নদিয়ার রানাঘাটের নবদম্পতির স্কুটি চালিয়ে ঝালমুড়ি বিক্রির অভিনব প্রয়াসই দু'মুঠো ভাত যোগাচ্ছে তাদের। ভালবাসা অবশ্য অন্য কথা বলে। স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে একই পেশায় নিযুক্ত থাকলে দুই নয়, এগারো জনের সমতুল কাজ সম্ভব হয়।
আর তাই সম্ভব করে দেখালেন নদিয়ার রানাঘাট আইশতলা গড়ের বাগান এলাকায় এক দম্পতি। নীহাররঞ্জন মজুমদার এবং তাঁর স্ত্রী রূপা মজুমদার।
একে অপরকে দীর্ঘ সাত বছর ধরে ভালবেসেছেন একই স্কুলে পড়াশোনার সুবাদে। দীর্ঘ ৭ বছর অপেক্ষা করার পরও চাকরি জোটাতে না পেরে প্রথমে মোবাইল সারানো, পরে স্কুটি-বাইক সারানোর কাজ। সেই কাজ জুটিয়ে দুঃখ-দুর্দশা-হতাশাকে দূরে সরিয়ে একে অন্যের ওপর বিশ্বাস আস্থা রেখে ভালবাসার হাত ধরে সিদ্ধান্ত নেন সারা জীবনের সাথী হওয়ার।
কিন্তু বৃদ্ধ বাবা-মাকে এবং পড়াশোনা করা ভাইকে নিয়ে সংসার চলবে কী ভাবে। কারণ করোনা পরিস্থিতিতে বন্ধ ছিল সমস্ত দোকান! সেই বেরোজগার পরিস্থিতি সামাল দিতে মোটর গ্যারেজে কাজ করার সময় ঋণে কেনা স্কুটি এবং রূপা দেবীর রান্নার প্রতি ঝোঁক কে কাজে লাগিয়ে নব উদ্যোগ গ্রহণ করে বাঁচার তাগিদে! দু-একদিন বিকেলে ওই দম্পতি ঘুরতে গিয়ে দেখেন পার্কে, খেলার মাঠে,পাড়ার মোড়ে অনেকেই বিকেলে অবসর সময় কাটান গল্প করে।
করোনা পরিস্থিতিতে দীর্ঘ লকডাউনের বিকেল বা সন্ধের সময় খাবার দোকানগুলো বন্ধ ছিল বেশ কিছুদিন। আর সে সময় নিজেদের হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াতে হত মুখের স্বাদ বদলের জন্য। ফুচকা,ঘুগনি, সিঙ্গারা, ঘটিগরম যাবতীয় কাউকে একজন পেলেই গোগ্রাসে সাবাড় করে দিত বিকালের পথচারীরা। আর তা থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে ব্যবসায়িক বুদ্ধি জন্মায় ওই দম্পতির। মুখরোচক খাবার বেচেই দু'মুঠো অন্ন যোগাবেন তারা। তবে রেসিপি হবে সম্পূর্ণ নিজস্ব!
যা ইউটিউব বা বিভিন্ন খাদ্য খাবারের ওয়েবসাইটে খুঁজে পাওয়া যাবে না। রূপা এবং তার শাশুড়ি অর্থাৎ নীহারবাবুর মা মিলে মুরগির মাংসের ছোট ছোট কিমা বানিয়ে, কিছু অন্য ধরনের মশলা ব্যবহার করে সম্পূর্ণ ভিন্ন স্বাদের মাংস কষা তৈরি করলেন। যা মুড়ি মিশিয়ে বানালেন "মাংসের ঝাল মুড়ি"!
বিক্রির জন্য অবশ্য ঘরের বউকে বাইরে বেরোনোর অনুমতি দিতে প্রথমদিকে একটু সঙ্কোচ ছিল। পরে অবশ্য বৌমার সঙ্গে লক্ষীর আগমনে এবং সর্বক্ষন ছেলের কাছে থাকার সুবাদে রূপার শাশুড়ি তাঁর একমাত্র চার বছরের নাতিকে, ভুলিয়ে রাখার দায়িত্ব নেন।
প্রথমের দিকে রানাঘাটের এ গলি সে গলি, যেখানে তাঁদের অতীতে ঘুরে বেরানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে,, সেখানেই স্কুটি নিয়ে সঙ্গে মাংসের ঝাল মুড়ি বিক্রির নানান উপকরণ নিয়ে পৌছে গেলেন। প্রথম প্রথম একটু ডাক -হাঁক করতে হয়েছিলো বটে! তবে এখন, মোবাইল ঝাল মুড়ির গাড়ি এসে পৌঁছলেই পিল পিল করে খদ্দের জমে যায় চারিপাশে।
ব্যাপ্তি ঘটেছে আশেপাশের বিভিন্ন গ্রাম শহর হবিবপুরের বিস্তীর্ণ এলাকায়। বেড়েছে বিক্রি। বিক্রি-বাট্টা সেরে বাড়িতে ঢোকার সময় সীমাও বেড়েছে। বিক্রির উদ্দেশ্যে আগে বেরোতেন পাঁচটায়। এখন খদ্দেরের চাপ এবং দূরের পথ সামাল দিতে বিকেল তিনটের মধ্যেই বেরিয়ে পড়তে হয়! ইদানীং অনেকে তো আবার হোয়াটসঅ্যাপেই অর্ডার দিয়ে বসে থাকছেন প্রতীক্ষায়।