scorecardresearch
 

GTA Election Result: পাহাড়ে 'একক আধিপত্যের' দিন শেষ, GTA-তে একঝাঁক নয়া রেকর্ড

পাহাড়ে 'একক আধিপত্যের' দিন শেষ, GTA-তে একঝাঁক নয়া রেকর্ড। শান্তির পক্ষেই রায় পাহাড়বাসীরা। বিমল গুরুং জমানার স্থায়ী পরিসমাপ্তি। পাহাড়বাসীর রায়ে পুরস্কৃত অনিত থাপা-বিনয় তামাং। প্রথমবার ঘাসফুল ফুটল পাহাড়ে।

Advertisement
বিনয় তামাং ও অনিত থাপা বিনয় তামাং ও অনিত থাপা
হাইলাইটস
  • একক আধিপত্যের দিন শেষ পাহাড়ে
  • শান্তির পক্ষে রায় পাহাড়ের মানুষের
  • জিটিএ ভোটের ফলে একঝাঁক রেকর্ড

সমস্ত প্রতীক্ষার অবসান। শেষমেষ জিটিএ-র দখল নিয়েছে গত কয়েক বছর ধরে জিটিএ পরিচালনা করা অনিত থাপাই। তবে তাঁর সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে জিটিএ চালানো বিনয় তামাং আপাতত তৃণমূল শিবিরে। তিনি শিবির বদল করলেও জিতে অনিতের পাশেই জায়গা করে নিয়েছেন। ফলে পাহাড়ের মানুষ যে শান্তির পক্ষে রায় দিয়েছেন, তা এখন পরিষ্কার।

সেই সঙ্গে পাহাড়ে পর পর ভোটে পৃথক পৃথক দলকে বেছে চমকে দিয়েছেন পাহাড়ের বাসিন্দারা। প্রথমে বিধানসভা উপনির্বাচনে জিএনএলএফ জয়ী হওয়ার পর গত বিধানসভা নির্বাচনে জয় এসেছে জিএনএলএফ- বিজেপির ঝুলিতেও। এরপরই দার্জিলিং পুরসভা নির্বাচনে নতুন পার্টি হিসেবে প্রথম বার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে নেমে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জিতে গিয়েছেন একদা জিএনএলের নেতা অজয় এডওয়ার্ডের নেতৃত্বাধীন হামরো পার্টি। মনে করা হয়েছিল পাহাড়ে নতুন যুগের সূচনা হল। অন্তত আগামী কিছু বছর হয়তো দাপিয়ে বেড়াতে দেখা যাবে এই নতুন দলকে। যা অতীতে পাহাড়ে দেখা গিয়েছে।

কিন্তু জিটিএ নির্বাচন হতেই ফের ভোলবদল পাহাড়ের জনতার। এবারে হামরো পার্টি ৮ টি আসন জিতলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতার দৌড়ে অনেক পিছনে থেকেছেন। তার জায়গায় জয়ী হয়েছে একটি নতুন দল। বিজিপিএম ২৭ টি আসন জিতে ম্যাজিগ ফিগার ছাড়িয়ে গিয়েছে। দলের সভাপতি অনিত থাপা বিধানসভা নির্বাচনের আগে পুরনো গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার পুরনো পোশাক ছেড়ে তার নতুন দল গঠন করেছেন।

অন্যদিকে এবারই প্রথম জিটিএ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করল তৃণমূল। তারা ১০ টি আসনে প্রার্থী দিয়ে নিজেদের শক্তি যাচাই করতে গিয়ে রীতিমতো সফল বলা যায়। পাঁচটি আসনে জয় পেয়েছে তৃণমূল। ফলে আগামীতে পাহাড়ে যে ডিসাইডিং ফ্যাক্টর হতে চলেছে রাজ্যে ক্ষমতায় থাকা দলটি তা পরিষ্কার।

