৩ জনুয়ারি ২০২২, আমেরিকার লুসিয়ানা স্টেট। এখানে একটি ছোট শহর। যার নাম স্লটার। যেখানে শুধুমাত্র ৯০০-র মতো লোক পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। এখানে বাসিন্দা ৬৪ বছর বয়সি শিলা ফ্লেচার নামক এক মহিলার ফোন যায় পুলিশকের কাছে। সে কাঁদতে কাঁদতে জানায়, তাঁর মেয়ে লেসির মৃত্যু হয়ে গিয়েছে। তিনি জানান যে তিনি এবং তাঁর স্বামী ক্লে ঘুরতে গিয়েছিলেন, কিন্তু যখন ফিরে আসি, যখন দেখি যে আমাদের ছত্রিশ বছর বয়সী মেয়ের মেসির লাশ পড়ে রয়েছে।
খবর পাওয়ার পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এরপরে শিলা এবং ক্লে পুলিশকে ঘরের ভেতর নিয়ে যায়। যখন পুলিশ ঘরের ভেতরে গিয়ে লেসির লাশ দেখেন, তখন তাঁদের আতঙ্কে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসে. কারণ ঘরের মধ্যে থেকে খুব দুর্গন্ধ বেরোচ্ছিল এবং সোফার উপরে একটি লাশ পড়েছিল, যা লেসির। পুলিশ হতবাক হয়ে যান। এ কারণে কারণ লাশের পরিস্থিতি এমন ছিল যা দেখে তাদের লোম খাড়া হয়ে গিয়েছিল। ওই লাশটি সোফায় সঙ্গে এমন ভাবে আটকে ছিল যাতে মনে হচ্ছিল একটা অংশ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
শুধু তাই নয় লাশের ওপর পোকামাকড় কিলবিল করছিল। তা দেখে এমন মনে হচ্ছে যে ওই লাশ বহু সময় থেকে সোফার উপর পড়ে রয়েছে। লাশের শরীরে লাল রঙের দাগ ছিল। যাতে মনে হচ্ছিল যে তার কোনও গভীর রোগ হয়েছিল। লাশকে এই পরিস্থিতিতে দেখে পুলিশ কর্মীরা বমি করে ফেলেন। তবুও তারা সাহস করে কোনও ভাবে লাস্টটিকে বাইরে বের করে যখন সেটির ওজন করা হয় তা মাত্র সাতাশ কেজি ছিল।
১২ বছর বছর ধরে সোফাতে ছিল
এরপর লাশটি পোস্টমর্টেম করানো হয়। যাঁর মধ্যে দিয়ে জানা যায় যে লেসির মৃত্যু না খেয়ে এবং আলসারের পরে সেপসিস নামক গম্ভীর রোগের কারণে হয়েছে। যখন মেসির মা-বাবাকে এটা নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, তখন তাঁরা চমকে দেওয়ার মতো তথ্য পুলিশকে জানান। তাঁরা জানান যে, তাঁর মেয়ে গত ১২ বছর থেকে সোফার উপরেই শুয়ে ছিল। দম্পতি জানান যে, তাঁদের মনেও নেই যে তাঁরা শেষবার তাঁকে কবে নড়াচড়া করতে দেখেছেন। তাঁর শরীরে কিছু জিনিস যদি নড়তো তাহলে তার চোখ। চোখের ইশারাতেই সে সমস্ত কিছু বোঝানোর চেষ্টা করতেন। সোফায় শুয়েই তার সমস্ত নিত্যনৈমিত্তিক কাজ সম্পন্ন করতে লেসি।
দম্পতি জানান, যে তার মেয়ে অদ্ভুত রোগের শিকার ছিল যাকে লক ইন সিন্ড্রোম বলে। এটি এমন একটি বিরল রোগ যার কারণে মানুষের শরীরে সমস্ত মাংসপেশি কাজ করা বন্ধ করে দেয়। শুধু চোখের মাংসপেশি বাদ দিয়ে, এতে ব্যক্তির শরীর একটা জীবন্ত লাশ হয়ে যায়। এখন পুলিশের কাছে পরিষ্কার হয়ে যায়, লেসির যদি ক্ষুন্ন হয়ে থাকে তাহলে ও বাইরের লোকের হাত নেই। কারণ ১২ বছর ধরে সে বহির্জগতের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন।
এরপরেই পুলিশ শিলা এবং ক্লের উপরে খুনের অভিযোগ দায়ের করে। কারণ ২০১০-এ ওই দম্পতি চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করায়। লেসিকে ক্লিনিকে নিয়ে যেতে বলেন। কিন্তু দম্পতি মেয়েকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাননি। সোফাতেই পড়েছিল। এরপর ২০২২-এ কোর্টে এটি প্রমাণ হয়ে যায় যে লেসির মার্ডার তাদের মা-বাবাই করেছে এবং সেটাও খুব ভেবেচিন্তে ধীরে ধীরে লেসিকে মারা হয়। যাতে তাদের উপর হত্যার অভিযোগ না আসে। এই মামলা এখন আদালতে রয়েছে এবং আগামী ১৯ জুন তার শুনানি রয়েছে।