দার্জিলিংয়ের (Darjeeling) সবচেয়ে জনপ্রিয় ভিউ পয়েন্ট হল টাইগার হিল (Tigar Hill)। রাতের অন্ধকার থাকতে উঠে গিয়ে রেলিং ধরে খাদের ধারে দাঁড়িয়ে দুচোখ ভরে কাঞ্চনজঙ্ঘার পিছন দিয়ে সূর্যোদয় (Sun Rise ) দেখার অনুভূতি, যিনি দেখেননি তাঁকে বলে বোঝানো যাবে না। যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা বলেন, এ এক অনন্য অনুভূতি যাকে বলে View Of Lifetime. এ দৃশ্য দেখতেই যুগে যুগে দার্জিলিং ছুটে এসেছেন মানুষ। কিন্তু মঙ্গলবার থেকে সেই অনুভূতি ধাক্কা খেলেও খেতে পারে। পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে তাতে সেই সম্ভাবনাই জোরালো হচ্ছে। সৌজন্যে টাইগার হিলে প্রবেশ মূল্য (Entry Fee Price) বৃদ্ধি। পর্যটকদের ক্ষোভ তো ছিলই, এবার বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন দার্জলিংয়ের টুরিস্ট গাড়ির (Darjeeiling Tourist Taxi Drivers) চালকরা। সোমবার ১৭ অক্টোবরের মধ্যে গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন(GTA)-র তরফে কোনও স্থায়ী সমাধান ঘোষণা না করা হলে মঙ্গলবার থেকে তাঁরা কোনও পর্যটককে টাইগার হিল নিয়ে যাবেন না বলে হুমকি দিয়েছেন। ফলে মঙ্গলবার থেকে বঞ্চিত হতে পারেন পর্যটকরা।
আরও পড়ুন: বাইক নিয়ে সিকিম ভ্রমণে, দুর্যোগে গভীর খাদে পড়ে মৃত মালদার ছাত্র
২ বছর পর স্বাভাবিক হতেই ফের ছন্দপতন
টাইগার হিল ও লাগোয়া এলাকার পর্যটন থেকে সূর্যোদয় দেখার উপরই এই নির্দিষ্ট এলাকার পর্যটন নির্ভরশীল। আগে টাইগার হিলের পুরোটাই দেখভালের দায়িত্ব ছিল জিটিএ-র হাতে। ২০১৭ সালে জিটিএর পর্যটকদের কাছ থেকে টাইগার হিলের প্রবেশ মূল্য নেওয়া বন্ধ করে দেয়। পরে লকডাউন পরবর্তী পর্যায়ে টাইগার হিল জিটিএ-র পাশাপাশি পর্যটন দফতরও দেখভাল শুরু করে। লকডাউনের সময়ে দীর্ঘদিন টুরিজম বন্ধ ছিল। এ বছরই স্বাভাবিক ছন্দ ফিরেছে পাহাড়ে। এবার পর্যটন দফতরের ফিজ তো রয়েইছে, সঙ্গে বন দফতরও বাড়তি টাকা আদায় করছে পার্কিং ফি বাবদ করছে বলে অভিযোগ। এতে সমস্যায় পড়তে হয় গাড়িচালকদের।
কী অভিযোগ?
পর্যটকদেরকে টাইগার হিল নিয়ে গেলে পার্কিংয়ের জন্য ট্রাফিক পুলিশকে দিতে হয় গাড়িপিছু ১০ টাকা। এছাড়া ২০ টাকা পর্যটন দফতরকে এবং ৫০ টাকা বন দফতরকে দিতে হয়। পাশাপাশি পর্যটকদের টাইগার হিলে যাওয়ার জন্য মাথাপিছু ৭০ টাকা এবং গাড়িপিছু ১০ টাকা গুনতে হয়। এতগুলি ফি দেওয়ার পর তারপর ছাড়পত্র মেলে সেখানে প্রবেশের। তারপর যদি আকাশ মে্ঘলা থাকে, তো জলে গেল গোটা টাকাটাই। কুয়াশায় ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘার কণামাত্র দেখা মেলে না। ফলে এতগুলি টাকা খরচ করে মন খারাপ হয় পর্যটকদেরও। সঙ্গে চালকদেরও। গোটাটাই যেখানে অনিশ্চিত সেখানে এত জায়গায় টাকা নিলে বাড়তি চাপ হয়ে যায় বলে মনে করছেন চালকরা।
আরও পড়ুনঃ এবার টয়ট্রেনে বসেই চা-জলখাবার সঙ্গে আরও বেশি পাহাড় দর্শনের সুযোগ
কী বলছেন চালক ও প্রশাসন?
গোর্খা গাড়িচালক ইউনিয়নের সম্পাদক সূরজ থাপার অভিযোগ, টাইগার হিলে পর্যাপ্ত গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা নেই। পাশাপাশি রাস্তা খারাপ। সারাক্ষণ যানজট থাকে। অনেকেই সময়মতো সূর্যোদয় বা সূর্যাস্ত দেখতে যেতে পারেন না। তাঁদের দাবি, পর্যটন ও বন দফতর অতিরিক্ত টাকা নেওয়া বন্ধ না করলে মঙ্গলবার থেকে চালকরা টাইগার হিলে বন্ধ করে দেবেন।দার্জিলিংয়ে জেলাশাসক তথা গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (জিটিএ) ভারপ্রাপ্ত প্রধান সচিব পুন্নমবালম এস জানিয়েছেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন। তবে সোমবারের মধ্যে সরকারের তরফে কোনও পদক্ষেপ না করা হলে মঙ্গলবার গাড়ি চালাবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন চালকরা।