হাহাকারের দৃশ্য এক
দার্জিলিংয়ের এক নামি হোটেল ও রেস্তোরাঁর কর্মী। লকডাউনে রেস্তোরাঁ ক্ষতির মুখে পড়ায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রেস্তোরাঁ বন্ধ হলে নিজেদের রুটিরুজি বন্ধ হবে। এই সত্যটি বুঝতে পেরে স্ত্রীর গয়না বন্ধক রেখে অর্থ নিয়ে এসে মালিককে দিলেন এক কর্মী।
হাহাকারের দৃশ্য দুই
দার্জিলিংয়ের আরও একটি পরিচিত চেন রেস্তোরাঁর ফ্র্যাঞ্চাইজি উঠে যাওয়ার জোগাড়। পরপর দু বছর লকডাউনের গেরোয় সেখানকার এক কর্মী নিজের ডিপোজিট ভেঙে অর্থ নিয়ে এসে তুলে দিয়েছেন মালিকের হাতে। উদ্দেশ্য আর কিছুই নয়, রেস্তোরাঁ বাঁচাতে পারলে তাঁদেরও দীর্ঘমেয়াদি লাভ হবে।
হাহাকারের দৃশ্য তিন
শখ করে লাটাগুড়িতে একটি রিসর্ট কিনেছিলেন পেশায় ছোট ঠিকাদার এক ব্যক্তি। তিন বছরের প্রথম বছর ভালই কেটেছিল। লাভের কড়ি মন্দ আসেনি। দ্বিতীয় বছর থেকে করোনা ছবিটাই পাল্টে দেয়। তবু জমা পুঁজি থেকে চালিয়েছিলেন একটা বছর। এ বছর আর টানতে পারলেন না। রিসর্ট বিক্রির ওয়েবসাইটে তুলে দিলেন নিজের শখের রিসর্ট। লাভ চাই না। শুধু কেনার টাকাটুকু তুলে নিতে পারলে হল। এই কয়েকটি খণ্ডচিত্র আসলে গোটা পাহাড়ের হোটেল রেস্তোরা রিসোর্টের ব্যবসার সার্বিক চিত্র।
শতাধিক রেস্তোরাঁ তালিকায়
অন্তত ১০০ টি ছোট-বড় রেস্তোরাঁ, হোটেল এবং রিসর্ট, তরাই-ডুয়ার্স ও দার্জিলিঙে ক্ষতির ধাক্কা সামলাতে না পেরে বিক্রির তালিকাভুক্ত হয়েছে। কিছু হোটেল রয়েছে গ্যাংটকেও। পরপর তিন মরশুম নষ্ট হয়ে গিয়েছে। চতুর্থ মরশুম নষ্টের মুখে। কি করে ব্যবসা ধরে রাখবেন বুঝতে পারছেন না অনেকেই।
দাবি দাওয়াতে মিটবে কি ক্ষতি!
পর্যটন ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সামাল দিতে বেশকিছু দাবি-দাওয়া রেখেছেন সরকারের কাছে। কিন্তু তার সবই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। কতটা বাস্তবায়িত হবে নিজেরাও সন্দিহান। তবে তাঁরা হাল ছাড়ছেন না।
চা ঘুরলেও পর্যটন বিশ বাঁও জলে
উত্তরবঙ্গের তরাই-ডুয়ার্স-পাহাড়ে মূল অর্থনীতি চা এবং পর্যটন। আচমকা বৃষ্টি, চা শিল্পে খানিকটা ঘুরে দাঁড়ানোর রসদ যোগালেও পর্যটনের ঘুরে দাঁড়ানোর এখন কোনও রকম ইঙ্গিত নেই।
গাড়ির পর এবার হোটেল
২০২০ গরম ও বর্ষার ভরা মরশুমে মার খেয়েছে পর্যটন। পুজোর মরশুমে খানিকটা হাল ফেরার আশা থাকলেও, লকডাউনের ধাক্কা কাটিয়ে তেমন জমেনি তাও। অন্যদিকে ব্যবসা বন্ধ থাকলেও মাসিক কিস্তি জমা দিতে হয়েছে বহু হোটেল ব্যবসায়ী থেকে গাড়ি ব্যবসায়ী সকলকেই। প্রথম বছরের শুধুমাত্র গাড়ি বিক্রির হিড়িক ছিল। কোনও মতে দুই মরশুম সামাল দিলেও ফের নতুন করে ২০২১ এ করোনা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় হাল ছেড়ে দিয়েছেন অনেকেই।
টিঁকে থাকতে উপায় কি?
এখনও যারা টিঁকে থাকতে চাইছেন, তাঁদের অবস্থাও খুব একটা ভালো নয়। হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্রাভেল ডেভলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যাল জানান, পরিস্থিতি সত্যিই খুব খারাপ। পর্যটন দফতর কি ব্যবস্থা নেবে জানি না, কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই ভাল জায়গা নেই। অনেকেই ব্যবসা ছেড়ে দিতে চাইছে।