scorecardresearch
 

৪০ ডিগ্রি তাপে পুড়ছেন, ৫ ডিগ্রি চলছে কাছেই ৪ জায়গায়, খরচও কম, রইল হদিশ

৪০ ডিগ্রি তাপে পুড়ছেন, ৫ ডিগ্রি চলছে কাছেই ৪ জায়গায়, খরচও কম, রইল হদিশ। এ রাজ্য ও প্রতিবেশী রাজ্যেই রয়েছে এই ঠিকানা।

Advertisement
সুন্দরী, হিমেল সান্দাকফু সুন্দরী, হিমেল সান্দাকফু
হাইলাইটস
  • ৪০ ডিগ্রি তাপে পুড়ছেন?
  • ৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ফ্রিজ হতে যান?
  • সান্দাকফু, ফালুট, লাচুং, লাচেন

কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গ যখন ৪০ ডিগ্রি পারায় থরহরিকম্প, তখন হাতের কাছে রয়েছে এমন ৪ ডেস্টিনেশন, যেখানে মে-জুন মাসের গরমেও ৫ ডিগ্রির উপরে চলে না পারদ। রাত তো বটেই, দিনে মোটা পশমের চাদর অথবা সোয়েটার গায়ে না দিলে আপনার দাঁতে দাঁত লেগে যেতে পারে। তার মধ্যে দুটি জায়গা রয়েছে এ রাজ্যে এই বাংলাতেই। অন্যদিকে রাজ্য থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে অন্য দুটি জায়গা একইভাবে আপনাকে গরমের ছুটির দিনে দু'দণ্ড শান্তি এনে দিতে পারে। তবে এখনই খোঁজখবর শুরু না করলে কিন্তু পরে জায়গা নাও পেতে পারেন। কারন গরমের ছুটিতে হামলে পড়তে চলেছে গোটা রাজ্য।

কোথায় রয়েছে গরমের স্বর্গ

এ রাজ্যের সান্দাকফু এবং ফালুট এবং বাংলার সীমানা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে আরেক শৈলরাজ্য সিকিমের লাচুং এবং লাচেন এই গরমেও আপনাকে দিতে পারে ফ্রিজারের অনুভব।

আসুন দেখে নিই কোথায় কীভাবে যাবেন?

১. সান্দাকফু

ফু

পশ্চিমবঙ্গের উচ্চতম শৃঙ্গ। ৩৩৩৬ মিটার বা ১১,৯৩৪ ফুট উঁচুতে দার্জিলিংয়ের সিঙ্গালিলা জাতীয় উদ্যান-এর ধারে পশ্চিমবঙ্গের নেপাল সীমান্তের এই শৃঙ্গ সিঙ্গালিলা পাহাড়ের সবচেয়ে উঁচু বিন্দু। এভারেস্ট, কাঞ্চনজঙ্ঘা, লোৎসে এবং মাকালু পৃথিবীর পাঁচটি সবচেয়ে উঁচু চারটি সান্দাকফু থেকে দেখা যায়। একে বলা হয় ট্রেকার্স প্যারাডাইস। যাঁরা পাহাড় ভালোবাসেন, ট্রেকিংয়ের আনন্দ নিতে চান, কিন্তু খুব ভালো ট্রেকার নন, এবং শারীরিক ভাবে ট্রেকিং এর জন্য ফিট নন, তাঁরাও ক্ষেত্রে অনায়াসে ট্রেকিংয়ের স্বাদ নিতে পারবেন।সান্দাকফুর একটা অন্যতম বৈশিষ্ট্য, অল্পবিস্তর হেঁটে সান্দাকফু ট্রেক করে যেতে পারেন। এর চেয়ে মজা আর কোথাও পাবেন না, এটুকু গ্যারান্টি। আর যেহেতু তাপমাত্রা একেবারেই কম তাই পথচলার ক্লান্তি অনুভব হবে না।

তাপমাত্রা ও পরিবেশ

Advertisement

সারা বছরই এখানে ১০ ডিগ্রির কাছাকাছই তাপমাত্রা থাকে এবং রাতের বেলায় ৪-৫ ডিগ্রিতে পৌঁছে যায়।এমনকী এই জুন মাসের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পাশাপাশি থাকে তবে সান্দাকফু যেতে হলে ১৫ জুনের মধ্যে যেতে হবে। তার কারণ ১৫ ই জুন থেকে সেপ্টেম্বর ১৫ তারিখ পর্যন্ত সান্দাকফু যাতায়াত বন্ধ রাখা হয়। এই এলাকা বিপদসংকুল হয়ে পরে। মে-জুন মাসে সান্দাকফুর তাপমাত্রা থাকে অত্যন্ত কম। মে মাসে দিনের সর্বোচ্চ-তাপমাত্রা ১২-১৩ ডিগ্রীর বেশি যায় না। রাতের বেলায় তাপমাত্রা নেমে আসে ৪-৫ ডিগ্রিতে।

কীভাবে যাবেন?

