উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পুজোর কয়েকদিনে মৃত্যু হল শতাধিক রোগীর। এর মধ্যে শিশু রয়েছে ১৫ জন ও ২৬ জন মহিলা। তবে সব মিলিয়ে হাসপাতালের চিকিৎসকের অভাবের কারণকে দোষারোপ করেছে রোগীর আত্মীয়রা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি রোস্টার অনুযায়ী ডিউটি করেছে চিকিৎসকেরা।
চিকিৎসকের অভাবেই মত্যু !
দুর্গাপুজার আনন্দে যখন গোটা রাজ্যবাসী আনন্দে মাতোয়ারা তখন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে মৃত্যু একশোরও বেশি চিকিৎসাধীন রোগীর। অভিযোগ উঠেছে, পুজোর কদিনে হাসপাতালে চিকিৎসকের অভাবের কারণেই এত রোগীর মৃত্যু হয়েছে। যার ফলে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে রোগীর পরিজনদের মধ্যে।
চতুর্থী থেকে দশমী, মৃত ১১৮ জন
জানা গিয়েছে চতুর্থী থেকে দশমী পর্যন্ত উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে ১১৮ জনের। তবে মূল ছুটি ষষ্ঠী থেকে। আর ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত রোগী মৃত্যুর সংখ্যা ৮৯ জন। মৃতদের মধ্যে ১৫ জন শিশু এবং ২৬ জন মহিলা রয়েছে। পাশাপাশি দুর্ঘটনায় জখম হয়ে চিকিৎসাধীন ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। যদিও পুজোর কদিনের মধ্যে জ্বর ও শ্বাসকষ্টের ফলে পঞ্চমীতে একজন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। যদিও অন্যান্য রোগে পূজোর চারদিনে আটটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। জ্বর ও শ্বাসকষ্ট সহ বর্তমানে ৩৪ জন শিশু চিকিৎসাধীন রয়েছে। পাশাপাশি এদিন পর্যন্ত হাসপাতালে এক হাজার ৬৮ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে।
পুজোর কদিন হাসপাতালে ছিলেন না চিকিৎসকরা, অভিযোগ
প্রসঙ্গত, দুর্গাপুজো থেকে লক্ষ্মী পুজো পর্যন্ত উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসকরা পালা করে ছুটি নেন। সেই মতো পুজোর আগে থেকেই তৈরি করা হয় রোস্টার। কিন্তু খাতায় কলমে ওই রোস্টার থাকলেও পুজোর কদিন হাসপাতালে দেখা মেলে না সিনিয়র চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞদের। এবারেও রোস্টার তৈরি করা হলেও অভিযোগ দুর্গাপুজোর শুরু থেকে শনিবার পর্যন্ত দেখা মেলেনি কোনও চিকিৎসকের। যার জেরে পুজোর এই সময়টা হাসপাতালের গোটা চিকিৎসা পরিষেবার দায়ভার সামলে ছিল জুনিয়ার চিকিৎসক ও ইন্টার্নরা। তবে ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
মৃতদের আত্মীয়রা
শিলিগুড়ির বাগডোগরা বাসিন্দা মৃত রোগীর দিদি নাজিমা বেগম বলেন, "পুজোর সময় আমার দাদাকে হাসপাতালে ভর্তি করাই। দাদার শ্বাসকষ্ট ছিল। কিন্তু পুজোর কদিন দাদাকে কোনও চিকিৎসকই দেখেনি। বেডে ফেলে রাখা হয়েছিল। যার ফলে আজ দাদা মারা যায়। ওয়ার্ডে থাকা চিকিৎসকদের কিছু জিজ্ঞাসা করতে গেলেই তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছিল।" অপর এক মৃত রোগীর স্ত্রী রেখা দাস বলেন, "এক সপ্তাহ থেকে স্বামী ভর্তি। ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে রাখা হয়েছে। কিন্তু একজন চিকিৎসকও গত পাঁচদিনে দেখেনি। একজন চিকিৎসকও নেই।"
মৃতের সংখ্যা স্বাভাবিক, দাবি সুপারের
অন্যদিকে এই প্রসঙ্গে হাসপাতালের সুপার সঞ্জয় মল্লিক বলেন, "মৃতের সংখ্যা স্বাভাবিক। অন্যান্য বারের পুজো থেকে এবারের পুজোতে মৃত্যু বেশি হয়নি। অন্যান্যদিন হাসপাতালে যে পরিমাণ রোগীর মৃত্যু হয় তার চেয়ে বেশি হয়নি। আর পুজোর সময় চিকিৎসক ছিল না, অভিযোগ ঠিক নয়। নিয়ম করে যেসব চিকিৎসকদের ডিউটি থাকার কথা ছিল তারা সেইমতোই ডিউটি করেছে।"