লকডাউনে বন্ধ স্কুল। প্রতিমাসে নিয়ম করে বেতন পেলেও, কাজ প্রায় নেই বললেই চলে। সেই সঙ্গে জেলায় বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। চারিদিকে হাহাকার, অসহায় মানুষের আর্তনাদ। তাই কিছুটা বিবেকের দংশনেই, মানবিকতা আর সহমর্মিতা কে হাতিয়ার করে আজ মালদায় অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ালেন এক প্রাথমিক শিক্ষক।
গরিব মানুষের পেট ভরাতে লক্ষ্যে স্থির মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুরের শিক্ষক দ্রোণাচার্য বন্দ্যোপাধ্যায়। করোনাকালে তার চোখ এখন শুধুই অসহায় মানুষ গুলোর দিকে। স্থানীয় কিরণবালা বালিকা বিদ্যালয় সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, এখন তার আশেপাশের এলাকার গরিব অসহায় বহু মানুষের খাদ্য যোগানের ভার তুলে নিয়েছেন নিজের কাঁধে। এ কাজে তার যোগ্য সহযোগী সহধর্মিনী চৈতালি বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রতিদিন নিয়ম করে রান্না করার পর হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার বিভিন্ন পাড়ায় থাকা অসহায় গরীব করোনা সংক্রামিত দের বাড়িতে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন এই দ্রোণাচার্য। আর সেটা করছেন ঘড়ির কাঁটা ধরে নিয়ম নিষ্ঠার সাথেই। সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে এই শিক্ষকের সমাজসেবার কথা এখন পৌঁছে গেছে বহু মানুষের ঘরে ঘরে। ফলে প্রতিদিনই বাড়ছে অসহায় মানুষের সংখ্যা। সারাদিনে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া তার ফোন নাম্বার এও ফোন আসছে অসংখ্য। কাউকেই নিরাশ করছেন না এই শিক্ষক। তার সীমিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সকলের কাছেই পৌঁছে যাওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি। করণা আক্রান্তের বাড়ির দরজায় পৌঁছে আসছেন সদ্য রান্না করা গরম টাটকা খাবার।
এলাকায় বিট্টু নামে পরিচিত দ্রোণাচার্য বাবু। সবার প্রিয় বিট্টু দা। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে যখন দেশ নাজেহাল। তার প্রভাব পড়েছে মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরেও। এলাকার অনেক গরিব মানুষ আজ করোনা আক্রান্ত। অনেকেই কাজে যেতে পারছেন না, তাই আয় বন্ধ। এই পরিস্থিতিতে নিজের বেতনের একটা অংশ দিয়ে এই সমস্ত মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছেন বিট্টু দা। এলাকায় খোঁজ করে,তার বাড়িতে পৌছতেই উঠোনে দেখা গেল এই বিশাল কর্মকাণ্ডের কিছু ছবি। উঠোনের চারিদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে আলু, ফুলকপি সহ বিভিন্ন সবজির পাশাপাশি সয়াবিন ও ডিম। পাশেই রয়েছে বস্তায় চাল।
তার ঠিক পাশেই বিট্টুবাবুর স্ত্রীর নেতৃত্বে চলছে এই বিশাল কর্মযজ্ঞ। রান্নার পর সেই সমস্ত জিনিস ভর্তি করা হচ্ছে ফয়েল প্যাকে।
তারপর সময় হতেই সেগুলি নিয়ে দ্রোণাচার্য বাবু বেরিয়ে পড়ছেন নির্দিষ্ট গন্তব্যে। জানিয়েছেন, যতদিন পারবেন, ততদিন কাজ চালিয়ে যাবেন তিনি। স্ত্রী চৈতালি বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে গ্রামের অসহায় গরীব মানুষের বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেওয়ার যে গুরুদায়িত্ব তার স্বামী নিয়েছেন, তার পাশে রয়েছেন তিনি।
সর্বতোভাবে এই কাজে সাহায্য করতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছেন তিনি। সকলের বাড়িতে নির্দিষ্ট সময়ে খাবার পৌঁছে দিয়ে ফিরে আসার সময় দেখা হল এই ব্যতিক্রমী শিক্ষকের সাথে। জানতে চাইলাম, কেন করছেন ? কেমন লাগছে ? সকলে তো কিছু করার পরই বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি ভর্তি করছে, এক্ষেত্রে আপনার প্রাপ্তি কি ? জানালেন, প্রাপ্তি ? যখন নির্দিষ্ট সময় মেনে এই সমস্ত অসহায় গরীব মানুষগুলোর বাড়ির দরজায় খাবার পৌঁছে দিচ্ছি, এবং সেই খাবার পাওয়ার পর শত কষ্টে থাকা মানুষগুলো, তাদের পরিবার আর ছোট ছোট শিশুদের মুখের হাসি আমার পরম পাওনা। আর কী চাই!