সকাল থেকেই টানা মুষলধারে বৃষ্টি। দুর্গম বক্সা পাহাড়ের দেহ ধ্বসে ক্ষতবিক্ষত, বিপর্যস্ত। প্রতি পদেই মৃত্যুর হাতছানি। বৃষ্টির ফোঁটার সাথেই গাছ থেকে টুপটাপ করে গায়ে ঝড়ে পড়ছে বিভিন্ন আকৃতির, বিভিন্ন রঙের রক্তচোষা জোঁক।
আর এই প্রাকৃতিক দুর্যোগকে সঙ্গী করেই মৃত্যুর হাতছানি উপেক্ষা করে ছাতা হাতে তিন পাহাড়েই চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় তিন হাজার ফুট উচ্চতায় দুয়ারে সরকার কর্মসূচিতে দুর্গম বক্সা পাহাড়ে লেপচা, ডুকপাদের গ্রামে পৌঁছে গেল আলিপুরদুয়ার জেলা প্রশাসন।
ছিলেন শাসক সুরেন্দ্র কুমার মিনা। সঙ্গী থাকলেন কালচিনি ব্লকের বিডিও প্রশান্ত বর্মন সহ প্রশাসনের অন্যান্য আধিকারিকরা। শনিবার সকালে প্রাকৃতিক দুর্যোগ সাথে নিয়েই সান্তলাবাড়ি থেকে বক্সা পাহারে ট্রেক করা শুরু করেন প্রশাসনের কর্তারা।
প্রবল বৃষ্টিতে পাহাড়ি দুর্গম পথ চলতে বারে বারেই সমস্যা হচ্ছিলো। শেষ অবধি বক্সা পাহারের কোলে বক্সা ফোর্ট লাগোয়া স্থানীয় নেপালি জুনিয়র হাইস্কুলে পৌঁছে যান আধিকারিকরা।
শনিবার বক্সা পাহারের ক্যাম্প দেখে কার্যত অবাক হয়ে গেছেন প্রশাসনের কর্তারা। পাহাড়ের ১৪ টি গ্রাম থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে মানুষ চলে আসেন শিবিরে।
উল্লেখ্য, অন্যান্য দুয়ারে সরকার শিবিরের মতই বক্সাতেও এদিন এক নম্বরে থাকলো লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্প। দ্বিতীয় জনপ্রিয় প্রকল্প হিসেবে ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচিতে ছিল স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প। পাশাপাশি সরকারি অন্যান্য স্কিমের সাহায্য নিতে বয়স্ক মানুষ, ছাত্র যুবরা সকাল থেকেই ভিড় বাড়াতে থাকেন।
ঘিরে উপভোক্তাদের আগ্রহ ছিল সব চেয়ে বেশি। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, গত বার আবেদন করেও যে-সব উপভোক্তা কার্ড পাননি অথবা যাঁদের কার্ডে সংশোধন প্রয়োজন, তাঁরা এ বার স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের জন্য বিভিন্ন শিবিরে যোগাযোগ করছেন।
লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পে নথিভুক্ত হওয়ার অন্যতম মাধ্যম স্বাস্থ্যসাথী। তাই স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের জন্যও এ বার আগ্রহ ব্যাপক। মানুষের সেই আগ্রহ বুঝতে পেরে আগাম পরিকল্পনাও নিয়েছে আলিপুরদুয়ার জেলা প্রশাসন।
এদিকে,শনিবার প্রবল বৃষ্টির মধ্যে বক্সা পাহারের এক্কেবারে দুর্গম এলাকায় থাকা চুনাভাটি গ্রাম থেকে স্থানীয়দের পাহার ডিঙিয়ে শিবিরে আসতে সমস্যা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের সুত্রে জানা গেছে, দ্রুত চুনাভাটি, আদমার মত দুটি দুর্গম পাহাড়ি গ্রামেও শিবির করা হবে।
জেলাশাসক জানিয়েছেন, কোভিড বিধির কথা মাথায় রেখে রাজ্য জুড়ে দ্বিতীয় দুয়ারে সরকার কর্মসূচির শিবির বিন্যাসে প্রায় নিয়মিতই পরিমার্জনের কাজ চলছে। বাড়ানো হচ্ছে শিবিরের সংখ্যা। এদিকে, বক্সা পাহাড়ে মূলত আদিবাসী ডুকপা জনজাতির মানুষ সংখ্যা গরিষ্ঠ। চিকিৎসা পরিষেবার জন্য তাদের আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালের উপর নির্ভর করেন পাহাড়ের মানুষ।
আয়ের উৎস ছোট আকারে চাষবাস,কিছুটা পর্যটন। স্বাভাবিক ভাবেই লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের জনপ্রিয়তা ছিল সবচাইতে বেশি। এদিন সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৫ টা অবদি টানা শিবির চলেছে। স্থানীয় নিমা ভুটিয়া বলেন, লক্ষ্মীর ভান্ডার, স্বাস্থ্য সাথী কার্ড অনেকটাই আত্নবিশ্বাস বাড়াবে পাহাড়ের মানুষদের।