বন্দিদের পৌষমাস
প্রবাদ আছে, কারও সর্বনাশ আর কারও পৌষমাস। এ কথা এখন রাজ্যের বিভিন্ন সংশোধনাগারের কয়েক হাজার বন্দিদের ক্ষেত্রে অক্ষরে অক্ষরে ফলছে। করোনা আবহে যখন বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে, অনেকে অসুস্থ হচ্ছেন, তখন বন্দিরা করোনা ভীতির সুবিধা কাজে লাগিয়ে প্য়ারোলে ছুটি কাটাচ্ছেন।
বন্দিদের মধ্যে সংক্রমণ এড়াতেই এই সিদ্ধান্ত
করোনা পরিস্থিতিতে বন্দীদের করোনা থেকে দূরে রাখতে প্যারোলে মুক্তি দেওয়ার হিড়িক শুরু হয়েছে উত্তরবঙ্গের সংশোধনাগারগুলিতে। কদিন আগেই উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের বহু বন্দিকে কয়েক মাসের জন্য প্যারোলে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এবার সেই পথে হাঁটল দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট সংশোধনাগারের আধিকারিকরাও। অন্যদিকে শিলিগুড়ি সংশোধনাগার আপাতত প্যারোল চালু করা না করলেও করোনায় বিভিন্ন বন্দীদের আত্মীয়দের বাড়ি থেকেই জেলে সাক্ষাৎকার এর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
ভালো বন্দিদের সাময়িক ছুটি
করোনার সংক্রমণ হলে কীভাবে বন্দীদের বাঁচাবেন, সেই তরকিব খুঁজে না পেয়ে বন্দিদের মুক্তি দেওয়াই ভাল বলে মনে করছেন। উত্তর দিনাজপুর জেলা মুক্ত সংশোধনাগারের আধিকারিকরা আপাতত শান্তিতে ঘুমোচ্ছেন।
কাদের মুক্তি
রায়গঞ্জ সংশোধনাগার সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক দিন আগে তাঁরা বাছাই করা ২৬ জন বন্দিকে অস্থায়ী ভিত্তিতে প্যারোলে মুক্তি দিয়েছেন। জেল কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের মধ্যে যাঁরা ১০ থেকে ১২ বছর বন্দিদশা কাটানোর পর ভালো আচরণ করেছেন, তাঁদের তালিকা তৈরি করে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তাঁদের ছাড়া হয়েছে। মুক্তি দেওয়া বন্দিদের অবশ্য তিন মাসের মধ্য়েই ফের সংশোধনাগারে ফিরতে হবে বলে জানানো হয়েছে। প্রত্যেককে লক ডাউন পরিস্থিতিতে বাড়িতে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জেল সুপার রাজেশ মন্ডল জানিয়েছেন।
বালুরঘাট কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারও একই পথে
অন্যদিকে করোনা সংক্রমণ থেকে বন্দিদের রক্ষা করতে বালুরঘাট কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের ১৮০ জন আবাসিক বন্দিকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। রাজ্য কারা দফতর থেকে নির্দেশ আসতেই দফায় দফায় চলছে এই মুক্তিদানের প্রক্রিয়া। পাশাপাশি এই সংশোধনাগারের আবাসিকদের করোনার টিকাকরণের কাজ শুরু হয়েছে।
শিলিগুড়ি সংশোধনাগারে আত্মীয়দের বাড়ি থেকেই দেখা করার বন্দোবস্ত
অন্যদিকে করোনা আবহে সংক্রমণ এড়াতে বন্দিদের সঙ্গে তাঁদের পরিবারের সদস্যদের যোগাযোগ বন্দোবস্ত করলেন সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ। তাঁদের বাড়ি থেকে তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে এই ব্যবস্থা সংশোধনাগারের কম্পিউটারে ইন্টারনেট পরিষেবাকে কাজে লাগিয়ে বাড়ির লোকের সঙ্গে দেখা করতে পারছেন বন্দিরা। এর মধ্যে শিলিগুড়ি সংশোধনাগার-এর একজন বন্দি করোনা সংক্রামিত হয়েছেন। তাকে শিলিগুড়ি ইনডোর স্টেডিয়ামের সেফ হোমে পাঠানো হয়েছে। সংশোধনাগারের সুপার কৃপাময় নন্দী জানিয়েছেন, বন্দিদের করোনা বিধি মেনে রাখা হচ্ছে। তারা যাতে কোনভাবে সংক্রমিত না হয় তার জন্য সম্পূর্ণ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শিলিগুড়ি সংশোধনাগারে বর্তমানে ৪৩১ জন বন্দি রয়েছেন, টিকাকরণের কাজও শুরু হয়েছে বন্দিদের।