বছরখানেক আগেও যে মহানন্দা নদীর পাড় মানেই লোকে না সিঁটকোত। দুর্গন্ধে টেঁকা দায় হতো, একটা সময় মানুষ এড়িয়ে চলত এই এলাকাকে। আজ সেই মহানন্দা নদীর পার হচ্ছে শহরের মানুষের সন্ধ্যাকালীন আড্ডার পীঠস্থান। একটু দুজনে কুজনে সময় কাটানোর আল্টিমেট ডেস্টিনেশন। সঙ্গে এলাকার আকর্ষণ আরও বাড়িয়েছে দেওয়ালে আঁকা উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন স্থানের ছবি। যা এলাকার সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে তুলেছে কয়েকগুণ। সুন্দর ছবিকে পিছনে রেখে সেলফি তোলার আকর্ষণও নেহাত কম নয়।
বৈচিত্র্যর আকর্ষণে ভিড় বেড়েছে অনেকটাই। ভিড় বাড়তেই প্রতিদিন সন্ধ্যায় নিয়ম করে এলাকায় বসছে ফাস্টফুডের দোকান। সব মিলিয়ে সন্ধ্যা পড়লেই জমজমাট হচ্ছে মহানন্দা নদীর পাড়। মহানন্দা নদীর পার্ককে সংস্কার করে নতুন রূপে সাজিয়ে তুলতে বাম পুরবোর্ড থাকাকালীন এই প্রকল্পর কাজ শুরু হয়। যদিও এই নদীর পাড় তৈরি করা নিয়ে স্থানীয় ছট পুজো কমিটির বিক্ষোভেও জল অনেকদূর গড়িয়েছিল। তবে শেষমেশ সমস্যা সমাধানে পর গোটা মহানন্দা নদীর পার জুড়ে নতুন করে সাজিয়ে তোলা হয়েছে পুরনিগমের তরফে।
সঙ্গে নদীর পাড়ে সূর্যসেন পার্কে যাওয়ার রাস্তায় দেওয়ালে তুলে ধরা হয়েছে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন পর্যটন ও আকর্ষনের জায়গাগুলিকে। আর তা নজর টানছে বাইরের পর্যটকদেরও। প্রতিদিন সন্ধ্যা পড়লেই ভিড় বাড়ছে নদীর পাড়ে। বেঙ্গল সাফারি পার্ক, গুম্ফা, সেভকের করোনেশন সেতুর মতো টুরিস্ট ডেস্টিনেশনে নজর বোলাতে হাজির হচ্ছেন টুরিস্টরাও।
কলকাতা থেকে শিল্পী নিয়ে এসে টানা প্রায় এক মাস কাজ করার পর এই দেওয়াল অঙ্কনের কাজ শেষ হয়।তাছাড়াও সৌন্দর্যায়নের পাশাপাশি বৃক্ষরোপণও করা হয়েছে। সৌন্দর্যায়নের কাজ সমাপ্ত হলে ধীরে ধীরে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে সেখানে। এখন প্রায় প্রতিদিনই জমজমাট থাকে ওই এলাকা।
তবে এখনও ক্ষোভ রয়েছে অপরিষ্কার মহানন্দা নদী নিয়ে। নদীর অপর প্রান্তে রয়েছে খাটাল। যা থেকে মাঝে মধ্যেই দুর্গন্ধ আসে। যা এই সৌন্দর্যের বাহারে এক ফোঁটা চোনার মতো বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তবে, এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে পুরনিগম। চলতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে নদী তীরবর্তী খাটাল গুলিকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মেয়র গৌতম দেব বলেন, " খাটাল সরিয়ে নেওয়ার পর সম্পূর্ণভাবে মহানন্দা নদী যাতে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকে তার ওপর কাজ করা হবে। এর আগে নদীধারে শৌচকর্ম করতো অনেকেই। জরিমানা করে এখন তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সময় দিলে আমরা আশা করছি আবার আগের মহানন্দাকে ফিরে পাবো।"
নদীর তীরবর্তী এই এলাকায় যাতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে তার নজরদারি করার জন্য আলাদা নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ করা রয়েছে। ২৪ ঘন্টা নজরদারি চালান তিনজন নিরাপত্তারক্ষী। ভুনেশ্বর সাহানি নামে এক নিরাপত্তারক্ষী বলেন, "প্রায় প্রতিদিন রাত ১১টা পর্যন্ত এখানে অনেকেই থাকেন। তারপর খালি হতে শুরু করে। এখানে আর কাউকে শৌচকর্ম কিংবা প্রস্রাব করতে দেওয়া হয় না। আমরা তিনজন সময় বিভক্ত করে ২৪ ঘন্টা পাহাড়া দেই। তার জন্য মাসিক ৫০০০ টাকা করে পুরনিগমের পক্ষ থেকে আমাদের দেওয়া হয়।"