গত শতাব্দীর পাঁচের দশকে, তখন দুশো বছরের ব্রিটিশ পরাধীনতা এড়িয়ে সবে আনকোরা স্বাধীনতা উপভোগ করছে ভারতবাসী। সেই সময় আজ থেকে প্রায় সত্তর বছর আগে ইংরেজ চা বাগান মালিকদের হাত ধরেই চালু হয়েছিল। আজও তা স্বমহিমায় বিদ্যমান। দার্জিলিং থেকে দুর্গম থেকে দুর্গম পাহাড়ি পাকদণ্ডি পথ বেয়ে সান্দাকফু যেতে হলে এই হেরিটেজ হয়ে যাওয়া গাড়িগুলিতে চড়ার সুযোগ পাবেন। ঐতিহ্যবাহী এই ল্যান্ডরোভার গাড়িতে চাপলেই পয়সা উসুল। লাক্সারি গাড়ির কমফোর্ট নয়, ঐতিহ্য আর ইতিহাসের সঙ্গে যদি সখ্যতা ও ভালবাসা থাকে, তাহলেই চড়ুন এই ল্যান্ডরোভারে। যা শুরুর দিন থেকে চলছে তো চলছেই।
অ্যাডভেঞ্চার টুরিজম যাঁরা পছন্দ করেন, তাঁদের কাছে এটা স্বর্গ। ল্যান্ডরোভারকে পর্যটকদের সামনে তুলে ধরতে বিশেষ জোর দিয়েছে জিটিএ। পথে নেমে পাখি দেখা, ছবি তোলা। সব মিলিয়ে মনে হবে যেন স্বর্গে আছি।
ইংল্যান্ডে তৈরি ল্যান্ডরোভারের প্রথম সিরিজের পাঁচটি গাড়ি রয়েছে দার্জিলিংয়ে। দ্বিতীয় সিরিজেরও ছ’টি গাড়ি রয়েছে। ঐতিহ্য বজায় রেখেই আজও সেসব চলছে। আধুনিক অন্য গাড়ির সঙ্গে এগুলি দিব্যি চলছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে।বিশেষজ্ঞদের দাবি, প্রথম-দ্বিতীয় সিরিজের যেসব ল্যান্ডরোভার রয়েছে দার্জিলিংয়ে, সেগুলির আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি করলে কোটি কোটি টাকা দাম উঠবে। এর প্রাচীণতাই এর দামের কারণ। এত পুরনো অথচ সচল ল্যান্ডরোভার, গোটা পৃথিবীতে সেভাবে কোথায় আছে তা জানা যায় না। ফলে এগুলি ভিনটেজও বটে।
বর্তমানে মানেভঞ্জন থেকে সান্দাকফু ও ফালুট রুটে ল্যান্ডরোভারে সাফারির বন্দোবস্ত করা আছে। এ ছাড়া ঘুম স্টেশনেও দেখা মিলবে ঐতিহ্যবাহী এই গাড়িটির। ঘুম থেকে তাকদা ও বিজনবাড়ি রুটেও ল্যান্ডরোভার চলে। আগে প্রায় ৭০টির মতো ছিল। একসময় দার্জিলিংয়ের পাথুরে রাস্তায় জিপ আর ল্যান্ডরোভার ছাড়া সেভাবে অন্য গাড়ি চলত না। ফলে ল্যান্ডরোভারের চাহিদা ছিল দারুণ। পরবর্তীকালে যন্ত্রাংশ না মেলায় পাহাড়ের গাড়ি মালিকদের অনেকেই ল্যান্ডরোভার ধরে রাখতে পারেননি। কেউ কেউ সেগুলিকে আধুনিক গাড়ির রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু অনেক ঝড়-ঝঞ্ঝা সত্ত্বেও কিছু ব্যক্তি পরিবারের সদস্য হিসাবেই আগলে রেখেছেন ৭০ বছর পেরনো ল্যান্ডরোভার! এই গাড়ি তাদের কাছে গর্বের অতীত বয়ে আনে। তাই বিক্রি করে নতুন গাড়ি আনেন না।