Beautiful Destination of Kalimpong : তুষারপাত হয়েছে বড়দিনে। ফের তুষারপাতের সম্ভাবনা পাহাড়ে। এমনিতেই এই সময় হাউসফুল থাকে। বছর শেষে পাহাড়ে তুষারপাতের গন্ধ পেতেই মোটামুটি উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গ সবাই এখন পাহাড়মুখী। কিন্তু সমস্যা হল বরফ পড়বেই এমন কোনও গ্যারান্টি কিন্তু নেই। অর্থাৎ ৩-৪ দিন থাকলেন হয়তো তুষারপাত হল না। তাহলে? তাহলে আর কী, তুষারপাত ছাড়াও পাহাড়ে ঘোরার অনেক জায়গা আছে। তবে দার্জিলিংয়ে যদি জায়গা না পান, তাহলে কি মন খারাপ? কোনও দরকার নেই। সবাই মিলে দার্জিলিং ছোটারও কোনও দরকার নেই। হাতে আছে বেশ কিছু বিকল্প। সেটা কিন্তু দার্জিলিংয়ের চেয়েও সুন্দর। দার্জিলিংয়ের সঙ্গে একযোগে উচ্চারণ হয় সেই কালিম্পংয়ে। আসুন আপনাকে জানিয়ে দিই পাহাড়ের কোলে লুকিয়ে থাকা কয়েকটি অফবিট ডেস্টিনেশন। যা হাতের কাছেও রয়েছে আবার খরচও কম।এই জায়গাগুলির নাম ভ্রমণপিপাসুদের সিংহভাগই জানেন না। কথা দিতে পারি, একবার গেলে আর দার্জিলিং যেতে মন নাও চাইতে পারে। তবে যান আর না যান, হাতের পাঁচ জেনে রাখতে ক্ষতি কী?
পাবং
কাঞ্চনজঙ্ঘার কোলে কালিম্পং জেলার পাবং গ্রাম হাতের কাছেই। পাইন গাছে ঘেরা জঙ্গল। পাহাড়ি শান্ত ছোট্ট জনপদে নিজের আস্তানায় বসেই ঝকঝকে আকাশ, আর তুষারাবৃত কাঞ্চনজঙ্ঘা নজরে পড়বে। কালিম্পং শহর থেকে অনেকটা উঁচুতে হওয়ায় গরমের সময়ও হিমেল হাওয়া বয়। এ সময় এলে মোটা শীতপোশাক ছাড়া টিঁকতে পারবেন না সমতলের লোকজন। প্রজাপতিপ্রেমীরা অফবিট ট্রেকের জন্য এই গ্রাম পছন্দ করেন। পাশাপাশি প্রচুর রংবাহারি ফুল ফোটে। এখান থেকে কাছেই লাভা, লোলেগাঁও, রিশপ, চারখোল। এই এলাকা অত্যন্ত নির্জন। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে পাবংয়ের দূরত্ব প্রায় ৭৫ কিলোমিটারের মতো। সময় লাগে তিন থেকে সাড়ে ঘণ্টার মতো। এখানে থাকার জন্য হোম-স্টেই একমাত্র উপায়। কালিম্পং শহর থেকে দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার। খরচ সাধারণ হোমস্টের মতোই।
বিদ্যাং ভ্যালি
নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ভরা বিদ্যাং ভ্যালি কালিম্পং থেকে মাত্র ১৭ কিলোমিটার দূরত্ব। চারিদিকে শুধু সবুজেরই নানা শেড। চারদিক পাহাড় ঘেরা জনপদের মাঝখান দিয়ে নেমে গিয়েছে রেলি নদী। গোটাটাই মেঘেদের রাজ্য। যাঁরা মংপুর কাছাকাছি থাকতে চান কিন্তু জায়গা পাচ্ছেন না, তাঁরা বিদ্যাং ভ্যালিতে থাকতে পারেন। এখান থেকে কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত গৌরীপুর হাউস, মংপু কাছেই। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে বিদ্যাং ভ্যালির দূরত্ব প্রায় ৮৮ কিলোমিটার। সরাসরি বিদ্যাং ভ্যালিতে যেতে পারেন, নইলে মংপু পর্যন্ত গিয়ে আলাদা গাড়িও নিতে পারেন। খরচ মাথাপিছু গড়ে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা।
রিকিসুম
রিকিসুম ফুলের উপত্যকা। পাইন গাছের জঙ্গল এই এলাকার ট্রেডমার্ক। তার সঙ্গে জানা-অজানা রঙিন ফুলের জগতে ২-৩ দিন কোথা থেকে কেটে যায়, বোঝা যায় না। মাঝে মধ্যে মেঘ এসে ঢেকে দিয়ে যায়। আকাশ পরিষ্কার থাকলে টাইগার হিলের চেয়েও সুন্দর সূর্যোদয়ের দৃশ্য দেখতে পেতে পারেন। সুযোগ মিলবে। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে কালিম্পং, আলগাড়া হয়ে রিকিসুম পৌঁছতে হবে। দূরত্ব ৯০ কিলোমিটার।
গীতখোলা
যেদিকে তাকাবেন, শুধু ঝরনা আর ঝরনা। এ এক অদ্ভুত অনুভূতি। পাইনের জঙ্গল ঘেরা জনপদে সামান্য কিছু জনবসতি এলাকার সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে। এ জীবনে একবার গীতখোলা না গেলে অনুশোচনা থেকে যাবে। কালিম্পংয়ের এই পাহাড়ি জনপদের নামকরণ হয়েছে এর প্রাকৃতিক সুরমূর্চ্ছনার জন্য। এখানে পৌঁছে মনে হবে, চারদিকে যেন সুর ঝংকার বাজছে।চা থেকেই এই নাম। গোটা রাস্তা জুড়ে সবুজ চা বাগান আর পাখির কূজন। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে গীতখোলার প্রায় ৮০ কিলোমিটার। ভাড়া গাড়িতে ওদলাবাড়ি, পাথরঝোরা হয়ে সহজে পৌঁছে যেতে পারবেন।
বড়ামানঝিন
কালিম্পংয়ের ট্রেডমার্ক পাইনের জঙ্গলের মধ্য়ে আরও একটি মন হারানো জনপদ বড়ামানঝিন। বছরভর এখানেও বিরাজ করে কনকনে ঠান্ডা। এখানে সব সময় কুয়াশা ভেসে বেড়ায়। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত প্রতি মুহূর্তে নিত্যনতুন দৃশ্যের সূচনা করে। এখানে দাঁড়িয়ে নীচে গোটা ডুয়ার্স দেখা যায়। স্বাধীন ও মুক্ত জীবন কাটানো এলাকা থেকে ফিরতে মন চাইবে না। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে বারামানজিন গ্রামের দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার। সেখান থেকে ওদলাবাড়ি, পাথরঝোরা হয়ে পাহাড়ি পথ ধরে সহজে পৌঁছে যেতে পারবেন। গীতখোলা থেকে কাছেও।