল বদলেই সমস্যা

বিগত বহু বছর যাবৎ আয়করের একটি পোর্টাল চলছিল। যা অত্যন্ত সফলভাবে কার্যকর এবং পরীক্ষিত ছিল। গত ৭ জুন, ২০২১ এ হঠাৎ করে কর দপ্তরের তরফ থেকে পূর্ববর্তী পোর্টালটির পরিবর্তে দেশজুড়ে একটি নতুন পোর্টাল চালু করা হয়। সংসদে মাননীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এই নতুন পোর্টাল প্রচলন বাবদ মোট ৪,২৯৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে সরকারের তরফ থেকে। কিন্তু চালু করার পর প্রথম মাসে পোর্টালটি সম্পূর্ণভাবে অকার্যকর ছিল এবং বর্তমানে আংশিকভাবে কার্যকর রয়েছে।

প্রতিশ্রুতি মিললেও কাজ হয়নি

মাননীয় অর্থমন্ত্রী প্রাথমিকভাবে দু সপ্তাহের মধ্যে পোর্টালটি সম্পূর্ণভাবে কার্যকর করার প্রতিশ্রুতি দিলেও আজ দুমাস অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও দেখা যাচ্ছে যে সমস্যা কোনওভাবেই মেটেনি। সারা দেশজুড়ে করদাতারা ভয়ঙ্কর অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছেন উক্ত বিষয়ে। সামগ্রিকভাবে দেখা যাচ্ছে প্রায় ২ হাজারের বেশি ত্রুটি এই পোর্টালটিতে রয়েছে।

Advertisement
ক্ষোভ

কি ধরণের সমস্যা

১-সব ধরনের রিটার্ন জমা হচ্ছে না।

২-নতুন করদাতা অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করতে পারছে না।

৩-পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে ফর্গেট পাসওয়ার্ডের মাধ্যমে নতুন পাসওয়ার্ড তৈরি করা যাচ্ছে না।

৪-রিটার্ন জমার পর বাধ্যতামূলকভাবে যে অনলাইনে তা ভেরিফিকেশন করতে হয় সেটা কখনো হচ্ছে কখনো হচ্ছে না।

৫-রিটার্ন জমার পর তার ভুল রিসিপ্ট বা ITR V বের হচ্ছে বহু ক্ষেত্রে। তাতে জমার তারিখ থাকছে ২০২২ সালের।

৬-জমা করা করের চালানের তথ্যের সাথে অনলাইনে দেওয়া তথ্য মিলছে না।

৭-গত বছর জমা করা বৈধ রিটার্ন এর রিসিপ্ট ডাউনলোড করলে তাতে 'ইনভ্যালিড' বলে উল্লেখ করা থাকছে যা সংশোধনের কোন সুযোগ দেওয়া নেই।

৮-কোন ভ্রম হলে আইনগতভাবে তা সংশোধন করার যে সুবিধা ছিল তা এখন নেই।

৯-কোন বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করার যে অপশন সেটা কার্যকর নেই।

১০-কর বিবাদ সংক্রান্ত আবেদন করার অপশন কার্যকর নেই।

১১-প্রদেয় করের হিসাবের ক্ষেত্রে ভুল সুদ, বিলম্বজনিত শুল্ক ধার্য করছে পোর্টালটি।

১২-সহজে ও দ্রুত কর রিটার্ন প্রস্তুতির ক্ষেত্রে এতদিন ধরে দেশজুড়ে যে বেসরকারি সফটওয়্যার বা ASP গুলির সাহায্য কর বিশেষজ্ঞরা নিতেন তার কোনটাই এই পোর্টালে কার্যকর নয়।

রিটার্ন জমা হচ্ছে না ঋণ থেকে বঞ্চিত

এই সমস্যাগুলি সহ অসংখ্য সমস্যায় জর্জরিত হয়ে দেশব্যাপী করদাতাদের আজ নাজেহাল অবস্থা। এমনিতেই অতিমারির কারনে তারা এতদিন কর রিটার্ন জমা করতে পারেননি, এখন যে করবেন তারও উপায় নেই। যদি বা কেউ করতে সফল হন, তবে ভুল রিসিপ্ট বের হওয়ায় সেটা নিয়ে বিভ্রাটে পড়ছেন। অতিমারির আর্থিক ক্ষতি সামাল দিতে যারা ঋণ নিতে চাইছেন তাদের ক্ষেত্রে রিটার্ন জমা না করতে পারায় বা ভুল রিটার্ন হওয়ায় তারা ঋণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। 

রিটার্ন জমা করতে সময় কম

এছাড়াও রিটার্ন জমার ধার্য সময় মাত্র দেড় মাস বাকি, এই স্বল্প সময়ে পোর্টাল খারাপ থাকলে করদাতা কি করবেন? এর মধ্যে রিটার্ন জমা না হলে করদাতাকে প্রচুর টাকা বিলম্বজনিত সুদ এবং পাঁচ হাজার পর্যন্ত বিলম্ব জনিত শুল্ক দিয়ে তবে ৩১ শে ডিসেম্বরের মধ্যে রিটার্ন জমা করতে হবে। সেটা না পারলে পরের বছর তার থেকে দ্বিগুন হারে টিডিএস বা কর কেটে নেওয়া হবে তার আয়ের সূত্র থেকে। এর সাথে রয়েছে নানা রকমের শাস্তি বা পেনাল্টির সম্ভাবনা। 

তাঁদের দাবি

সাত দিনের মধ্যে পোর্টালটি ঠিক করতে হবে নইলে নতুন পোর্টাল বাতিল করে পুরানো পোর্টাল পুনরায় চালু করতে হবে। পোর্টালের ত্রুটির কারনে কোন ধরনের বাড়তি বিলম্ব জনিত সুদ, শুল্ক এবং পেনাল্টি করদাতার কাছ থেকে আদায় করা চলবে না। রিটার্ন জমার শেষ তারিখকে ৩১ শে মার্চ, ২০২২ পর্যন্ত বাড়াতে হবে। কর দপ্তরের ত্রুটির পরিণাম সাধারণ করদাতা ভুগবেন কেন? প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।

Advertisement