তৃণমূলের সঙ্গে সমসংখ্যক আসন পেয়েছে নির্দল। ৫ টি আসনে জয় এসেছে নির্দলের। ফলে কিছু ক্ষেত্রে যে মানুষ দলীয় রাজনীতি পছন্দ করছেন না, সেটাও উঠে এসেছে। এই এলাকাগুলিতে গত বেশ কিছু বছর থেকে অশান্তির বাতাবরণে কারও উপর ভরসা রাখতে পারেনি। ফলে এ দিকটিও ভাবাচ্ছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।

Advertisement
কুঠি
জিটিএ-সদর দফতর লালকুঠি

ফলে পাহাড়ে এখন মিশ্র রাজনীতির হাওয়া। একচ্ছত্র অধিপতি আর কাউকে চাইছেন না পাহাড়বাসী এটা পরিষ্কার। পুরসভায় যেখানে দায়িত্ব তুলে দিয়েছেন হামরো পার্টির হাতে, সেখানে বিজিপিএমকে জিটিএ দিয়ে পাহাড়বাসী এটা পরিস্কার করে দিয়েছেন সুভাস ঘিসিং, বিমল গুরুংদের জমানা এখন অতীত। ভুক্তভোগী পাহাড়বাসী একচ্ছত্র অধিপতি করে দেখেছেন। তাতে আখেরে ক্ষতি ছাড়া লাভ নেই। ফলে পাহাড়ে বহুদল থাকলে কারও একক মত চাপিয়ে দেওয়া যেমন সম্ভব নয়, তেমনি আলাদা আলাদা প্রশাসনে আলাদা আলাদা রাজনৈতিক দল থাকলে তাতে মতানৈক্য থাকতে পারে, অশান্তি কম হবে। যেটা গত কয়েক বছরে ভালই বুঝেছেন পাহাড়বাসী।

২০১৬ তে বিমল গুরুংয়ের নেতৃত্বে ধারাবাহিক হিংসার পর রাজ্য সরকার যখন একাধিক ধারায় মামলা করার পর বিমল পাহাড় ছেড়ে পালিয়েছিলেন, তখন রাজ্য সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে পাহাড়ে শান্তি ফেরাতে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন একদা বিমল অনুগামী বিনয় তামাং, অনিত থাপা। এই কয়েক বছরে পাহাড়ে হরতাল কালচার একেবারে উঠে গিয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, করোনা ছাড়া রাজনৈতিক কোনও সমস্যায় পড়তে হয়নি পাহাড়ের বাসিন্দাদের। ফলে এই শান্তির আবহাওয়া তারা আর বিঘ্নিত হতে দিতে চান না, তা পরিষ্কার করে দিয়েছেন একের পর এক ভোটের ফলে।

কী কী নতুন এবারের ভোটের ফলে?

১. তৃণমূলের জিটিএ-তে প্রথম পদক্ষেপ। ১০ টি আসনে প্রথমবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৫ টিতে জয়।

২. নতুন দল হিসেবে অনিত থাপার বাজিমাত। দার্জিলিং পুরসভায় বাতিল হলেও জিটিএতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা।

৩. ভোটে জেতার কয়েক মাসের মধ্যেই ফের পিছনের সারিতে চলে গেলেন হামরো পার্টি। অর্থাৎ দার্জিলিং বাদে সংগঠন এখনও তেমন মজবুত নয়। তাদের জেতা ৮ টি আসনের মধ্যে ৬ টিই দার্জিলিংয়ে।

৪. বিমল গুরুং জমানা প্রায় শেষের পথে।

৫. পাহাড়ে একচ্ছত্র সাম্রাজ্যের দিন শেষ।

৬. বিজেপি ও গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার ভোট বয়কট করে নিজেদের পাহাড়ের রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক করে ফেলল।

৭. শান্তি ফেরাতে সবচেয়ে সক্রিয় বিনয় তামাং-অনিত থাপা ভিন্ন দল হলেও দুজনেই পুরস্কার পেলেন পাহাড়ের মানুষের সঙ্গে থাকার।

৮. পুরভোটে দল জিতলেও হেরে গিয়েছিলেন হামরো পার্টির সভাপতি অজয় এডওয়ার্ড। জিটিএ-তে দাঁড়িয়ে নিজে জিতে দলে প্রতিপত্তি বাড়িয়ে নিলেন।

 

Advertisement