প্রত্যাশার বাইরে জিতে পাহাড়ের গদি দখল করেছে নতুন দল ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা (BGPM)। অনিত থাপার বিজিপিএমই আপাতত পাঁচ বছর পাহাড়ের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করবে। আপাতত ভোট যুদ্ধ সাঙ্গ। এখন কে কোন পদে বসবেন তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে (GTA) নতুন বোর্ড গঠন নিয়ে এখন বিভিন্ন রকম আলোচনা চলছে। বিজিপিএম সভাপতি অনিতা থাপা জিটিএ চিফ এক্সিকিউটিভ হবেন, তা মোটামুটি পাকা। কিন্তু বাকি পদগুলিতে কারা বসবেন, যোগ্য প্রার্থী কারা, এই নিয়ে শুরু হয়েছে এখন চুলচেরা বিশ্লেষণ। অন্যদিকে শোনা যাচ্ছে জিটিএ বোর্ডের শপথে আমন্ত্রণ জানানো হতে পারে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সবটা এখনও চূড়ান্ত নয় তবে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন অনিত থাপা নিজেই।
প্রথম টার্গেটেই ৪৫ এ ২৭
জিটিএ-র ৪৫টি আসনের সবকটিতে প্রার্থী দিয়েছিলেন অনিত থাপারা। তার মধ্যে ২৩ টি আসন দরকার ছিল ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছানোর জন্য। বিজেপিএম ২৭ টিতে জিতে সমস্ত রকম জল্পনা থামিয়ে পাহাড়ে নতুন দল হিসেবে ক্ষমতায় উঠে এসেছে। দশটি আসনে প্রার্থী দিয়ে জয় পেয়েছে তৃণমূল। সংসংখ্যক আসন পেয়েছে নির্দল প্রার্থীরাও। নির্দলের প্রায় বেশিরভাগই বিজিপিএমের পক্ষে এবং তৃণমূলও অনিত থাপাকেই সমর্থন করবে বলে জানা গিয়েছে।
কাকে কোন পদ দেওয়া হবে?
এখন চর্চা শুরু হয়েছে কাকে কোন পদ দেওয়া হবে? সংবিধান অনুযায়ী চিফ এক্সিকিউটিভ থাকবেন একজন। এছাড়া ডেপুটি চিফ এক্সিকিউটিভ, একজন চেয়ারম্যান এবং একজন ডেপুটি চেয়ারম্যান হবেন। শিক্ষা, সংস্কৃতি ভূমি ও ভূমি সংস্কার, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া, পর্যটন সহ বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হবে বিভিন্ন স্বশাসিত বোর্ডের মতই। চিফ এক্সিকিউটিভ পদে মোটামুটি অনিত পাকা। বাকি পদগুলির দায়িত্ব কাদের দেবেন তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। ৭ জুলাই এর আগে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিকে বৈঠকে ডাকা হয়েছে। তা সেখানেই মোটামুটি ফাইনাল হবে তালিকা। জানা গিয়েছে বহু লোককে সুযোগ করে দিতে আড়াই বছর করে অনেককে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।
বিনয় তামাংকে নিয়ে জল্পনা
তবে একটা জল্পনা ছড়িয়েছে যে, বিনয় তামাং যেহেতু তৃণমূলে রয়েছেন এবং তৃণমূল জোট সঙ্গীও বটে, তাকেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে জিটিএ বোর্ডে। যদিও এ নিয়ে বিনয় বা অনিত কেউই কোথাও মুখ খোলেননি। ফলে সঠিক কী সিদ্ধান্ত, তা নিয়ে এখনও কিছু ঠিক হয়নি।
২০১২র পর ফের নির্বাচন হলো এবার
এর আগে ২০১২ সালের শেষবার জিটিএ নির্বাচন হয়েছিল। যেখানে একচ্ছত্র জয় পেয়েছিল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। এরপর ২০১৬ সালে জিটিএ থেকে পদত্যাগ করে দীর্ঘকালীন আন্দোলনে নামে বিমল গুরুং-রোশন গিরিরা। তাদের নেতৃত্বে মোর্চা, পাহাড়ে ধারাবাহিক হিংসা-খুন সহ একাধিক মামলায় জড়িয়ে পড়ে। তাদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা দায়ের করে রাজ্য সরকার। এরপরই পাহাড় ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় বিমল। সেই সময় পাহাড়ে শান্তি ফেরাতে রাজ্য সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করেছিলেন এবং এখন তৃণমূলের সদস্য বিনয় তামাং। সে সময় অনিত থাপাকে সঙ্গে নিয়ে বিনয় গোর্খা জনম মোর্চা টু নামে সংগঠন চালিয়ে গিয়েছেন। পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়ে আনার পুরষ্কার পেয়েছেন অনিত-বিনয় দুজনই।