scorecardresearch
 

"মা কালী সব ধর্মের ঊর্ধ্বে", এখানকার কালীপুজোর উদ্যোক্তা মুসলিমরাই

মা কালী সর্ব ধর্মের উর্ধ্বে। আমরা ভেদাভেদ মানি না। কয়েক ঘর হিন্দুকে সঙ্গে নিয়ে উপোস করে মায়ের পুজো করেন মুসলিমরা।

মুসলিমদের কালীপুজো মুসলিমদের কালীপুজো
হাইলাইটস
  • এই কালীপুজোর আয়োজক মুসলিমরাই
  • সঙ্গে থাকেন হিন্দুরাও, তবে তাঁরা এখানে সংখ্যালঘু
  • কালী মা ধর্মের ঊর্ধে, দাবি আয়োজকদের

যখন দুর্গাপুজাকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় বৈষম্যে উত্তাল প্রতিবেশী বাংলাদেশ, তখন "মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম"-কে থিম করে মায়ের পুজো হয় তোর্সাপাড়ের বৃত্তান্তে। এখানে নেই কোনও ধর্মীয় ভেদাভেদ। এখানে মায়ের পুজোর আয়োজক সাহিরুদ্দিন মিয়াঁ, মহাবুল আলম। সাহিরুদ্দিনের সাথে পুজোয় হাত মেলায় গোপাল অধিকারী, জয়ন্ত বর্মনরা। 

উত্তাল তোর্সা নদীতে এক সময় পাকা সেতু ছিল না। ছিল খেয়াঘাট। পূর্ব কাঁঠালবাড়ি মৌজার প্রায় ১৫০টি মুসলিম পরিবার তোর্সায় নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করত। ২০০৫ সালে বাম আমলে শিলতোর্সায় পাকা সেতু চালুর পর ওই মুসলিম পরিবারগুলো মাঝির পেশা বদলে এখন তোর্সা নদী থেকে বালি পাথর তুলে জীবিকা নির্বাহ করছে।


এলাকার কয়েকটি হিন্দু পরিবার ও পেশা বদল হওয়া ওই মুসলিম পরিবারগুলির সন্তানসন্ততিরাই তোর্সা নদীর ধারে রাজিব গান্ধী হাটে সম্প্রীতির এই কালীপুজো করে আসছে। পুজোয় উপোস থাকেন এলাকার মুসলিম পরিবারের এক কর্তা। আর মুসলিম ছেলেমেয়েদের সঙ্গে পুজোর সমস্ত আয়োজনে হাত লাগায় হিন্দু পরিবারগুলির সন্তানরাও।


তোর্সা ইউনাইটেড ক্লাবের যুগ্ম কোষাধ্যক্ষ মহাবুল আলম বলেন, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। আমরা এলাকার লোকজন এভাবেই বিষয়টিকে দেখি। তাই আমাদের ক্লাবের কালীপুজোর সমস্ত আয়োজনে আমরাই থাকি। পুজো কমিটির আর এক যুগ্ম কোষাধ্যক্ষ গোপাল অধিকারী বলেন, আমরা উৎসবে ধর্মের বেড়া মানি না। তাই এলাকার হিন্দু-মুসলিম মিলে আমরা বহু বছর ধরে তোর্সা নদীর ধারে এই কালীপুজো করে আসছি। তোর্সা ইউনাইটেড ক্লাবের সভাপতি সহিরুদ্দিন মিঞা বলেন, জগৎজননী মা সমস্ত ধর্মের উর্ধ্বে। উৎসবের কোন গণ্ডি হয় না। উৎসব তো সবার জন্য।


তোর্সা ইউনাইটেড ক্লাবের সর্বধর্মের মানুষের এই কালীপুজো উপলক্ষ্যে প্রতি বছর তোর্সা নদীর ঘাটে বিরাট মেলা বসে। তাতে ঢল নামে মানুষের। কিন্তু গত বছরের মতো এবছরও কোভিডের কারণে মেলা হচ্ছে না। এ বছরও মেলা না হওয়ায় হতাশ গ্রামের মানুষ। বর্ধিষ্ণু গ্রামে পুজোয় অবধারিতভাবেই আলোর রোশনাই, ঢাউস মন্ডপ বা থিমের চমক নেই। চিরাচরিত সাবেকিয়ানা ও আন্তরিকতার সঙ্গে এখানে কালীপুজো হয়।
শিলবাড়ি হাট উচ্চবিদ্যালয়ের পরিচালন কমিটির সভাপতি তথা শিলবাড়ি হাট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নিখিল পোদ্দার বলেন, রাজিব গান্ধী হাটে তোর্সা নদীর ধারে ওই হিন্দু মুসলিমের কালীপুজোর জন্য আমাদের গর্ব হয়। কালীপুজো উপলক্ষ্যে সম্প্রীতির অনন্য নজির তৈরি করেছে তোর্সা  ইউনাইটেড ক্লাবের সদস্যরা।