টানা বৃষ্টিতে ফের বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গ। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি এলাকা এবং নীচু এলাকাগুলি সমস্য়ায় পড়েছে। পাহাড়ে ধস, নীচু এলাকায় জলমগ্নতা। প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হওয়ায় শিলিগুড়ির মতো উঁচু জায়গাও জলমগ্ন হয়ে রয়েছে অনেক জায়গায়।
গত চার-পাঁচদিন ধরে টানা ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি চলছে উত্তরবঙ্গে। যার জেরে ফের ধস নেমেছে পাহাড়ে। প্রথম কয়েকদিন শুধু বৃষ্টি হলেও বুধবার রাত থেকেই দার্জিলিং, কালিম্পঙের পাশাপাশি সিকিমেরও বেশ কয়েক জায়গায় ধস নেমেছে। শিলিগুড়ি-সিকিমগামী জাতীয় সড়কে ধস নেমে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। নেমেছে।
ব্যাপক সমস্যায় পড়েছেন পাহাড়ে ঘুরতে যাওয়া পর্যটকেরা। শিলিগুড়ি থেকে পাহাড়ে যাওয়ার প্রধান রাস্তা কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ঘুরপথে যেতে হচ্ছে। ব্যাপক যানজট পাহাড়ের পাকদণ্ডিতে। ফলে পর্যটকদের দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকতে হচ্ছে রাস্তায়। সব মিলিয়ে, বিপর্যস্ত পাহাড়।
বুধবার বিকালে ধস নামে উত্তর সিকিমে ইয়ুমথাম ভ্যালি (Yumthang) যাওয়ার পথে লাচুংয়ের পুম এলাকায়। তারপর দার্জিলিং, কালিম্পং সহ পাহাড়ের একাধিক এলাকায় ধস নামার খবর মিলেছে। শিলিগুড়ি-সিকিমগামী জাতীয় সড়কে, ২৯ মাইল এলাকাতেও ধস নামে। আচমকা ধসে গাড়ি নিয়ে প্রায় ৭০ জন পর্যটক আটকে পড়েন। সেনাবাহিনীর জওয়ানরা তাদের সকলকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
নাগাড়ে বৃষ্টির জেরেই পাহাড়ে ধস নেমেছে বলে প্রশাসন থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি। তবে ঘুরপথে পাহাড়ে উঠতে গিয়ে ব্যাপক সমস্যায় পড়েছেন পর্যটক থেকে স্থানীয়রা। রাস্তার দু-দিকে গাড়ির লম্বা লাইন পড়ে গিয়েছে। তবে বৃষ্টি কিছুটা না কমলে এবং রাস্তা পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত শিলিগুড়ি-সিকিমগামী প্রধান সড়কটি পুরোপুরি চালু করা যাবে না বলে প্রশাসন সূত্রে খবর।
এদিকে শিলিগুড়ির মতো সাধারণত জল না জমা এলাকাতেও বৃষ্টিতে জল জমে গিয়েছে। বৃষ্টি কমলে ধীরে ধীরে বেশিরভাগ জায়গায় জল নেমে গেলেও, শহরের একাধিক নীচু জায়গায় বৃহস্পতিবারও জল জমে রয়েছে। জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ারের বহু জায়গা জলমগ্ন।
এদিকে আলিপুরদুয়ারের জয়ন্তী নদীতে আচমকা জল বেড়ে যায় তুমুল বৃষ্টিতে। গত শনিবার জয়ন্তী নদী পেরিয়ে, দুর্গম পাহাড়ি পথ পার করে বড় মহাকালে পুজো দিতে গিয়েছিলেন আলিপুরদুয়ারের ৭ যুবক। তখন নদী স্বাভাবিকই ছিল। কিন্তু মাঝে বৃষ্টি হয়ে নদীর জল ফুলে ফেঁপে ওঠে। ফলে তারা আর ফিরতে পারেনি। টানা চারদিন ধরে বড় মহাকালেই আটকে ছিল ওই সাত যুবক। স্থানীয়দের দেওয়া খাবার খেয়ে চারদিন কাটিয়ে দেন তাঁরা।
আলিপুরদুয়ারের পুলিশ, বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের টিম আটকে পড়া যুবকদের উদ্ধার করে নিয়ে আসে এ পারে। আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসক সুরেন্দ্র কুমার মিনা বলেন, ‘আটকে থাকা যুবকদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। সকলেই এখন সুরক্ষিত আছেন।’
একাধিক এলাকা টানা বৃষ্টিতে জলের নীচে মালদা, বালুরঘাট, গঙ্গারামপুর, ইংরেজবাজার, রতুয়া, হিলি, রায়গঞ্জ, কালিয়াগঞ্জ, ইসলামপুরেও।কোথাও হাঁটু জলের নীচে নয়।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন শিলিগুড়ি শহরের একাধিক এলাকা। ঘণ্টা চারেকের ভারী বৃষ্টিতে জলমগ্ন শহরের উঁচু থেকে নিচু এলাকা। অশোকনগর, শক্তিগড়, ডাবগ্রাম, নতুনপাড়া, সাউথ কলোনি, কলেজপাড়া, জলপাই মোড়-সহ শহরের একাধিক এলাকা জলমগ্ন।
টানা বৃষ্টিতে অশোকনগর, শক্তিগড় এলাকায় রাস্তায় হাঁটু সমান জল দাঁড়িয়ে যায়। এর ফলে ব্যাহত হয় যান চলাচল। ওই সব এলাকায় বেশ কিছু বাড়ির মধ্যেও জল ঢুকে গিয়েছে। এলাকার মানুষ আসবাবপত্র বিছানার উপর তুলে দিয়ে রাত কাটাচ্ছেন।