scorecardresearch
 

North Bengal Forests Open: পর্যটকদের জন্য তৈরি উত্তরবঙ্গ, আজ থেকে খুলে গেল ডুয়ার্স সহ সব জঙ্গল

North Bengal Forests Open: শুক্রবার ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে খুলে গেল রাজ্যের সমস্ত জঙ্গলগুলি। ফলে মূলত জঙ্গল টুরিজমের উপর নির্ভরশীল উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্স-তরাইয়ে এখন সাজসাজ রব। ইতিমধ্যেই পর্যটকরা যাতে পাহাড়ের পাশাপাশি ডুয়ার্সের জঙ্গলেও ভিড় জমায়, সেই আশায় চিলাপাতার জঙ্গলে মহাকালের পুজোও দেন পর্যটন-হোটেল ব্যবসায়ীরা। বুকিংও শুরু হয়েছে আগেই। ঘুরতে যাওয়ার আগে এক ঝলকে সেরা ডেস্টিনেশনগুলি।

Advertisement
আজ থেকে খুলে গেল উত্তরবঙ্গের সমস্ত জঙ্গল, পুজোয় কোথায়, কীভাবে ঘুরবেন? আজ থেকে খুলে গেল উত্তরবঙ্গের সমস্ত জঙ্গল, পুজোয় কোথায়, কীভাবে ঘুরবেন?
হাইলাইটস
  • আজ থেকে খুলে গেল উত্তরবঙ্গের সমস্ত জঙ্গল
  • বুকিং ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে
  • এক ঝলকে দেখে নিন, সেরা জঙ্গলগুলি

North Bengal Forests Open From 16th September: তিন মাস বন্ধ থাকার পর শুক্রবার ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে খুলে গেল রাজ্যের সমস্ত জঙ্গলগুলি। ফলে মূলত জঙ্গল টুরিজমের উপর নির্ভরশীল উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্স-তরাইয়ে এখন সাজসাজ রব। ইতিমধ্যেই পর্যটকরা যাতে পাহাড়ের পাশাপাশি ডুয়ার্সের জঙ্গলেও ভিড় জমায়, সেই আশায় চিলাপাতার জঙ্গলে মহাকালের পুজোও দেন পর্যটন-হোটেল ব্যবসায়ীরা। এটা গত কয়েকবছর ধরেই তাঁরা করে আসছেন। এতে শামিল হন জঙ্গল পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত লোকরাই। বুকিং আগে থেকেই শুরু হলেও এখনও কিছু বুকিং খালি রয়েছে। তাই পুজোয় পাহাড়ের পাশাপাশি জঙ্গল ভ্রমণের আগে কোথায় কোথায় যাবেন দেখে নিন।

বক্সা জঙ্গল (Buxa Forest)

উত্তরবঙ্গের ইতিহাস আশ্রিত বক্সা পাহাড়কে ঘিরে বক্সা জঙ্গল। বক্সার দুর্গে এক সময় অনেক স্বাধীনতা সংগ্রামী বন্দিজীবন কাটিয়েছেন। তবে বক্সার দুর্গমতা এখনও একই রয়েছে। ঘন অরণ্যে ঢাকা দুই পাশ। মাঝখান দিয়ে চলে গিয়েছে বক্সা যাওয়ার রাস্তা। দিনের বেলাও গা ছমছম করবে। বক্সাকে ঘিরে ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে মিথও। বক্সায় যেতে যেতে চা-কফি মোমোর প্রচুর ছোট দোকান রয়েছে। জিরিয়ে নেওয়া যায়। বক্সা দুর্গ সবচেয়ে আকর্ষণীয়। বক্সা দুর্গ প্রধানত তৈরি করেছিল ভুটানিরা। ডুয়ার্সে আক্রমণ চালানোর জন্য। ১৭৭৩ সালে এই দুর্গটি ব্রিটিশদের চোখে পড়ে এবং ১৮৬৫ সালে দ্বিতীয় ভুটান যুদ্ধের শেষে এই দুর্গ পাকাপাকিভাবে ইংরেজরা করায়ত্ব করে নেয়। দুর্গটি প্রথমে বাঁশের তৈরি ছিল। পরে ইংরেজরা পাথরের বানায়। এটিকে জেলখানা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। যা আন্দামানের সেলুলার জেলের থেকেও ভয়ঙ্কর বলে কথিত আছে। বহু স্বাধীনতা সংগ্রামী এই দুর্গের ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত বন্দী অবস্থায় ছিল।

হাতি

জয়ন্তী জঙ্গল (Jayanti Forest)

