দক্ষিণবঙ্গের অধিকাংশ জায়গায় যখন প্রবল গরম, তখন নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ায় বেশ রয়েছে উত্তরবঙ্গের পাঁচ জেলা। মাঝে মধ্যে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ খানিকটা বাড়লেও তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রির মধ্যেই রয়েছে। বিকেলের পর থেকে তাপমাত্রা নেমে ২০-২৪ ডিগ্রিতে থাকছে। ফলে দক্ষিণবঙ্গে যেখানে দাবদাহ থেকে বাঁচতে স্কুলগুলি বন্ধ রাখার সরকারি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সঙ্গত কারণেই, কিন্তু সেখানে উত্তরবঙ্গে আরামদায়ক আবহাওয়ায় কেন বন্ধ থাকবে স্কুল, তা নিয়ে ক্ষোভ দানা বাঁধছে উত্তরের শিক্ষা মহলে। পাশাপাশি এ বিষয়ে শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ শিক্ষা দফতরকে চিঠি দিয়ে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার আবেদন জানিয়েছেন। টুইট করেও তিনি বিষয়টি শিক্ষা দফতরের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করেছেন।
পাশাপাশি দক্ষিণবঙ্গকে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে জোর করে পৃথক যাত্রায় একই ফল করার বিরুদ্ধেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। টুইট করে তিনি লিখেছেন, "দক্ষিণবঙ্গে গরম পড়লে উত্তরবঙ্গে বন্ধ হয় স্কুল ,এই ধরনের প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের কারণে উত্তরবঙ্গে জন্ম নেয় আলাদা রাজ্যের দাবি।" তিনি তাঁর টুইটে মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে ট্যাগ করেছেন।
শিলিগুড়িতে ২৮ এপ্রিল সর্বোচ্চ ৩০ ডিগ্রি এবং সর্বনিম্ন ২৪.৭ ডিগ্রি তাপমাত্রা ছিল। জলপাইগুড়িতেও সর্বোচ্চ ৩০ এবং সর্বনিম্ন ২২ ডিগ্রির কাছাকাছি ছিল। কোচবিহারে ২৯ এবং ২২ ডিগ্রি ছিল। আলিপুরদুয়ার ও উত্তর দিনাজপুরও মোটামুটি একই রকম। পাহাড়ের দুই জেলা দার্জিলিং ও কার্শিয়াং অবশ্য এসব আলোচনার উর্ধ্বে। কিছুটা মালদা ও দক্ষিণ দিনাজপুরের কিছু এলাকায় তাপমাত্রা খানিকটা বেশি রয়েছে। তবে তাকে দাবদাহ বলা যায় না।
এখন রাজ্যের সব সরকারি স্কুল বন্ধ থাকবে ২ মে থেকে। কারণ? প্রবল গরমের কারণে গরমের ছুটি এগিয়ে আনা হয়েছে যে। শঙ্করবাবু জানিয়েছেন, করোনা আবহ কাটিয়ে দীর্ঘদিন পর মাত্র কদিন আগেই স্কুল খুলেছে। ফের মে মাসের শেষ থেকে বিভিন্ন স্কুলে এমনিতেই পূর্ব নির্ধারিত গ্রীষ্মাবকাশ রয়েছে। তাই কটা দিন যখন স্কুল খোলার সুযোগ পাওয়া গিয়েছে, তখন তা থেকে ছাত্রদের বঞ্চিত করা উচিত নয়। দক্ষিণবঙ্গের ক্ষেত্রে যা প্রাসঙ্গিক, তা উত্তরবঙ্গে কোনওভাবেই খাপ খায় না। পাশাপাশি তিনি বলেছেন, উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে মর্নিং স্কুল করে দিয়ে পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দেওয়া যেতে পারে। শিলিগুড়ি মহকুমাকে এই স্কুল বন্ধের আওতার বাইরে রাখার পক্ষেও তিনি প্রস্তাব দেন।
গত কয়েকদিনে দক্ষিণবঙ্গে যে প্রবল গরম পড়েছিল, তার রেশ পড়েছিল উত্তরবঙ্গের শুধু দুটো জেলাতে।মালদা এবং দক্ষিণ দিনাজপুরে। তাও মালদায় পারদ ৪১ ডিগ্রি ছুঁয়ে ফেললেও বালুরঘাটে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি ওঠেনি। আর বুধবার তো এই দুই শহরেও তাপমাত্রা ছিল ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে। এই কারণেই উত্তরবঙ্গের শিক্ষামহলেরও প্রশ্ন, কেন গরমের ছুটি এগিয়ে আনা হবে উত্তরবঙ্গের স্কুলেও। যেখানে গরমই কার্যত নেই, সেখানে শুধু শুধু এত ছুটি দেওয়ার কারণটা কী?
অনেকে এও বলছেন যে এখন ছুটি না দিয়ে, উত্তরবঙ্গে যদি সত্যি সত্যিই তীব্র গরম পড়ে কখনও, তখনই এই ছুটি দিক সরকার। উল্লেখ্য, জুলাই-আগস্টে বর্ষার সময় যদি আচমকা বৃষ্টি কমে যায়, তখনই উত্তরবঙ্গে মারাত্মক গরম পড়ার রেওয়াজ রয়েছে। তাপমাত্রা কখনও কখনও চল্লিশ ডিগ্রির কাছাকাছি উঠে যায়। তখন ছুটি দিলে তা যুক্তিযুক্ত হবে বলে মনে করছেন অনেকে।