২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের ফল বেরিয়ে গেছে কয়েকদিন আগেই। এখনও বিভিন্ন আঙ্গিকে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। কারা থাকবে, কারা টিঁকবে, কাদের অস্তিত্ব সংকট তৈরি হবে সব নিয়ে চলছে কাটাছেঁড়া।
নতুন সমীকরণ
পাহাড়ে নির্বাচনী ফলের পর তৈরি হয়েছে নতুন সমীকরণ। দার্জিলিং জেলার ৫ আসনে ৫ এ ৫ করে বিজেপি-কে জয় এনে দিয়ে এখন স্থানীয় 'পিকে' হিসেবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বাহবা কুড়োচ্ছেন দার্জিলিংয়ের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা।
শঙ্কর ঘোষকে সিপিএম থেকে বিজেপিতে আনার পিছনে মাস্টারস্ট্রোক
শংকর ঘোষকে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পিছনে তাঁর ভূমিকা রয়েছে বলে এখন ওপেন সিক্রেট। কালিম্পং হাত ফসকে বেরিয়ে গেলেও দার্জিলিং, কার্শিয়াং এবং শিলিগুড়ি সমতলের শিলিগুড়ি, মাটিগাড়া নকশালবাড়ি, এবং ফাঁসিদেওয়া বিধানসভা বিজেপির দখলে আসার পিছনে তাঁর ক্ষুরধার মস্তিষ্ক কাজ করছে বলে মনে করছেন অনেকেই। সেই সঙ্গে শিলিগুড়ি লাগোয়া ফুলবাড়িতে হেভিওয়েট প্রার্থী গৌতম দেবকে পরাস্ত করেছে বিজেপি। সেখানেও তার ক্যারিশমা কাজে লেগেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিজেপির প্রতিপত্তি বৃদ্ধি
বিশেষ করে পাহাড়ের তিন বিধানসভায় যেভাবে বিজেপির প্রতিপত্তি বেড়েছে, তাতে পরিষ্কার মোর্চার আধিপত্য মানুষ আর বেশিদিন মেনে নেবে না। পাহাড়ে বিমল গুরুং অনুপস্থিত থাকার সময়, রাজ্য সরকারের সঙ্গে শান্তি প্রক্রিয়া সহযোগিতা করার পুরস্কার কিছুটা পেয়েছে বিনয় তামাং গোষ্ঠী। সব জায়গাতেই বিজেপির সঙ্গে মূল লড়াই ছিল তাঁদেরই। তার পুরস্কার স্বরূপ কালিম্পং বিধানসভাতে নিজেদের অস্তিত্ব টিঁকিয়ে রাখতে একমাত্র বিধায়ক পেয়েছেন তাঁরা।
বিমল গুরুং এখন ব্যাক বেঞ্চার
তবে ২০১৭-র আগে বিমল গুরুংয়ের সঙ্গে ২০২১ এর বিমল গুরুংয়ের যে কোন মিল নেই তা পাহাড়বাসী চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে। একদা দোর্দণ্ডপ্রতাপ বিমল যে এখন পাহাড়ে ব্রাত্য, নির্বাচনের ফলাফলে তাদের অবস্থান থেকেই স্পষ্ট। বিশেষ করে পাহাড়ে রক্তক্ষয়ী আন্দোলন শুরু করে পুলিশের মামলার ভয়ে আড়াই বছর অনুপস্থিত থেকে বাইরে থেকে উস্কানি দেওয়া এবং বিজেপির আশ্রয় সুরক্ষিত থাকা পর্যন্ত তবু ঠিক ছিল, ফিরে এসে তৃণমূলের হাত ধরে পাহাড়ে ফেরার চেষ্টাকে মানুষ যে ভালো ভাবে মেনে নেয়নি তার প্রমাণ মিলেছে ভোট বাক্সে।
বিমলের ভবিষ্যত কি হবে তা নিয়ে জল্পনা
ফলে এরপরে বিমল গুরুংয়ের অবস্থা কী হবে? তা নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন করে জল্পনা। একটি আসনেও জিততে না পারায় তৃণমূলের সঙ্গে তাঁদের দূরত্ব তৈরি হতে পারে বলে মনে করছে একটা শ্রেণি। অন্যদিকে একটি বিধানসভা আসনের জিতে তৃণমূলের সঙ্গে সমর্থন দেবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন বিনয় তামাং। ফলে এর পর আনুগত্যের পুরষ্কার হিসেবে পাহাড় থেকে যদি একটি মন্ত্রী পাওয়া যায়, তাহলে বিমল গুরুংদের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেওয়া হবে বলে মনে করছেন অনেকে। পাশাপাশি এখনো বহু মামলা ঝুলতে থাকা বিমল গুরুং এর রাজনৈতিক কোন জায়গায় থাকবেন সে বিষয়েও আগামী কয়েকদিনের রাজ্য রাজনীতির গতি-প্রকৃতি ঠিক করবে।