জয়ন্তী চেকপোস্ট থেকে কিছু দূরে গেলেই আপনারা দেখতে পাবেন রাস্তা দুই দিকে ভাগ হয়ে গিয়েছে। একদিকে চলে গিয়েছে বক্সা ফোর্ট, সান্তালাবাড়ি। অন্যদিকে চলে গিয়েছে জয়ন্তীর রাস্তা। হাতি, বাঘ, ক্লাউডেড লেপার্ড, বুনো কুকুর, গণ্ডার রয়েছে। বর্ষাকালে জয়ন্তী নদীর জল ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। কখনো কখনো এখানে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। এখানেও আপনারা পাবেন জঙ্গল সাফারি। তার সামনেই পুখুরি পাহাড়। ওখানের লেকে প্রচুর মাছ আর কচ্ছপ দেখতে পাবেন। হেঁটে উঠতে হবে মহাকাল মন্দিরে । প্রথমে পরে ছোট মহাকাল তারপরে বড় মহাকাল । উঠবার সময় পাহাড়ের গায়ে স্থায়ী এবং অস্থায়ী সিঁড়ি করা আছে। গুহার মধ্যে মহাকাল মূর্তি দর্শন করে নীচে নেমে আসুন। 

Advertisement

ভুটানঘাট (Bhutan Ghat)

জয়ন্তী থেকে যাওয়া যায় ভুটানঘাট। এটি বক্সা জঙ্গলেরই অংশ। হাতিপোতা হয়ে ভুটানঘাট পর্যটকদের ভিড়ে জমজমাট থাকে সারা বছরই। সব সময়ই যাওয়া যায়। অদ্ভুত নিস্তব্ধতা বিরাজ করে গোটা এলাকায়। পুজোর সময় আবহাওয়া ভাল থাকলে স্বর্গীয় পরিবেশ বিরাজ করে।

জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান (Jaldapara National Park)

তোর্সা নদীর তীরে অবস্থিত মাদারিহাটের এই অভয়ারণ্যের সামগ্রিক আয়তন ১৪১ বর্গ কিলোমিটার। পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ার জেলার অন্তর্গত জলদাপাড়া মূলত নদীকেন্দ্রিক বনাঞ্চলময় একটি বিস্তীর্ণ তৃণভূমি। সেখানকার বৈচিত্রময় প্রাণী ও উদ্ভিদ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ১৯৪১ সালে জলদাপাড়া একটি অভয়ারণ্য ঘোষিত হয়েছিল। ২০১২ সালে এই বনভূমিকে জাতীয় উদ্যান বলে ঘোষণা করা হয়। জলদাপাড়া অরণ্য়ের মুখ্য আকর্ষণ একশৃঙ্গ গণ্ডার। জলদাপাড়া টুরিস্ট লজ বা হলং বনবাংলোতে খাকার সুযোগ পেলে বাংলোয় বসেই দেখতে পাওয়া যাবে গণ্ডারের গতিবিধি। এছাড়া হাতি, গাউর, হরিণ ছাড়া লেপার্ড তো রয়েইছে। হাতির পিঠে চেপে জঙ্গল দর্শন জলদাপাড়ার মূল আকর্ষণ।

গণ্ডার

পাতলাখাওয়া অভয়ারণ্য (Patlakhaoa Wildlife Sanctuary)

পাতলাখাওয়া জঙ্গলটি জলদাপাড়া অভয়ারণ্যেরই একটা অংশ। এক কালে এখানেও গন্ডারের দেখা মিলত। কোচবিহারের রাজা মহারাজারা এক সময় পাতলাখাওয়ার রসমতি বনাঞ্চলে শিকারেও যেতেন। তার পর ধীরে ধীরে এখান থেকেও গন্ডাররা জলদাপাড়ার দিকে চলে যায়। জলদাপাড়ার চাপ কমাতে পাতলাখাওয়ার রসমতী বনাঞ্চলকে গন্ডার আবাসস্থল করা হচ্ছে বনদফতরের তরফে। পাতলাখাওয়া জঙ্গলের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়েছে তোর্সা নদী। নদীর পার দিয়ে গন্ডারেরদের প্রিয় খাবার চাড্ডা, পুরুন্ডি, চেপটি ও মালসা ঘাস লাগানো হয়েছে। তবে শুধু গন্ডারই নয়, এই জঙ্গলে আগে থেকেই হরিণ, গাউর এবং চিতাবাঘ রয়েছে। এখানে ভিড় অন্য় জঙ্গলগুলির তুলনায় কিছুটা কম।

গরুমারা জাতীয় উদ্যান (Gorumara National Park)

