দিনরাত ২৪ ঘন্টা হাতি, বাইসন, চিতাবাঘ,বিষধর সাপ, হরিণের পাল, বুনো শূয়রের সাথেই কাটিয়ে দেন আলিপুরদুয়ার রেল ডিভিশনের দুই গেটম্যান।
স্থানীয় বাসিন্দা সহ রেলের অনেক কর্মী এই দুই গেটম্যানকে রেলের টারজান বলে ডেকে থাকেন। একজনকে ডাকা হয় সিনিয়র টারজান তো অপর জনের নাম জুনিয়র টারজান।
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের রেলের এই দুই টারজান তথা দুই গেটম্যানের দেখা পেতে হলে যেতে হবে বক্সা টাইগার রিজার্ভের বুক চিরে চলে যাওয়া এসকে-১২৬ নম্বর শিকারী গেটে।
রাজাভাতখাওয়া রেলস্টেশন থেকে জঙ্গলের পথ ধরে হাঁটা পথে নয়তো রাজাভাতখাওয়া থেকে সড়ক পথে গভীর জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে ডিমা সেতু হয়ে কালচিনি যাওয়ার পথে ঘন জঙ্গলের মধ্যে রয়েছে এই শিকারী রেলগেট।
২০০৯ সাল থেকেই এই শিকারী গেটে জঙলি প্রাণীদের সাথেই রেলের গেটম্যানের কাজ করছেন দিলীপ কুমার দাস এবং নবকান্ত নাথ। দিনে পালা করে দুই গেটম্যান এই গেটে কাজ করছেন।
বক্সার কোর এলাকায় থাকা এই শিকারী রেলগেট থেকে জনবসতি প্রায় চার কিলোমিটার দূরে। রেলগেটের আশেপাশে নেই কোনও বনবস্তি।
এই রেলগেট থেকে সবচেয়ে কাছের জনবসতি রাজাভাতখাওয়া। অন্যদিকে কালচিনির দুরত্ব প্রায় নয় কিলোমিটার।
দিনে দুপুরেই বক্সার কোর এলাকার এই রেলগেটে হাতি, বাইসন, বুনো শূয়র, হরিণের পাল ঘুরে বেড়ায়। মাঝেমধ্যে হাতির দল গেটম্যানদের জন্য তৈরি ছোট্ট পাকা ঘরটির মধ্যে চলে এলেও এখনও পর্যন্ত তারা দুই গেটম্যানকে কোনও ক্ষতি করেনি।
শীত গ্রীষ্ম, বর্ষা দিব্যি এই দুই গেটম্যান কোর এলাকার জঙ্গলে নির্ভয়ে পায়চারী করে ঘুরে বেড়ান। এই দুই গেটম্যানের সাথে অজান্তেই যেন নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠেছে বন্যপ্রাণীদের।
আলিপুরদুয়ারের বাসিন্দা দিলীপ কুমার দাস তথা সিনিয়র টারজান বলেন "দিনরাত ২৪ ঘন্টাই এখানে হাতি, বাইসন, বুনো শূয়র, হরিণ, চিতাবাঘ ঘুরে বেড়ায়"। তবে কোনও দিন আমাদের কোনও ক্ষতি করেনি এই বুনো প্রাণীগুলো। ওদের জন্য মাঝে মধ্যেই আমরা পানীয় জল আমাদের রেল ঘুমটির মধ্যে রেখে দিই। ওরা এসে সেই জল পান করে। ওদের সাথে দিব্যি ভালো আছি। শহরের জটিল মানুষদের থেকে অবলা এই প্রাণীগুলো অনেক ভালো। ওদের সাথেই ভালো আছি।