বৃষ্টিতে ফলছে সবুজ সোনা
লকডাউনে ফার্স্ট ফ্লাশের চা পাতা তোলা যায়নি। পাতা তোলা না যাওয়ার ফলে বিদেশে রপ্তানিও হয়নি। গাছেই নষ্ট হয়েছে কোটি কোটি টাকার সবুজ সোনা। এই বিপুল পরিমাণ ক্ষতি কীভাবে সামাল দেবেন, তা বুঝে উঠতে পারছিলেন না চা উৎপাদকরা। অবশেষে তাদের উদ্বেগের জল ঢেলে নেমে এলো বৃষ্টি।
লকলকিয়ে বাড়ছে নতুন পাতা
ফলে সেকেন্ড ফ্ল্যাশ এর চা পাতা বৃষ্টির জল লেগে লকলকিয়ে বেড়ে উঠছে। আর জুন মাসের মধ্যে এই ফার্স্ট ক্লাস চা পাতাকে আঁকড়ে ধরেই এক বছরের বিপুল ক্ষতির একটা অংশ পূরণ করতে চাইছেন চা উৎপাদকরা।
ইয়াস এর উল্টো প্রভাব চা উৎপাদনে
ইয়াস-এর প্রভাবে যতই উপকূলবর্তী এলাকা ভেসে যাক, কিংবা জলমগ্ন হয়ে ভোগান্তি তৈরি হোক দক্ষিণবঙ্গের একাধিক এলাকা। উত্তরবঙ্গের চা বলয়ে তিন-চারদিনের ভারী বৃষ্টি, চা পাতার রং বদলে দিয়েছে। শুকনো পাতায় জান এসেছে। টানা শুকনো আবহাওয়া এবং গরমের পর এই বৃষ্টি চা পাতাকে একদিকে যেমন বাড়তে সাহায্য করেছে, তেমনি পাতার পরিমাণও বেড়েছে। প্রচুর পরিমাণ নতুন পাতা তৈরি হয়েছে সব গাছেই। ফলে সেকেন্ড ফ্লাশ চা পাতা তুলতে হিড়িক পড়ে গিয়েছে।
চা অ্যাডভাইজরি বোর্ড এর বক্তব্য
চা অ্যাডভাইজারি বোর্ড এর তরফে জানানো হয়েছে, চা গাছ শক্তিশালী করতে এই সময় সার দিতে হয়। তার জন্য প্রচুর জল লাগে। এই বৃষ্টি গাছের গোড়া শক্ত করবে এবং আগামী কয়েক বছরের জন্য ভালো ফল দেবে। তিন চার দিনের এই টানা বৃষ্টি অত্যন্ত উপযোগী। বর্ষা ঢোকার আগে এই পাতা লাভজনক হবে।
পোকা নষ্ট হবে বৃষ্টিতে
পাশাপাশি টানা বৃষ্টির ফলে চা পাতা বিনষ্টকারী পোকার আক্রমণ থেকে গাছ বাঁচানো যাবে। বৃষ্টিতে ওই পোকা নিজেই মরে যাবে। যা সেচ এর জলে সব সময় একশো শতাংশ সম্ভব হয় না।
লকডাউনে পাতা গাছেই নষ্ট, হাহাকার
গত এক বছর ধরে করোনার কারণে লকডাউন চলায় গাছের পরিচর্যা করা যায়নি। কর্মীর অভাবে সেই সময় চা গাছে প্রচুর ক্ষতি হয়েছিল। তাকে পরিচর্যা করে আনলক পর্যায়ে ফের উৎপাদনের জায়গায় নিয়ে আসতে অনেক খরচ হয়েছে। মোট উৎপাদনের প্রায় অর্ধেক পাতা তোলা যায়নি গত বছরে। চলতি বছরে লকডাউন পরিস্থিতিতে চা শিল্পে ছাড় থাকায় চা উৎপাদন অব্যাহত রাখা গিয়েছে। তবে প্রাকৃতিক কারণেই পরিচর্যার অভাবে ফার্স্ট ফ্লাশ চা পাতা তোলা যায়নি। কয়েক কোটি টাকার চা পাতি নষ্ট হয়েছে।
জুন মাস পর্যন্ত সেকেন্ড ফ্লাশ তোলা যাবে
টানা বৃষ্টিতে পাতা ভালো হচ্ছে। এমনিতে ১৫-২০ তারিখ পর্যন্ত পাতা তোলা হলেও, জুন মাসের শেষ পর্যন্ত এই পাতা তোলা যাবে এ বছর বলে চা বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।
থার্ড ফ্লাশেও ভাল উৎপাদনের আশা
পাশাপাশি জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তোলা চলবে থার্ড ফ্লাশ। মানে খুব উন্নত না হলেও পরিমাণে তা বেশি সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। সিটিসি চা পাতার ক্ষেত্রে এই চা খুবই স্বাদু হয়।
পাহাড়ের বাগানে কিছুটা ক্ষতি
তবে পাহাড়ে চা বাগানগুলিতে টানা বৃষ্টি হওয়ায় মাটি নরম হয়ে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। যদিও ডুয়ার্স এবং সমতলের চা বাগানগুলিতে সেই সমস্যা নেই।