ভারতের নিজস্ব একশৃঙ্গ গন্ডারের বংশবৃদ্ধির জন্য বিখ্যাত এই অভয়ারণ্য। দেশের অন্যান্য জাতীয় উদ্যানের তুলনায় আকারে মাঝারি হলেও গরুমারা জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ। নানা রকম অজানা প্রাণী এবং উদ্ভিদের দেখা মেলে। প্রায় ৫০ রকম প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৯০-র বেশি প্রজাতির পাখি, ২০-র বেশি প্রজাতির সরীসৃপ, ৭ ধরনের কচ্ছপ, ২৫ রকমেরও বেশি প্রজাতির মাছ এবং আরও নানা জন্তু-জানোয়ার। কখনও কখনও বাঘ অর্থাৎ রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারও চলে আসে। নানা বিরল প্রজাতির জীবজন্তু গরুমারাকে করে তুলেছে অনন্য। লুপ্তপ্রায় হয়ে আসা পিগমি হগ এবং হিসপিড খরগোশ এখানে থাকে। কত বিচিত্র পাখি, যেমন সিঁদুরে সহেলি, মৌটুসি, শাহ বুলবুল, কেশরাজ, ভারতীয় ধনেশ, কাঠঠোকরা, মথুরা। চখাচখি পাখির উড়ে যাওয়ার পথে গরুমারা পরে। আরও প্রচুর পরিযায়ী পাখি আসে এই জাতীয় উদ্যানে। এখানেও জিপ সাফারি করে ওয়াচ টাওয়ার থেকে বন্যপ্রাণ দেখার সুযোগ রয়েছে।

রিসর্ট

নেওড়া ভ্যালি জাতীয় উদ্যান (Neora Valley National Park)

কালিম্পং জেলায় এই জাতীয় উদ্যানটি। এই বনাঞ্চল জাতীয় উদ্যানের শিরোপা পায় ১৯৮৬ সালে। ৮৮ বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে এই অরণ্য ছড়িয়ে আছে। জীববৈচিত্র্যের দিক থেকে উত্তরপূর্ব ভারতের সব চেয়ে সমৃদ্ধ অরণ্যভূমি এই নেওড়া ভ্যালি। এখানকার আকর্ষণ বিরল রেড পাণ্ডা। এই বনাঞ্চলের অনেকটাই আজও দুর্গম। সেই দুর্গমতার জন্যই প্রাণী এবং উদ্ভিদগুলি নিরাপদে রয়েছে। নেওড়া ভ্যালির বহু জায়গায় দিনের বেলাতেও বহু জায়গায় সূর্যের আলো পৌঁছয় না। জঙ্গল পথে হাঁটা ছাড়া উপায় নেই। সাধারণ টুরিস্ট কম আসেন দুর্গমতার কারণে। তাই ভবঘুরে পর্যটক, প্রকৃতিপ্রেমী, ট্রেকারদের স্বর্গরাজ্য এটি। নেওড়া ভ্যালির বনপথে ট্রেকিং এক অনন্য অভিজ্ঞতা। তরাই-ডুয়ার্সের সবচেয়ে গভীর এবং সুন্দর অরণ্য এটি।

Advertisement

কীভাবে যাবেন? (How To Reach)

শিলিগুড়িতে বাসে, ট্রেনে কিংবা বিমানে নেমে সরাসরি গাড়ি ভাড়া করে চলে যেতে পারেন। ট্রেনে অবশ্য কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেসে শিয়ালদা থেকে উঠলে গরুমারা, লাটাগুড়ি যাওয়ার জন্য মালবাজার স্টেশনে, জলদাপাড়া যাওয়ার জন্য মাদারিহাট স্টেশনে নামতে পারেন। অনেকে আলিপুরদুয়ারে নেমে ডুয়ার্স ঘোরেন। আবার অনেকে উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসে কোচবিহারে নেমে চিলাপাতা ভ্রমণ করতে পারেন। তবে শিলিগুড়ি থেকে একবারে গাড়ি নিয়ে ভ্রমণ করা সবচেয়ে ভাল। তাতে যাত্রাপথের আনন্দ বাড়তি আমেজ দেবে।

খরচ কেমন? (Expenses)

যাঁরা তরাই-ডুয়ার্সে ঘোরেন তাঁরা জানেন গাড়ি ভাড়ার তারতম্য ছাড়া থাকা-খাওয়া সব মোটামুটি মাঝারি খরচে হয়ে যায়। জায়গা ভেদে ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে একদিন থাকা-খাওয়া হয়ে যায়। বাকিটা নিজেদের সুবিধামতো ঘোরাঘুরি, সাফারি করলে সেগুলির খরচ আলাদা।

 

Advertisement