সান্দাকফু যেতে হলে এনজেপি স্টেশন বা তেনজিং নোরগে বাসস্ট্যান্ডের সামনে থেকে গাড়ি রিজার্ভ করে অথবা শেয়ার গাড়িতে যাওয়া যায়। তবে সরাসরি না গিয়ে শিলিগুড়ি থেকে মানেভঞ্জন গিয়ে রাতে মানেভঞ্জন থেকে পরদিন চলে যান ইচ্ছা করলে টংলু থাকতে পারেন। এরপর সরাসরি ইচ্ছে থাকলে গাড়ি রিজার্ভ করে দার্জিলিঙ থেকেও যেতে পারেন। যে কোনও জায়গা থেকেই ভাড়া গাড়ি পাওয়া যায়। যেতে পারেন শতাব্দীপ্রাচীন ল্য়ান্ডরোভারেও।

কোথায় থাকবেন?

সান্দাকফুতে জিটিএ-র তরফে বেশ কিছু থাকার জন্য কটেজ করা হয়েছে। তবে মানেভঞ্জন বা টংলুতে থেকে যেতে পারেন। রিম্বিকে থাকা যায়।

২. ফালুট

ছবি

সান্দাকফু থেকে মাত্র ২৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ভারতের পশ্চিবঙ্গের দ্বিতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ। এর উচ্চতা ৩৬০০ মিটার বা ১২৭৯০ ফুট উঁচু। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় হিমালয়ের অপরূপ শোভা সান্দাকফু ফালুট ও আপনি সমানভাবে অনুভব করতে পারবেন। ফালুট যাওয়ার পথে পড়বে সবুজে ঢাকা উপত্যকায় সামানদেন, আর ওক গাছের ছায়াপথে ঘুরে দিতে পারবেন। আর সিঙ্গালিলা পাস, ফালুটের পথে পড়বে। দেখে নিতে পারেন।এখানকার বিশেষত্ব হল এই রুটের কোথাও জল নেই। শুধু ১৪ কিলোমিটার দূরে আছে সবরগ্রাম নামে একটি জায়গা। যেখানে একটি ছোট এসএসবি ক্যাম্প আছে। সেখানে ট্যুরিস্টদের জন্য খাবার জল আর বিশ্রাম নেওয়ার ব্যবস্থা আছে। এখান থেকে একটু পথ নীচে মল্লি নামে একটা জায়গা নেমে গিয়েছে। সেখান থেকে রাম্মাম যাওয়া যায় এবং রাম্মাম থেকে দার্জিলিং অথবা শিলিগুড়ির জন্য রওনা দেওয়া যায়। রিম্বিক থেকে সরাসরি গাড়ি নিয়ে দার্জিলিং বা শিলিগুড়ি যাওয়া যায়।

তাপমাত্রা

মে মাসে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকে ৩ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনের বেলা এটি মেরেকেটে ১০ ডিগ্রিতে পৌঁছায়। ফলে বুঝতেই পারছেন পর্যাপ্ত শীতপোশাক না থাকলে বিপদে পড়তে হবে।

একই রুটে হওয়ার সান্দাকফু ও ফালুটে যাওয়ার পথে একই জায়গায় থাকা ও খাওয়া সম্ভব। কারণ যাঁরা সান্দাকফু আসেন, একবারেই ফালুট ঘোরেন। ফলে বাকি সমস্ত একই রকমভাবে যেতে পারবেন।

৩. লাচুং

লাচুং

লাচুং ভারতের উত্তর সিকিম এর একটি গ্রাম। উচ্চতা ৯৬০৪ ফুট। প্রাকৃতিক নৈসর্গ এবং সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এটি গোটা দেশের মধ্যে অন্যতম আকর্ষণীয় জায়গা হিসেবে চিহ্নিত। বছরের বেশিরভাগ সময় এখানে বরফাবৃত থাকে। এমনকী কখনও কখনও এপ্রিল মাসেও নজির রয়েছে তুষারপাতের। গ্যাংটক থেকে লাচুং পর্যন্ত আপনার সঙ্গী হবে প্রকৃতির অপরূপ শোভা। লাচুংয়ে প্রতিটি পদক্ষেপে সৌন্দর্যের খনি। জনবসতি খুব কম। পাহাড় ও বনভূমি, নিঝুম পাইন গাছের সারি, আপনার মন ভালো করে দেবে। আর আছে নানা প্রজাতির নামের পাশে রয়েছে তিস্তার শাখা-প্রশাখা। লাচুং, লাচেন এই দুই নদীকে ঘিরে এলাকা।

কী কী দেখবেন?

