গণতন্ত্রে বিশ্বাস ফিরেছে
মসনদ গিয়েছে অনেকদিনই। তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতা করে পাহাড়ে ফিরেছেন। তারপরও ফেরেনি সাম্রাজ্য। কীভাবে ফের পাহাড়ের রাজনীতিতে শিকড় ছড়াবেন তা বুঝে উঠতে পারছেন না বিমল গুরুং। ফলে এতদিন রাজতন্ত্রের ঢংয়ে শাসন চালালেও এবার ফিরে আসতে গণতন্ত্রকে আঁকড়ে ধরতে চাইছেন তিনি।
মুখ্য়মন্ত্রীকে আশ্বাস দিয়েও ভরাডুবি
বিধানসভা নির্বাচনের আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আশ্বাস দিয়েছিলেন, নেপালি ভোটেই তিনি বাজিমাত করবেন। কার্যক্ষেত্রে তা হয়নি। পাহাড়ের তিনটি আসনেই ভরাডুবি হয়েছে বিমল গুরুংয়ের নেতৃত্বাধীন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার। যাদের কোনও অস্তিত্ব কয়েক বছর আগে পর্যন্ত ছিল না, সেই বিনয়পন্থী রা একটি আসন জিতে নিয়েছে। বাকি দুটি আসনে বিজেপি-জিএনএলএফ জুটি নিজেদের পতাকা উড়িয়েছে।
তরাই-ডুয়ার্সেও ধুয়ে মুছে সাফ গুরুং ও সঙ্গী তৃণমূল
বিমলের কপালে জোটেনি একটিও আসন। ফলে তৃণমূলের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা কমে আসছে। উত্তরবঙ্গের চা বলয় এবং তরাই-ডুয়ার্সে তৃণমূলকে সহায়তা করবেন বলে জানালেও আদপেও তৃণমূলের কোনও লাভ হয়নি। সব আসনেই ধুয়ে মুছে সাফ তৃণমূল। সঙ্গে গুরুং বাহিনীও।
অস্তিত্ব রক্ষায় বিমলের বিকল্প ভাবনা
ফলে নতুন করে জিটিএ বোর্ডের প্রশাসনিক ক্ষমতা বিনয়পন্থী মোর্চাকে দিতে চাইছে তৃণমূল। বিমল গুরুং বুঝতে পেরেছেন, তাঁর দাবি এবং ক্ষমতা পাহাড়ে তলানির দিকে গিয়ে ঠেকেছে। ফলে বিকল্প ব্যবস্থা তৈরি করার চেষ্টা করছেন তিনি।
ঘিসিং থেকে গুরুং, সাম্রাজ্যের বদল
জিএনএলএফ সুপ্রিমো সুভাষকে ঘিসিংকে সরিয়ে পাহাড়ের একচ্ছত্র ক্ষমতা দখল করার সময়ে তাকে খুব একটা কাঠখড় পোড়াতে হয়নি। সংগঠনের দরকার হয়নি। কারণ জিএনএলএফের গোটা সংগঠন সেই সময়ে বিমল গুরুংয়ের নেতৃত্বাধীন নতুন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা দলে যোগ দিয়েছিল। গোর্খাল্যান্ড বা পৃথক রাজ্যের দাবিতে তখন টগবগিয়ে ফুটছিল আমজনতা। সেই সময়ে কার্যত সাম্রাজ্যের হাত বদল হয়েছিল পাহাড়ে। গদি একই ছিল, শুধু চেহারা বদলে গিয়েছিল।
ফাঁকা থাকেনি পাহাড়ের রাজনীতি
কিন্তু এক দশক পর ২০১৭ সালের ধারাবাহিক হিংসার পরে একাধিক মামলায় জর্জরিত বিমল গুরুং-রোশন গিরিরা পাহাড় ছাড়া হওয়ার পর থেকে সেই জায়গা দখল করেছে বিনয় তামাং এবং বিজেপি-জিএনএলএফ। ততদিনে অবশ্য পাহাড়ে পা রেখেছিল তৃণমূলও।
আন্দোলনে ফিরছেন গুরুং
ফলে নতুন করে অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির দিকেই যোগ দিতে হচ্ছে বিমলকে। ছোট ছোট বৈঠক, ছোট ছোট এলাকায় সংগঠন তৈরির দিকে মন দিয়েছেন গুরুং। যদিও তাতে নিজেরই বিশ্বাস কম। তাই ফের নতুন করে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নিজেকে মেলে ধরতে এবং গ্রহণযোগ্য করতে চাইছেন তিনি।
সেবক-রংপোর সমস্যা নিয়ে পথে নামবে মোর্চা
সম্প্রতি সেবক থেকে রংপো পর্যন্ত ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে বসবাসকারী যে সমস্ত মানুষদের সমস্যা, তা সামনে রেখে আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিমল। গত বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে দার্জিলিংয়ে একটি সভা করেন তিনি। সেখানে দার্জিলিং-কালিম্পং এর নেতৃত্ব সংঘের সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন।
আন্দোলনে কমিটিও তৈরি
সেদিন ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে বসবাসকারীদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আন্দোলনে নামার জন্য একটি আলাদা কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১৮ সদস্যের এই কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে রোশন গিরিকে রাখা হয়েছে। চেয়ারম্যান হয়েছেন আরবি ভুজেল।
দেওয়াল লিখনে চোখ বিমলের
পাহাড়ে এত বছর রাজত্ব করার পর ফের সাধারণ স্থানীয় নেতায় পরিণত হয়েছেন বিমল-রোশন। দেওয়াল লিখন স্পষ্ট পড়তে পারছেন তাঁরা। ফলে পরিবর্তিত পাহাড়ে এখন রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক পথেই ফিরে আসতে হবে, বুঝতে পেরে গণতন্ত্রকে হাতিয়ার করে মুখ রক্ষা করতে চাইছেন তাঁরা।