পোস্ট অফিসের এমন বহু সরকারি সেভিংস স্কিম রয়েছে, যাতে সাধারণ ফিক্সড ডিপোজিটের চেয়েও বেশি রিটার্ন মেলে। তবে শর্ত একটাই, নিয়মিত ও সঠিকভাবে আপনাকে টাকা বিনিয়োগ করতে থাকতে হবে। অনেকেই পোস্ট অফিসের ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পে খুব কম টাকা দিয়ে বিনিয়োগ শুরু করেন। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই বিনিয়োগের অভ্যাস হারিয়ে ফেলেন। ফলে ম্যাচিওর হলেও সেরকম বড় রিটার্ন পান না। কিন্তু যদি শুরু থেকে রুটিন মেনে সঠিক পরিমাণে বিনিয়োগ করলে ভবিষ্যতে বেশ মোটা টাকার মুনাফার সম্ভাবনা রয়েছে। এমনই একটি দুর্দান্ত স্কিম হল সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা (Sukanya Samriddhi Yojana)। বর্তমানে এই প্রকল্পে বার্ষিক ৮.২% সুদ দিচ্ছে পোস্ট অফিস। সবচেয়ে বড় বিষয়টি হল, এটি সম্পূর্ণ করমুক্ত।
বছরে কত টাকা জমাতে পারবেন?
এই অ্যাকাউন্ট শুধুমাত্র কন্যাসন্তানের নামেই খোলা যায়। মেয়ের উচ্চশিক্ষা থেকে বিয়ে, বড় অঙ্কের খরচের কথা মাথায় রেখে এখানে টাকা জমানো শুরু করতে পারেন। এখানে বছরে ন্যূনতম ₹২৫০ থেকে সর্বোচ্চ ₹১.৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জমা দেওয়া যায়। মেয়ের বয়স ১০ বছরের কম হলেই অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে। এক পরিবারে সর্বোচ্চ দু’জন মেয়ের নামে অ্যাকাউন্ট খোলা যায়। তবে যমজ সন্তানের ক্ষেত্রে ৩ জনের জন্যও অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন।
অ্যাকাউন্ট খোলার তারিখ থেকে সর্বাধিক ১৫ বছর পর্যন্ত টাকা জমা দেওয়া যাবে। কিন্তু মনে রাখবেন, যদি কোনও অর্থবর্ষে অন্তত ২৫০ টাকাও জমা না দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে অ্যাকাউন্ট ডিফল্ট হয়ে যাবে। যদিও পরে পোস্ট অফিসে গিয়ে ফের রিঅ্যাক্টিভেট করে নিতে পারবেন।
টাকা তোলার নিয়ম
মেয়ের বয়স ১৮ হওয়া পর্যন্ত বাবা মাই অ্যাকাউন্ট চালাবেন। ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার পর বা ১০ম শ্রেণি পাস করলে তবেই টাকা তোলা যাবে।
ম্যাচুরিটি কবে?
অ্যাকাউন্ট খোলার ২১ বছর পর ম্যাচুরিটি হবে। তবে জমা দিতে হবে প্রথম ১৫ বছর।
দিনে ৪০০ টাকা থেকে ৭০ লাখ টাকা করার সুযোগ
অনেকেই আজকাল হাতে টাকা রাখতে পারেন না। সেক্ষেত্রে মাত্র ৪০০ টাকা দিয়ে শুরু করতে পারেন। ধরুন কারও মাসিক আয় ৪০,০০০ টাকা। সেক্ষেত্রে আপনাকে মাসে ১২,০০০ টাকা এই স্কিমে ঢালতে হবে। প্রতিদিন প্রায় ৪০০ টাকা। মাসে ১২,৫০০ ধরলে বছরে প্রায় ১.৫ লক্ষ টাকা। মেয়ের বয়স ৫ বছর থেকে শুরু করে টানা ১৫ বছর এই বিনিয়োগ চালিয়ে যেতে হবে। প্রথম প্রথম এই টাকা অনেকটা মনে হতেই পারে। কিন্তু মনে রাখবেন, সময়ের সঙ্গে আপনার আয়ও বাড়বে। ফলে কয়েক বছর পর এই অঙ্কটা ততটা বেশি মনে হবে না। তাছাড়া সমস্যা হলে আপনার আয় অনুযায়ী বিনিয়োগের অঙ্কও কমিয়েও দিতে পারেন।
২১ বছর পর আপনার অ্যাকাউন্ট যখন ম্যাচিওর হবে, মোট অঙ্ক দাঁড়াবে ₹৬৯,২৭,৫৭৮ টাকা। এর মধ্যে শুধুমাত্র সুদ থেকেই আয় হবে ₹৪৬,৭৭,৫৭৮ টাকা। এদিকে মোট বিনিয়োগের অঙ্ক ₹২২,৫০,০০০ টাকা। ফলে আপনার বিনিয়োগের দ্বিগুণেরও বেশি শুধুমাত্র সুদ পাবেন।
অর্থাৎ, সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনায় শুধু কন্যাসন্তানেরই ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত হবে না, বরং আপনার গোটা পরিবারের একটা রিটায়ারমেন্ট ফান্ড তৈরি হয়ে যাবে। মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে টাকার ভ্যালু কমলেও, প্রায় ৭০ লক্ষ টাকাও যে মন্দ নয়, একথা বলাই বাহুল্য।
দ্রষ্টব্য: শেয়ার, বিনিয়োগ সংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলি বাজার পর্যবেক্ষণ মাত্র। এগুলি বিনিয়োগের পরামর্শ নয়। বাজারে বিনিয়োগের আগে অবশ্যই পড়াশোনা করুন এবং বিশেষজ্ঞের সাহায্য গ্রহণ করুন।