আলিপুরদুয়ার দুই ব্লকের পুকুরিয়া গ্রাম যেন এক বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। রাজ্য সরকারের উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি বাধাপ্রাপ্ত আলিপুরদুয়ার-২ ব্লকের যশোডাঙ্গায়।
রাজ্য সরকারের উন্নয়নের ছিটেফোঁটাও এসে পৌঁছায়নি আলিপুরদুয়ার জেলা শহর থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরের দুই নম্বর ব্লকের যশোডাঙ্গা এলাকায়।
ভরা বর্ষার মরশুমে প্রতিদিন দুই হাজার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে থার্মোকলের ভেলায় চেপে পারাপার করেন যশোডাঙ্গার বুক চিরে বয়ে চলা টইটম্বুর বামনী নদী। রাজ্য সরকারের কোন প্রতিনিধি কিংবা আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জন বারলারও কোনওদিন পদধূলি পড়েনি এই যশোডাঙ্গা গ্রামের ত্রি-সীমানায়।
এই নদীর এক প্রান্তে যশোডাঙ্গা, আর অপর প্রান্তে পুকুরিয়া গ্রাম। পুকুরিয়া গ্রাম থেকে যশোডাঙ্গা গ্রামে আসার একমাত্র পরিবহণ ব্যবস্থা বলতে ওই থার্মোকলের ভেলা। হাজার দুয়েক মানুষের চলাচলের একমাত্র এই ভেলাই সারা বছর চলাচলের একমাত্র সম্বল।
স্থানীয় বাসিন্দারাদের অভিযোগ প্রশাসনের তরফ থেকে আজ ওবধি এই এলাকায় সেঁতু নির্মাণের কোন ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।এমনকী কিছুটা নিশ্চিন্তে নদী পারাপারের জন্য একটি নৌকার ব্যবস্থা পর্যন্ত করা হয়নি।
পুকুরিয়া গ্ৰামের এই দুই হাজার মানুষদের দুই নম্বর ব্লক অফিস, প্রাথমিক স্বাস্থকেন্দ্র অথবা জেলা শহরে পৌছতে হলে এই থার্মোকলের ভেলায় রাতবিরেতে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই বামনী নদী পারাপার করতে হয়।
দিন-দুপুরে কিংবা ঝড় জলের রাতে কোনও প্রসূতির মহিলার প্রসব যন্ত্রনা উঠলে তাকেও ওই থার্মোকলের ভেলায় করেই নিয়ে আসতে হবে জেলা সদরে। প্রাণের ঝুঁকি নিয়েই প্রাণ বাঁচাতে ছোটেন মানুষ। শীতের মরশুমে কোমর সমান জলে বামনী নদী হেঁটে পার করা গেলেও বর্ষায় রুদ্রমূর্তি ধারণ করে নদী। তখন কোনওভাবেই নদীতে নামা সম্ভব হয় না।
বাসিন্দারা জানান, বর্ষাকালে প্রচন্ড ফুলেফেঁপে ওঠে বামনী নদী। এই সময় থার্মোকলের ভেলায় চড়ে নদী পারাপার খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তা সত্বেও ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার করতে হয়। কারণ পরিবহণের বিকল্প অন্য কোনও পথ নেই উন্নয়ন থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত পুকুরিয়া গ্রামের মানুষের কাছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শাসক দলের দুই পঞ্চায়েত সদস্য বলেন, পঞ্চায়েত সমিতি থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসন এবং জেলা পরিষদের সভাধিপতি সবার কাছেই বামনী নদীর উপর একটি সেতু নির্মানের দাবি করেছিলাম। সেতু নির্মাণ দূরের কথা, এলাকায় একজনকেও আসতে দেখিনি।