ধসে মৃত্য়ু, আতঙ্ক
বুধবার রাতে ধস নামে সেবকে মৃত্যু হয়েছে এক সেনা জওয়ানের। গুরুতর জখম দুজন। গত দু'বছর ধরে সেবক পাহাড়ে ধসের পরিমাণ বেড়ে চলেছে। বৃহস্পতিবার সেবক কালীবাড়ির কাছে একটি অটোর উপর পাথরের চাঁই এসে পড়ে গুরুতর জখম হন অভিযাত্রীরা। পরে বেশি রাতে হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
যানজট যন্ত্রণা
বুধবার রাতেই বিশাল ধস নামে। যাতে কালিম্পং এবং সিকিমের যোগাযোগ শিলিগুড়ির সঙ্গে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। প্রায় এক প্রকার বহির্জগৎ বিচ্ছিন্ন হয়েছিল ১০ ঘন্টা। তারই মাঝে সামান্য জায়গা করে কোনও মতে একমুখীভাবে যান চলাচল শুরু হয়।
ধসের পরিমাণ বেড়ে চলেছে
গত কয়েক বছর ধরে ধসের পরিমাণ বেড়েছে। এমনিতে বর্ষার সময় পাহাড় বিপজ্জনক। তার উপর সেবক, কালিম্পং এলাকার যে পাহাড়, তা পাললিক শিলা দ্বারা গঠিত এবং নবীন পাহাড় বলে ভূগোলবিদরা জানিয়েছিলেন। ফলে এখনও পর্যন্ত ইস্পাত কঠিন হয়ে পড়েনি পাহাড়ের পাথরগুলি। যার ফলে প্রবল বর্ষণ কিংবা খননকার্য লাগাতার চললে দুর্বল হয়ে পড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের একাংশ মতামত দিয়েছিলেন।
আগামী কয়েক বছরে আরও বাড়বে ধস
তিস্তা লোয়ার ড্যাম প্রজেক্ট নিয়ে এর আগে মামলা আদালতে পৌঁছেছিল। তার উপর সেবক থেকে সিকিমের রংপো পর্যন্ত পাহাড়ের ভিতর টানেল কেটে রেলপথ তৈরি করার জেরে ভঙ্গুর হয়ে যাচ্ছে পাহাড় বলে অভিযোগ বিশেষজ্ঞদের একটা বড় অংশের। ফলে আগামী কয়েক বছরের পরিমাণ আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
বিপজ্জনক পাহাড়
যদিও সম্প্রতি দু'বছর আগে একটি বাড়ি ধসে পড়ে মৃত্যুর ঘটনার পর ফের মৃত্যু হল আরেকজনের। প্রাণহানির সংখ্যা কম হলেও সম্পত্তি হানি এবং সর্বস্বান্ত হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে বারবার। পাশাপাশি গোটা পাহাড়ি বিপজ্জনক জায়গায় রয়েছে।
কোথায় ধস নামবে বোঝা যাচ্ছে না
সিকিম এবং কালিম্পং এর যোগাযোগ এর প্রধান রাস্তা ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক-এর উপর সেবক থেকে তিস্তা বাজার পর্যন্ত প্রায় ৩২ কিলোমিটার রাস্তা বরাবরই ধস প্রবণ। তবে আগে কয়েকটি বিশেষ এলাকায় ঘোষণা করা থাকতো। ফলে সেইটুকু এলাকায় সাবধানে যাতায়াত করলে হয়ে যেত। তবে ধসের এলাকা অনেক বেড়েছে। সম্প্রতি সেতিখোলা, ২৯ মাইল, কালিঝোরা সহ বিভিন্ন এলাকায় ধস নামলে তার জন্য প্রস্তুতি রাখা যেত। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে আগাম প্রস্তুতি রাখা যাচ্ছে না। যে কোন জায়গায় ধস নেমে যাচ্ছে।
স্থায়ী সমাধান দাবি
এলাকার সঙ্গে যুক্ত যাদের রুটিরুজি, তাঁদের অনেকেই সরকারের কাছে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা এবং স্থায়ী সমাধান চাইছেন। হিমালায়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্রাভেল ডেভলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যাল জানিয়েছেন, সময় এসেছে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের সমানভাবে উদ্যোগে স্থায়ী সমাধান করার। অন্যথায় অত্যন্ত দেরি হয়ে যেতে পারে।
তিস্তার জলে চাপ বাড়ছে পাহাড়ে
পাশাপাশি এবার এই প্রথম তিস্তার জল উঠে এসে পাহাড়ের রাস্তায় উপচে পড়েছিল। যা এর আগে কখনও ঘটেনি। তিস্তার জল আটকে রাখার ফলে পাহাড়ের দুদিকের দেওয়ালে চাপ পড়ছে। প্রবল চাপ সৃষ্টি করছে যা আগামীতে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলতে পারে।
রেল প্রকল্প চলাকালীন ঝুঁকি বেশি
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের অধ্যাপক ডঃ সুবীর সরকার একটি বিবৃতিতে জানিয়েছেন, এমনিতেই দার্জিলিংয়ের পাহাড় ভঙ্গুর। তার ওপর তার স্বাভাবিক জলপ্রবাহ আটকে দিয়ে পাহাড়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। প্রকল্প চলাকালীন ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।
পরে প্রবণতা কমবে, রক্ষক এখন গাছই
প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে গেলে আবার ধীরে ধীরে তার স্বাভাবিক হয়ে যেতে থাকবে। আগামী কয়েক বছর অত্যন্ত স্পর্শকাতর থাকবে তবে একটাই আসার কথা দার্জিলিং পাহাড়ের প্রত্যেক জায়গাতেই অত্যন্ত বেশি গাছ রয়েছে যেগুলি পাহাড় কে কিছুটা হলেও রক্ষা করছে।