মিষ্টি খেতে কে না ভালোবাসে, কিন্তু এমনও কিছু মিষ্টি রয়েছে যার ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। আর সেই মিষ্টি যদি হয় মালদার ৫০০ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী, চৈতন্য মহাপ্রভুর স্মৃতি বিজড়িত রসকদম্ব, তবে তো কথাই নেই।
যদিও এই মিষ্টি আজ অবহেলা আর স্বীকৃতির অভাবে হারাতে বসেছে । মালদার এই রসকদম্ব নিয়ে উৎসবের দাবি তুলেছেন বিশিষ্টজনেরা। রসগোল্লার মতো রসকদম্বর পেটেন্ট পেতে আন্দোলন গড়ে তোলার দাবি তুলছেন তারা।
মালদা জেলার বিশিষ্ট ইতিহাস গবেষক তথা গৌড় কলেজের অধ্যাপিকা সুস্মিতা সোম জানিয়েছেন, গৌড় সংলগ্ন রামকেলিতে চৈতন্যদেব একটি কদম ফুলের গাছের নীচে তিনদিন অতিবাহিত করেছিলেন। কদম্ব ফুলে ভরেছিল গাছটি। সেই কদম্ব ফুলের অনুকরণে তৈরি মিষ্টি দিয়ে চৈতন্যদেবকে আপ্যায়ন করা হয়। তা থেকেই সেই মিষ্টির নাম হয় রসকদম্ব বলে কথিত রয়েছে।
তিনি তার গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, রসকদম্ব আসলে ছোট রসগোল্লার ওপর খাঁটি ক্ষীরের প্রলেপ দেওয়া এক ধরনের মিষ্টি। ক্ষীরের ওপর থাকে মিষ্টি পোস্তর আরেকটি প্রলেপ। দেখতে একেবারেই কদম্ব ফুলের মতো। এই মিষ্টি কেবল মালদায় পাওয়া যায়। আগামীতে এই মিষ্টিকে বাঁচিয়ে রাখতে তার স্বীকৃতি দরকার।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকের অভিযোগ, এখন বহু দোকানে অত্যাধিক দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে, পোস্তর বদলে চিনির তৈরি ছোট ছোট দানা দেওয়া হয়। ক্ষীর আর আগের মতো স্বাদযুক্ত নয়। হলে একথা বলাই যেতে পারে, যে, ধীরে ধীরে মালদার রসকদম্ব ঐতিহ্য হারাতে বসেছে।
রসকদম্বের ঐতিহ্য ফিরিয়ে নিয়ে আসতে রসকদম্ব উৎসবের দাবিও জানিয়েছেন বহু ক্রেতা-বিক্রেতা। এছাড়াও মালদার প্রসিদ্ধ এই মিষ্টির পেটেন্ট পেতে দ্রুত আন্দোলন গড়ে তোলা উচিত বলে মনে করেন অনেকে।
রসগোল্লা বাংলার না ওডিশার-তা নিয়ে বিতর্কে বাঙালিপক্ষের সংগঠন সপ্তডিঙা ফাউন্ডেশনের হয়ে কাজ করেছিলেন কলকাতার সেন্ট্রাল কলেজের অধ্যাপক বিষ্ণু সিকদার। সেই আন্দোলনের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানান, রসগোল্লার ক্ষেত্রে যে বিতর্কটি ছিল, রসকদম্বের ক্ষেত্রে তা নেই। তা নিশ্চিতভাবেই মালদা তথা গোটা বাংলার সম্পদ, অন্য কোনও রাজ্য এই মিষ্টির সত্ত্বা দাবি করতেই পারবে না। তাই কোনও সংস্থা সামান্য উদ্যোগ নিলেই এর জিআই রেজিস্ট্রেশন করা সম্ভব।
চৈতন্যদেবের রামকেলি আগমনের সঙ্গে প্রায় পাঁচশো বছরের পুরোনো এই ঐতিহ্যশালী মিষ্টান্ন জড়িয়ে আছে। মালদায় এর আদিরূপ দেখা গেলেও শিলিগুড়ি, হাওড়া, হুগলি, দুই চব্বিশ পরগনা সহ দক্ষিণবঙ্গে এই মিষ্টি আজও সমান জনপ্রিয়।
মালদা শহরের এক মিষ্টি ব্যবসায়ীর কথায়, রসকদম্ব মালদার ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি। বংশপরম্পরায় আমাদের দোকানে রসকদম্ব তৈরি হয়। দুইরকম রসকদম্ব পাওয়া যায়, একটা পোস্ত দিয়ে তৈরি, আরেকটা চিনির তৈরি বিশেষ দানা দিয়ে দাম ৭ টাকা থেকে ১৫ টাকা।