ঘুরে আসতে পারেন ইয়ুমথাং ভ্যালি। দূরত্ব মাত্র ৩০ কিলোমিটার। ইয়ুমথাং ছাড়া শিবমন্দির জিরো পয়েন্ট খুব কাছাকাছি। সিকিম সীমান্ত খুব কাছে হওয়ায় সাধারণ পর্যটকরা একদম কাছাকাছি যেতে পারেন না। কাছেই চিন সীমান্ত। লাচুং থেকে অন্য একটি রাস্তা ধরে পৌঁছানো যায় বরফের রাজ্য কাটাওতে। ২৪ কিলোমিটার দূরে পর্যটকদের জন্য এটি সরকারিভাবে বন্ধ থাকে। তবে স্থানীয় লোকজনকে ম্যানেজ করে সেখানে যাওয়া গেলেও যেতে পারে।

Advertisement

কোথায় থাকবেন?

গ্যাংটক থেকে দু রাত্রি তিন দিনের আলাদা প্যাকেজ নিতে হবে> কেউ যদি মনে করেন গ্যাংটক ও লাচুং একবারে ঘুরবেন, তাহলে দিন সাতেকের কমে কিছুতেই হবে না। লাচুংয়ে হোটেল এবং থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে খুব সুন্দর। তবে তা আগে থেকে বুকিং করে যাওয়াই ভালো। নইলে সব সময়ে প্রায় ভরাই থাকে।

৪. লাচেন

লাচেন

নর্থ সিকিম এর আরও একটি পাহাড়ি গ্রাম লাচেন। ভারতের ৩৬টি হেরিটেজ গ্রামের এর মধ্যে একটি এটি। সিকিমের রাজধানী গ্যাংটক থেকে ১২৬ কিলোমিটার দূরে এবং উচ্চতার ৯৪০০ ফুট। লাচেন মানে হচ্ছে বড় গিরিখাত। এখান থেকে তিব্বত যাওয়া যায় খুব সহজে। এই গ্রামটির নিজস্ব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন রয়েছে। এখানকার সবচেয়ে আকর্ষণীয় যে জায়গাটা তা হল গুরুডোংমার লেক। খামখেয়ালি আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখে দুপুরের মধ্যেই থেকে ফিরে আসা উচিত। গ্যাংটক থেকে চিন যেতে সময় লাগে ৬ ঘন্টা। জনবহুল গ্যাংটক শহর পেরিয়ে লাচেন যাওয়ার জন্য গাড়ি উঠতে থাকে। পাহাড়ি পথ বেয়ে সবুজ-লাল গোলাপি রডোডেনড্রন, সামনে তুষারাবৃত পাহাড় এবং ঝরনা, এভাবে কিছুক্ষণ চলতে চলতে কিছুক্ষণ পর সবুজ থাকবে না। শুধু সাদা পাথর ধুধু প্রান্ত। 

কী কী দেখবেন?

গুরুডোংমার লেক ছাড়াও থাকবো চোপতা ভ্যালি খুব সুন্দর। থাঙ্গু যেতে পারেন। এই লেকটি একটি হিন্দু ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কাছে অত্যন্ত পবিত্র। আগে থেকে বুক করে লাচেন যেতে পারেন। লাচুংয়ে থাকা-খাওয়ার কোনও অসুবিধে নেই। তবে তা সমস্তই আগে থেকে ঠিক করে নেওয়া উচিত। পাহাড়ে যেমন খরচ, লাচেন-লাচেনেও তেমনই খরচ।  সিজনে একটু বেশি টাকা লাগে। অফ সিজনে খানিকটা কম।

তাপমাত্রা

লাচেন-লাচুংয়ের তাপমাত্রা এক আধ ডিগ্রি হেরফের করে। মে মাসে ১৪-১৫ ডিগ্রির উপরে তাপমাত্রা যায় না। রাতে নেমে আসে ৪-৫ ডিগ্রিতে। কখনও কখনও ২-৩ ডিগ্রিও হয়ে যায় ঝড়-বৃষ্টি হলে।

 

 

ছবি সৌজন্যঃ উইকিপিডিয়া, নর্থবেঙ্গল টুরিজম, সিকিম টুরিজম

 

Advertisement