লাগাতার বৃষ্টিতে নদী-নালা ফুলেফেঁপে উঠেছে। আর তারই মাঝে ধরা পড়ল এমন এক দৃশ্য, যা দেখলে আপনার চোখে জল এসে যাবে। এ যেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘মহেশ’ গল্পের বাস্তব রূপ। পার্থক্য একটাই, এখানে ষাঁড় নেই, বরং আছে ‘হীরা’ ও ‘মোতি’ নামের দু'টি বলদ। আর সেই বলদদের জীবন বাঁচাতে রীতিমতো নিজের প্রাণ বাজি রাখলেন রূপ সিংহ নামের এক কৃষক। শুক্রবার সন্ধ্যায় মধ্যপ্রদেশের চিন্দওয়াড়ার হররাই ব্লকের রাজঢানা গ্রামে এই ঘটনা ঘটেছে। সেই ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সূত্রের খবর, একটানা বৃষ্টির কারণে গ্রামের নদীতে জল বাড়ছে। সেই সময় রূপসিংহ তাঁর বলদ-সহ গাড়ি নিয়ে একটি সেতুর উপরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। হঠাৎই স্রোতের তীব্র টানে বলদ দু'টি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং গাড়ি-সহ সোজা নদীর জলে ভেসে যেতে থাকে।
দৃশ্যতই বিপজ্জনক পরিস্থিতি। কিন্তু তাতেও সাহস হারাননি রূপসিংহ। নিজের জীবনের পরোয়া না করে, সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি থেকে বলদ দু'টিকে আলাদা করে ফেলেন। তারপর নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে বলদ দু'টিকে সাঁতরে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে আসেন। এই ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। কৃষকের সাহস দেখে নেটমাধ্যমে প্রশংসার ঝড় উঠেছে।
ঠিক যেমন শরৎচন্দ্রের ‘মহেশ’ গল্পে ষাঁড়টির সঙ্গে দরিদ্র কৃষকের আত্মার সম্পর্ক ছিল, ঠিক তেমনই যেন এখানেও এক অকল্পনীয় গভীর টান। বলদ দু'টি যেন যথার্থই ‘হীরা’ ও ‘মোতি’।
খবর পেয়ে স্থানীয় থানার ইনচার্জ আশীষ জেতবার ঘটনাস্থলে পৌঁছন। পাশাপাশি, পরাসিয়া এসডিওপি জিতেন্দ্র জাট জানিয়েছেন, নদীর জলে গাড়ি টেনে নিয়ে গেলেও চালক সম্পূর্ণ সুরক্ষিত রয়েছেন। কোনওরকম প্রাণহানি ঘটেনি।
হীরা-মোতি’র প্রাণ বাঁচাতে রূপসিংহের এই প্রাণের ঝুঁকি নেওয়া... আর পাঁচজনের বুদ্ধিতে অযৌক্তিক মনে হতেই পারে। কিন্তু এতে এটাই প্রমাণ হয় যে, ভালবাসার মায়া এমনই যে, মানুষ এক পশুর জন্যও প্রাণ ত্যাগ করতে রাজি হয়ে যায়। শরৎচন্দ্রের কল্পনা যেন বাস্তবে নেমে এল চিন্দওয়াড়ার ভেজা মাটিতে।