Toy Train Darjeeling Stopped Running DHR: বিশ্ব পর্যটন দিবসে টয়ট্রেন যাত্রা শুরু করার পরিকল্পনা নিয়েছিল দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে (DHR) কর্তৃপক্ষ। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ঠিক আগের দিন ফের বিপত্তি। টানা প্রবল বৃষ্টি শুরু হওয়ায় রেললাইনের নীচ থেকে ধসে গেল মাটি। পাহাড়ের রেললাইনে শালবাড়ি নামে একটি জায়গায় এক নয়, বেশ কয়েক জায়গায় এমন ঘটনা ঘটেছে। ফলে ওই পরিকল্পনা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে রেল। ফলে টয়ট্রেনের বিজ্ঞাপন করার একটা সুযোগও নষ্ট হয়েছে।
এদিকে ঝড়ের গতিতে শেষ কয়েকদিনে কাজ করে পুজোর মধ্যে নিউ জলপাইগুড়ি জংশন (NJP)এবং দার্জিলিংয়ের (Darjeeling)-এর মধ্যে টয়ট্রেন লাইন মেরামতি করে চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছিল ডিএইচআর, তা ফের প্রায় ঠান্ডাঘরে চলে গিয়েছে। পুজোর আগে যে সমতল-পাহাড়ের মধ্যে টয়ট্রেন চলাচল শুরু করা এখন কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে, তা সংবাদমাধ্যমের কাছে স্বীকার করে নিয়েছেন উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কপিঞ্জল কিশোর শর্মা। তিনি জানিয়েছেন, ‘পরিস্থিতি অনুযায়ী এনজেপি এবং দার্জিলিংয়ের মধ্যে ট্রেন চলাচল শুরু করা নিয়ে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। কীভাবে মাটি ধসে গেল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও তিনি জানিয়েছেন। তবে আসল জিনিস ট্রেন চলাচল চালু হবে কবে থেকে তা নিয়ে কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি।
সাধারণত পাহাড়ের উপর দিকে ধস নামে। কিন্তু সমতলের শালবাড়িতে রেললাইনের নীচ থেকে মাটি সরে যাওয়ার ঘটনা বিরল। বৃহস্পতিবার থেকেই পাথর ফেলে গর্ত ভরাট করার কাজ হয়েছে। কিন্তু আপাতত শিলিগুড়ি জংশন থেকে সুকনা পর্যন্ত ট্রেন চলানো ঝুঁকি হয়ে যাবে বলে ওই পরিকল্পনা বাতিল করা হয় রেলের তরফে। যা ই-মেল করে ডিএইচআরের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয় এইচএইচটিডিএনকে। এই কথা স্বীকার করেছেন এইচএইচটিডিএনের সম্পাদক সম্রাট সান্যাল। তিনি জানান, ‘টয়ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত বাতিলের ক্ষেত্রে রেলের তরফে টেকনিক্যাল ত্রুটির কথা বলা হয়েছে। প্রযুক্তিগত সমস্যা হলে তো কিছু করার নেই। রেল আধিকারিকদের দাবি, প্রবল বর্ষণের জন্য এমনটা হয়ে থাকতে পারে। তবে গত দু’দিন ধরে যা বৃষ্টি হয়েছে, তার থেকে বেশি বৃষ্টি হয় বর্ষাকালে। ফলে রেলের এই যুক্তি মানতে নারাজ অনেকেই।
পুজোর মধ্যে শিলিগুড়ি বা এনজেপি থেকে পাহাড়ে টয়ট্রেনের সুখযাত্রা সম্ভবত এবার আর সম্ভব নয়। যাঁরা ইতিমধ্যেই বুকিং শুরু করেছেন, তাঁরা খোঁজ রাখুন, কারণ সম্ভবত লাইনের মেরামতির কাজ পুজোর আগে শেষ করতে পারবে না রেল। এদিকে তাঁরা পুজোর চারদিনের বুকিং ওপেন করে দিয়েছে। যদি শেষমেষ চালানো সম্ভব না হয়, তাহলে বুকিংয়ের টাকা ফেরত দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু যাঁরা টয়ট্রেনে চেপে দার্জিলিংয়ের যাবেন বলে মনে করেছেন, তাঁরা পড়বেন বিপাকে। ফলে তাঁদের এখন থেকেই রেলের বুলেটিনের উপর নজর রাখতে অনুরোধ করা হয়েছে।
পুজোর মুখে এই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় পর্যটনে বড় প্রভাব পরবে বলে মনে করছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। তাঁদের একাংশের মতে, রেলকে আরও আগে থেকে বাড়তি সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যাল জানিয়েছেন,পুজোতে যদি টয়ট্রেন না চালানো যায়, তবে কিছু নতুন ছোট ছোট জয় রাইড চালু করলে পর্যটকদের জন্য ভাল হবে। এনজেপি থেকে রংটং কিংবা কার্শিয়াং থেকে দার্জিলিং পর্যন্ত চালানোর প্রস্তাব রাখছি। বহু পর্যটক পরিষেবা নিয়ে জানতে চাইছেন। ট্রেন ভাড়া নেওয়ার জন্যও অনেকে খোঁজ করছেন আমাদের কাছে।’
গত মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই দার্জিলিংগামী টয়ট্রেন পরিষেবা নিয়ে দোলাচল চলছে। মাঝে একবার বিভিন্ন জায়গায় লাইনে ধসের কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ধস সরিয়ে ট্রেন চালু করতেই টানা বৃষ্টির জেরে পাগলাঝোরার কাছে বড় ধরনের ধস নামে। রাস্তার একাংশ ধসে যায়।
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ রাস্তার কাজ শেষ না করা পর্যন্ত ট্রেন চালানো একটু কঠিন বলেই মনে করছেন রেলকর্তারা। কারণ রাস্তা সংস্কারের পর একাধিক জায়গায় রেললাইনের মেরামতির কাজ করতে হবে। লাইন মেরামত না করলে ট্রেন চালানো যাবে না। আর এখন লাইন মেরামত করলেও লাভ হবে না। কারণ রাস্তার কাজ করতে গিয়ে কোনও কারণে লাইনের নীচ থেকে মাটি ধসে গেলে আবারও ক্ষতি হতে পারে। তাই রাস্তার কাজ শেষ হলেই লাইনের কাজে হাত দিতে চাইছে ডিএইচআর।