বাজারে প্রধানত দুই ধরনের ওষুধ পাওয়া যায়— ব্র্যান্ডেড ও জেনেরিক। কোনও একটি সংস্থা যখন নতুন কোনও ওষুধ আবিষ্কার করে, তখন সেটির ‘পেটেন্ট’ রাইট নেওয়ার পর সংস্থার নামানুসারে সেটির একটি নাম ঠিক করা হয়। ওষুধ আবিষ্কারের প্রথম ১৫ ওই পেটেন্টে শুধুমাত্র প্রস্তুতকারী সংস্থার দখলে থাকে। অর্থাৎ, ওই ওষুধ শুধুমাত্র প্রস্তুতকারী সংস্থাই বাজারজাত করতে পারে। এই ১৫ বছর এই ওষুধের আইনত কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায়, প্রস্তুতকারী সংস্থা নিজের নির্ধারিত দামে সেটি বিক্রি করতে পারে।
জেনেরিক ওষুধ কী?
এবার আসা যাক জেনেরিক ওষুধের প্রসঙ্গে। সাধারণত যে কোনও পেটেন্ট নেওয়া ওষুধ ১৫ বছর পর জেনেরিক ওষুধে পরিনত হয়। এই সময় অন্য যে কোনও সংস্থা এই ওষুধ একই রাসায়নিক সংমিশ্রণে (কম্পোজিশন) তাদের মতো করে তৈরি করে বাজারজাত করতে পারে। তবে ওষুধের মূল নাম পরিবর্তন করতে পারে না। সাধারণত এই ধরনের জেনেরিক ওষুধের দাম ব্র্যান্ডেড ওষুধের চেয়ে ২০-৯০ শতাংশ পর্যন্ত সস্তা হয়। বিশ্বজুড়ে তাই ব্র্যান্ডেড ওষুধের চেয়ে জেনেরিক ওষুধের বিক্রি ও ব্যবহার অনেক বেশি। এই মুহূর্তে সারা বিশ্বে প্রায় ৩৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের জেনেরিক ওষুধ বিক্রি হয়। ভারতে প্রায় ২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের জেনেরিক ওষুধ বিক্রি হয়।
জেনেরিক ওষুধের বিক্রি ও ব্যবহার বাড়লে উপকৃত হবেন দেশের সাধারণ মানুষ। কারণ, ১০০ টাকার ওষুধ যদি ৩৫-৪০ টাকায় পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের চিকিৎসার খরচ অনেকটাই কমে যেতে পারে।
তবে এখনও জেনেরিক ওষুধ বা তার সুবিধা সম্পর্কে আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ ততটা অবগত নন। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারি সুনির্দিষ্ট নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও অধিকাংশ চিকিৎসকই এখনও তাঁদের প্রেসক্রিপশনে ওষুধের জেনেরিক নাম নেখেন না। ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের ওষুধের চেয়ে সস্তার জেনেরিক ওষুধ কিনতে পারেন না সাধারণ মানুষ।
বছর খানেক আগেই স্বাস্থ্যমন্ত্রক বা রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের তরফে চিকিৎসকদের তাঁদের প্রেসক্রিপশনে ওষুধের জেনেরিক নাম লিখে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও কেন অধিকাংশ প্রেসক্রিপশনে ওষুধের জেনেরিক নাম লেখা থাকে না?
এই প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞ (মেডিসিন) চিকিৎসক ডাঃ অরিন্দম বিশ্বাস বলেন, “আমি প্রেসক্রিপশনে ওষুধের জেনেরিক নাম লেখারই পক্ষপাতি। তবে প্রেসক্রিপশনে ওষুধের জেনেরিক নাম লেখার পর অনেক রোগীর থেকেই ফোন পেয়েছি। অনেকেই তাঁদের সুবিধার কথা জানিয়েছেন। তবে কিছু ক্ষেত্রে স্থানীয় ছোট ওষুধের দোকানের বিক্রেতাদের অতিরিক্ত ব্যাস্ততায় বা অবহেলায় সমস্যায় পড়তে হয়েছে রোগী বা তাঁর পরিবারের সদস্যদের। সময় নিয়ে খুঁজে সঠিক জেনেরিক ওষুধ বের করে দিতে হবে বলে অনেক বিক্রেতাই রোগীকে ওষুধের সুনির্দিষ্ট নাম বলতে চাপ দেন। অনেক ক্ষেত্রে অজ্ঞতার কারণেও সস্তা জেনেরিক ওষুধ পেতে একাধিক দোকানে ছুটে বেড়াতে হয় রোগী বা তাঁর পরিবারের সদস্যদের।”
“তবে সবটাই অভ্যাস। সরকারি নির্দেশ ছাড়াও সাধারণ মানুষ যাতে সবচেয়ে কম দামে সঠিক জেনেরিক অষুধ পান, তার জন্য প্রাথমিক দায়িত্ব নিতে হবে চিকিৎসকদেরই। জেনেরিক ওষুধের সুবিধা সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে বোঝাতে হবে। তাহলেই কম খরচে চিকিৎসার সুবিধা পাবেন আম জনতা”, বলেন ডাঃ বিশ্বাস।
চিকিৎসার খরচ কমাতে জেনেরিক ওষুধের বিক্রি ও ব্যবহার বাড়াতে আমাদের দেশে ইতিমধ্যেই সরকারিভাবে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক জেনেরিক ওষুধের সুবিধাগুলি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক...
জেনেরিক ওষুধের সুবিধা—
১) এই ধরনের ওষুধ দামে পেটেন্ট নেওয়া ওষুধের চেয়ে অনেক কম।
২) জেনেরিক ওষুধের বিক্রি করে সংস্থার লাভ অনেক বেশি।
৩) সমগ্র বিশ্বে যত রকমের মলিকিউল আছে তার বেশিরভাগই জেনেরিক ওষুধ।
৪) জেনেরিক ওষুধের ক্ষেত্রে নিয়মের কাড়াকাড়ি অনেক কম। তাই এগুলির বাজারজাত করাও অনেক সহজ।
ব্র্যান্ডেড ওষুধের জেনেরিক নাম চিকিৎসকের থেকে জেনে নিতে পারেন। এছাড়া ওষুধের দোকানের ফার্মাসিস্টের সাহায্যেও সস্তার জেনেরিক ওষুধ পেতে পারেন যে কোনও দোকান থেকেই। তবে ওষুধ নেওয়ার সময় তার এক্সপায়ারি ডেট দেখতে ভুলবেন না।