scorecardresearch
 

MD Manik Malbazar: 'বড় বড় বোল্ডার ভেসে আসে,' হড়পা বানের হাড়হিম মুহূর্তটা বললেন মানিক

MD Manik Malbazar: পুজোর বিসর্জন দেখতে গিয়ে পরিত্রাতা হয়ে উঠলেন মালবাজারের মহম্মদ মানিক। জলপাইগুড়ির মালবাজারে মাল নদীতে বিসর্জনের সময় আচমকা হড়পা বানে ভেসে একাধিক মৃত্যু হয়েছে। তবে তার চেয়ে বেশি মানুষকে বাঁচিয়ে এখন 'হিরো' মানিক। দর্শকের ভূমিকা থেকে আচমকা তাঁর ভূমিকা বদলে গিয়েছিল ত্রাতায়। আজতক বাংলাকে জানালেন হাড়হিম অভিজ্ঞতা।

Advertisement
'বড় বড় বোল্ডার ভেসে আসে,' হড়পা বানের হাড়হিম মুহূর্তটা বললেন মানিক 'বড় বড় বোল্ডার ভেসে আসে,' হড়পা বানের হাড়হিম মুহূর্তটা বললেন মানিক
হাইলাইটস
  • "হরপা বানের সময় বড় বোল্ডার ভেসে আসে
  • যে কোনও সময় মরে যেতে পারতাম
  • কিন্তু তখন মাথায় আসেনি।

MD Manik: নিছকই এলাকার পুজোর বিসর্জন (Durgapuja Immersion) দেখতে গিয়েছিলেন। প্রতিবারই যান এবারও তাই অন্যথা করেননি। পুজো মণ্ডপেও যান। বিসর্জন দেখাও কোনওদিনই বাদ যায়নি। এবার গিয়ে শুধু মিনিটখানেক হল দাঁড়িয়েছিলেন। তারপর আচমকা দুর্ঘটনা। জল বাড়তে শুরু করে মাল নদীতে (Mal River)। হড়পা বানে (Flash Flood) চোখের সামনে দিয়ে ভেসে যাচ্ছিল বাচ্চা-বুড়ো-মহিলা। আর দু'বার ভাবেননি। মোবাইলটা বন্ধুর হাতে দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। একে একে শিশু-বৃদ্ধ-মহিলা সহ প্রায় ৯-১০ জনকে নিরাপদে ফিরিয়ে দিয়েছেন পরিবারের কাছে। তারপরও আক্ষেপ বাকিদের ফেরাতে পারলেন না। আজতক বাংলার তরফে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কী বললেন শুনুন তাঁর জবানেই।

মহম্মদ মানিক, পেশায় লোহার গ্রিল মিস্ত্রি ও সমাজকর্মী, (বাড়ি মালবাজার শহর লাগোয়া পশ্চিম তেশিমলায়)

বন্ধু স্থানীয় মহসিন আলিকে নিয়ে সেদিন সন্ধ্যায় জলপাইগুড়ির (Jalpaiguri) মালবাজারের (Malbazar) মাল নদীতে যাই ঠাকুর ভাসান দেখতে। প্রতিবারই যাই। যবে থেকে জ্ঞান হয়েছে উৎসবে শামিল হই। সেদিন কয়েক মিনিট হল সেখানে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। আচমকা শুনি সবাই ছুটোছুটি করছে। এলাকায় জন্ম থেকে বড় হয়েছি, বুঝতে পারি হড়পা বান আসছে। প্রথমে ভেবেছিলাম সবাই তাড়াতাড়ি পাড়ে উঠে যাবে। কিন্তু কয়েক মিনিটের মধ্যেই জল বেড়ে যায়। অনেকে আটকে পড়েন। জলের তোড়ে চোখের সামনে দিয়ে প্রচুর লোক ভেসে যাচ্ছে দেখি। বুঝতে পারি এরা কেউ সাঁতার জানে না।

মুহূর্তে ঝাঁপিয়ে পড়ি নদীতে

সময় নষ্ট না করে ঝাঁপিয় পড়ি নদীতে। জলের তোড়ে তখন নিজের ব্যালেন্স রাখা যাচ্ছিল না। পাকা সাঁতার জানা না থাকলে নিজেকেই বাঁচানো সম্ভব হত না। এরপর পরপর এক একজন করে যে কজনকে পারি পাড়ে তুলে আনি।  আরও অনেককে ভেসে যেতে দেখি। কিন্তু তাঁদের তোলার সময় পাইনি। আরও আমার মতো কয়েকজন লাফিয়ে পড়েছিল, তাঁরাও কাউকে কাউকে বাঁচিয়েছে। আবার অনেকের পরিবারের লোকজন তাঁদের লোককে বাঁচিয়েছে। আবার যাঁরা সাঁতার জানে তাঁরা সবাই বেঁচে গিয়েছে। কিন্তু যাঁরা সাঁতার জানে না, তাঁদের মধ্যে সবাইকে বাঁচানো যায়নি।

Advertisement

বোল্ডার ভেসে আসলেই মুশকিল ছিল

পরে যখন ঘটনার রেশ থেমে যায়, পাড়ে উঠে আসি। তারপর মনে পড়ে এমন হড়পা বানে তো বড় বড় বোল্ডার পাহাড় থেকে নেমে আসে। সেগুলো একটার বাড়ি মাথায় লাগলে তো বটেই হাত-পায়ে লাগলেও  ভেঙে যায়। তখন আর সাঁতার কাটা যায় না। তেমন কিছু হলে নিজেরও প্রাণ চলে যেতে পারতো। কিন্তু সেটা পরে মনে হয়েছে। ঘটনার আকস্মিকতায় তখন কিছুই মাথায় ছিল না। মাল নদীর মতো খরস্রোতা নদীতে বড় বড় পাথর থাকে। আমি মাল নদী থেকে শুরু করে শিলিগুড়ির মহানন্দা সমস্ত নদীতে সাঁতার কেটেছি। তাই আর কাল বিলম্ব করিনি। সরাসরি ঝাঁপ দিয়েছি। নদীতে সামনে যাকে পেয়েছি একে একে টেনে নিয়ে গিয়েছি। নদী বক্ষের শুকনো অংশে তুলেছি। কতজনকে উদ্ধার করতে পেরেছি গুনিনি। সংখ্যাটা ১০ জন হবে।

চোখে জল চলে এসেছিল

দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখেছি ওরা একে একে মাল নদীর অন্য প্রান্ত দিয়ে সুরক্ষিতভাবে ফিরছেন। চোখে জল চলে আসে। আমি শেষ পর্যন্ত সেখানেই দাঁড়িয়েছিলাম। অপেক্ষা করছিলাম, যদি কোনও প্রয়োজনে কাজে আসতে পারি। আরও যদি কাউকে ভেসে যেতে দেখি। তাহলে বাঁচাতে পারব। প্রবল স্রোতের মধ্যে আমারও ডান পায়ে আঘাত লেগেছে। তবে তা এখন কিছুই নয় বলে মনে হচ্ছে।

বাকি কিছুই মাথায় নেই

তখন সেখানে কী ঘোষণা হচ্ছিল, পুলিশ-প্রশাসন ছিল কি না, সে সব কিছুই মাথায় নেই। ঘটনার ঘোর এখনও কাটেনি। শুধু চোখ বুজলেই ভেসে যাওয়া মানুষের আর্ত চিৎকার শুনতে পাচ্ছি। এমন ঘটনা যেন আর না হয়। এই প্রার্থনাই করি।

 

Advertisement