নিজস্ব চিত্র। 'দুঃখিত, আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।' টাটা থেকে ল্যাকমি, ম্যানফোর্স থেকে পিভিআর, সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করলেই নজরে পড়ছে তাবড় বড় বড় ব্র্যান্ডের অফিশিয়াল অ্যাপলজি লেটার। গ্রাহকদের কাছে করজোড়ে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছে তারা। প্রোডাক্টে কোনও সমস্যা রয়েছে? নাকি পরিষেবা বিঘ্নিত হয়েছে? কেসটা কী?
কেন এই ট্রেন্ড?
সোশ্যাল মিডিয়া মানেই নিত্য নতুন কিছু না কিছু ট্রেন্ড। চোখের পলকে ট্রেন্ডগুলি হয়ে যায় ভাইরাল। এবার এইরকম ভাইরাল ট্রেন্ডের আসরে রয়েছে বড় বড় ব্র্যান্ড। হাজমোলা, টি-সিরিজ, সিয়েটের মতো একাধিক সংস্থা। কর্পোরেট এই সংস্থাগুলি করজোড়ে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছেন গ্রাহকদের কাছে। কর্পোরেল ধাঁচে বানানো এই অ্যাপলজি লেটারের বয়ানে অবশ্য রয়েছে ভরপুর হাস্যরস। সৃজনশীল পোস্টগুলির শিরোনাম দেখে বিষয়টি গুরুতর মনে হলেও আদতে সেটি নেহাতই মজার ছলে করা হয়েছে।
কী রয়েছে অ্যাপলজি লেটারে?
কোনও ভুল ত্রুটি কিংবা পরিষেবা বা প্রোডাক্ট সম্পর্কে অভিযোগের জন্য গ্রাহকদের কাছে ক্ষমা চাইছে না সংস্থাগুলি। বরং তাবড় ব্র্যান্ডগুলি ক্ষমা চাইছে ‘খুব ভাল’ পরিষেবা দেওয়ার জন্য। কেউ বলছে, 'অত্যধিক ভাল পরিষেবা দেওয়ার জন্য আমরা দুঃখিত।' আবার কেউ বলছে, 'নজরকাড়া পরিষেবা দেওয়ার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।' ফেসবুক, ইনস্টা ফিড উপচে পড়ছে এই রকম মজাদার 'অ্যাপলজি লেটার'-এ।
অবিকল কর্পোরেট ধাঁচে তৈরি অ্যাপলজি লেটারের টেমপ্লেট দেখে যে কেউ ঘাবড়ে যেতে পারেন। মনে হতে পারেন, প্রিয় কোনও ব্র্যান্ড বুঝি খারাপ পরিষেবার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছে গ্রাহকদের কাছে। কিন্তু লেটারের ভিতরেই রয়েছে টুইস্ট। ভুল স্বীকার নয় বরং গ্রাহকদের অতিরিক্ত খুশি করার জন্যই ক্ষমা চাইছে ব্র্যান্ডগুলি।
কোন কোন ব্র্যান্ড রয়েছে এই ট্রেন্ডে?
স্কোডা ইন্ডিয়া, টি-সিরিজ, ফোক্সওয়াগন ইন্ডিয়া, কেভেন্টার্স, ল্যাকমি, লোটাস, ম্যানফোর্স, সিয়েট, হাজমোলা, জয় ইন্ডিয়া, ভাদিলাল, কেভেন্টার্স, ডাবর, পিভিআর-এর মতো একগুচ্ছ জনপ্রিয় ব্র্যান্ড। তালিকায় রয়েছে আদানি, টাটাও। গাড়ি থেকে মিল্কশেক, ডিটুসি ব্র্যান্ড থেকে মেকআপ দুনিয়া, সবাই একই টেমপ্লেটকে নিজের মতো করে ব্যবহার করছে। কেভেন্টার্স জানাচ্ছে, তাদের মিল্কশেক বারবার মানুষকে টেনে আনে—‘তার জন্য সরি’।
আসল কারণ
এই ধরনের প্রচারকে বলা হয়, ইমোশনাল ব্র্যান্ডিং। হালকা, বুদ্ধিদীপ্ত কনটেন্ট দিয়ে প্রচার করা হয় এক্ষেত্রে। সফট মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজিও বল হয় একে। নিজেদের শক্তিকেই মজার ছলে পেশ করে ব্র্যান্ডগুলি। তবে হিউমারের আড়ালে ভ্যালু প্রোপোজিশন পরিষ্কার থাকে। অ্যালগরিদম–ফ্রেন্ডলি ছোট কপি, পরিষ্কার ভিজ্যুয়াল, ওয়ান–লাইনার দিয়ে এনগেজমেন্ট বাড়িয়ে তোলাই এর লক্ষ্য।
> টেমপ্লেটেবল ফরম্যাট: ব্র্যান্ড–ভেদে সহজে কাস্টমাইজযোগ্য
> লো–কস্ট, হাই–রিচ: ন্যূনতম প্রোডাকশনেই সর্বোচ্চ শেয়ারেবিলিটি
> হিউম্যানাইজেশন: ‘ক্ষমা’ চাওয়ার ভঙ্গিতে ব্র্যান্ড আরও ‘মানুষচেনা’ লাগে
> রিইনফোর্সমেন্ট: যে গুণে বিক্রি হচ্ছে, সেটাই স্মার্টভাবে পুনরুচ্চারণ
বিজ্ঞাপনের ভিড়ে এই ‘ক্ষমা চাওয়ার’ কায়দা প্রমাণ করছে হিউমরের আড়ালে কর্পোরেট ধাঁচে গ্রাহকদের মন জয় করতে অভিনবত্ব এবং সৃজনশীলতাই আসল।