শ্রীকৃষ্ণের ভক্তদের কাছে ও বাংলার এক ঐতিহ্যবাহী উৎসব ঝুলনযাত্রা একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। তবে বর্তমানে শহরাঞ্চলে এই উৎসবের রেশ ক্ষীণ হয়ে আসছে। তার মধ্যেই কেউ কেউ চেষ্টা করছেন ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে।
শ্রাবণ মাসের অমাবস্যার পরের একাদশী থেকে শুরু হয় শ্রাবণী পূর্ণিমা। তখনই এই ঝুলনযাত্রা হয়। ঝুলনের আরেক অর্থ দোলনা। ওইদিন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্য দোলনা সাজানো হয়। আর সেই দোলনায় বসিয়ে শ্রীকৃষ্ণ ও রাধাকে দোল দেওয়া হয়। এছাড়া ভক্তিমূলক গান, নাচের আয়োজন করা হয় এই দিন।
আধুনিকতার যুগে কংক্রিটের শহরে হারিয়ে যাচ্ছে ঝুলন যাত্রার ঐতিহ্য। প্রতিযোগিতার যুগে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার দৌড়ে নতুন প্রজন্মের কাছে অজানা থেকে যাচ্ছে এই ঝুলন যাত্রার ইতিহাস।
ঝুলনের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে ও আধুনিক প্রজন্মকে এ সম্পর্কে প্রচার করতে ঝুলন তৈরি করেছেন শিলিগুড়ির কলেজ পাড়ার বাসিন্দা উজ্জ্বল বিশ্বাস। তার তৈরি ঝুলন দেখতে ভিড় করছে আট থেকে আশি সকলেই।
এই কয়েক দশক আগও মা-দিদিমারা ছোটদের ঝুলনযাত্রার গল্প শোনাতেন। তার সঙ্গেই উঠে আসতো ইতিহাসের পাতার আরও নানা গল্প ও কাহিনী।
তবে, পরিবর্তিত যুগের সঙ্গে ও পড়াশোনার বোঝায় গল্প করার সময়টাই আর পায় না বাচ্চারা। সমাজের সাথে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যেতে মুঠোফোনের মধ্যে সীমিত থেকে যাচ্ছে তাদের জীবন। তাই ঝুলন তৈরি কিংবা ঝুলন সম্পর্কে জানার আর সময় বা উৎসাহ কিছু দেখা যায় না।
অন্যদিকে, বেড়ে ওঠা শহরে মাটি, বালি সহ নানা ঝুলন তৈরির সামগ্রীও মেলা ভার। ফলে ঝুলনের সংখ্যা কমতে কমতে এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে।
অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী শুভমিতা পাল বলে, "আমি ঝুলন সম্পর্কে জানি। তবে কখনও বানাইনি, কারণ সময় পাই না। সকালে স্কুল থেকে এসে বিকেলে টিউশন পড়তে চলে যাই, ওখান থেকে আসতে রাত হয়ে যায়। এই ঝুলন দেখে খুব ভালো লেগেছে।"
কিন্তু বৃন্দাবনে রাধা-কৃষ্ণর শৈশব-স্মৃতি, বিশেষতঃ সখা-সখীদের সাথে দোলনায় দোলার প্রেমলীলাকে কেন্দ্র করে দ্বাপরযুগে এই ঝুলন উৎসবের ইতিহাস ধরে রেখেছেন শিলিগুড়ি শহরের বেশ কিছু মানুষেরা।
তার মধ্যেই একজন উজ্জ্বল বাবু। নিজের বাড়ির ছোট জায়গাতেই তিনি তৈরি করেছেন ঝুলন। শিলিগুড়ি শহরের প্রতীকী ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন তার মধ্যেই, যেখানে একপাশে রয়েছে পাহাড়, কংক্রিটের শহর আবার রয়েছে শহর সংলগ্ন গ্রামও।
নিজের মেয়েকে ঝুলন কী তা বোঝাতেই তার এই উদ্যোগ। তাতে আরো অনেকেই জানতে পারছেন এই ঝুলন সম্পর্কে। ঝুলন যাতে হারিয়ে না যায় তার জন্যই তার এই প্রয়াস।
তিনি বলেন, "আমার মেয়েকে ঝুলন কি তা বোঝাতে এটা তৈরি করেছি। আমার মেয়েও তাতে সাহায্য করেছে। আশা করি আগামীদিনে ও নিজেই একা ঝুলন তৈরি করবে।"
উজ্জলবাবু, সিমেন্ট, বালি, ফাইবার দিয়ে তৈরি করেছেন ঝুলনটি। সেখানে আছে বাড়ি, ঘর, পাহাড়, ব্রিজ, পার্ক, নাগরদোলা ইত্যাদি, যা মন কাড়ছে ছোটদের। এই ঝুলন তৈরি করতে প্রায় দেড় মাস সময় লেগেছে উজ্জ্বল বাবুর।