এবার হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ার (Black Beer) এর দেখা মিললো ডুয়ার্সের আলিপুরদুয়ারে। আলিপুরদুয়ার শহর থেকে মাত্র সাত কিলোমিটার দূরে এই ভল্লুকের দেখা মেলায় আতঙ্কিত শহরের মানুষ। শুক্রবার শহর সংলগ্ন মাঝেরডাবরি চা বাগানের কালকূট ও পানিয়ালগুড়ি বনবস্তির পাশের ১৩/ডি সেকশনে চা পাতা তোলার সময় ভাল্লুকটিকে দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন চা শ্রমিকরা। বন্ধ হয়ে যায় কাজ।
শুক্রবার সাত সকালে চা বাগানে ভালুক আসার খবর ছড়িয়ে পড়তেই ভিড় জমাতে শুরু করে উৎসাহী জনতা।পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ঘটনাস্থলে ১৪৪ ধারা জারির জন্য আলিপুরদুয়ার জেলা প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানায় বনদপ্তর। কারণ গত ২৪ নভেম্বর ডুয়ার্সের মেটেলি চা বাগানে চলে আসা একটি ভালুকের ছবি তুলতে গিয়ে, বন্যপ্রাণীটির আক্রমণে মৃত্যু হয় এক কিশোরের। পরে উত্তেজিত জনতা ভালুকটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলে।
ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতে বনদপ্তের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে লাগু হয় ১৪৪ ধারা। এলাকাটিকে ঘিরে ফেলে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প থেকে আনা দুটি কুনকি হাতির সাহায্যে শুরু হয় ভালুক খোঁজার পালা। শেষ পর্যন্ত টানা চার ঘন্টার চেষ্টায় বছর তিনেক বয়সের স্ত্রী ভল্লুকটিকে ঘুমপাড়ানি গুলিতে কাবু করে পাকড়াও করা হয়। তার আগে কালকূট বনবস্তিতে একটি বাছুরকে জখম করে ওই হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ার। প্রয়োজনীয় চিকিৎসার পর লোকালয়ে চলে আসা ভালুকটিকে প্রকৃতিতে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বনাধিকারিকরা।
তবে বারবার লোকালয়ে ভালুকদের আনাগোনা চিন্তায় ফেলেছে বনাধিকারিকদের। কারণ ইতিপূর্বে কালেভদ্রে জনপদে ভালুকের দেখা মিললেও চলতি বছরে সেই প্রবণতা অনেক বেড়ে গিয়েছে। দার্জিলিং থেকে শুরু করে কালিম্পং কিংবা এন্তার ডুয়ার্সের সমতলে শীতের শুরুতেই ভালুকের আনাগোনা নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন আছে বলে মনে করছেন উত্তরবঙ্গের অতিরিক্ত প্রধান মুখ্য বনপাল উজ্জ্বল ঘোষ।
তিনি জানিয়েছেন "আমার ধারণা বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে পাহাড়ে জলের সংকট বেড়ে যাওয়ার দরুন তৃষ্ণা মেটাতে ভালুকরা সমতলে চলে আসছে। বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত ভাবে গবেষণার প্রয়োজন।" মাঝেরডাবরি চা বাগানের ম্যানেজার চিন্ময় ধর জানিয়েছেন "চা বাগানটির ভৌগোলিক অবস্থান বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প সংলগ্ন হওয়ার দরুন আখছার হাতি ও লেপার্ডের আনাগোনা লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু চা বাগানে আস্ত ভালুকের দেখা মেলায় আমরা উদ্বিগ্ন।" বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প পশ্চিমের উপক্ষেত্র অধিকর্তা প্রবীণ কাসোয়ান জানিয়েছেন "প্রশাসনের সহযোগিতায় সাফল্যের সঙ্গে কোনওরকম বিপত্তি ছাড়াই ভালুকটিকে উদ্ধার করা গেছে।প্রয়োজনীয় চিকিৎসার পর ফের সেটিকে প্রকৃতিতে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।"