scorecardresearch
 

পাহাড় প্ল্যান করে শিলিগুড়িতে আটকে পড়েছেন? যা যা উপভোগ করতে পারেন...

তরাই-ডুয়ার্স-পাহাড়ে প্ল্যান করে শিলিগুড়িতে এসে আটকে পড়লেন। মুষড়ে পড়ার দরকার নেই। সমধিক ভাল ট্যুর দিয়ে শেষ হতে পারে আপনার ভ্রমণ। আমাদের গাইড ফলো করুন। দেখে নিন, শহরে বসেই কী কী করতে পারেন?

Advertisement
শিলিগুড়ি মহানন্দা সেতু-ফাইল ছবি শিলিগুড়ি মহানন্দা সেতু-ফাইল ছবি
হাইলাইটস
  • শিলিগুড়িতে বসেই ভ্রমণ করতে পারেন
  • কী কী উপভোগ করবেন, তার তালিকা
  • আচমকা ভ্রমণ হয়ে উঠবে সুখকর

কোনও কারণে শিলিগুড়ি এসে আটকে পড়েছেন। পাহাড় বা ডুয়ার্সে বুকিং থাকলেও ধস পড়ে রাস্তা আটকে গিয়েছে। অথবা আবহাওয়া খারাপ। পাহাড়ে যাওয়ার ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। অন্য কোথাও আচমকা বুকিং পাচ্ছেন না, তাহলে কী বহুদিনের সাজানো টুর ভেস্তে গেল! না, তা কেন? এখন শিলিগুড়ি শহরে থেকেই আপনি এনজয় করতে পারেন ৩-৪ দিনের টুর। মন খারাপের তো কোনও কারণ থাকবেই না, বরং আপনি অজানা, অদেখা শিলিগুড়িকে আবিষ্কার করে উৎফুল্ল হতে পারেন। আর শিলিগুড়িতে হোটেলের কোনও অভাব নেই। তাই একবার ইন্টারনেটে লোকেশন দিয়ে সার্চ করলেই পেয়ে যাবেন সব রকম রেঞ্জের হোটেল। ফলে টুক করে উঠে পড়ুন। কিন্তু দেখবেন কী? আপনার জন্য সাজিয়ে দিচ্ছি তালিকা। লিঙ্কটি সঙ্গে নিয়ে শিলিগুড়ি আসুন। কথা দিচ্ছি ঠকবেন না।

সেবকেশ্বরী কালী মন্দির (Sevokeshwari Kali Mandir)-শিলিগুড়ি থেকে গ্যাংটক বা কালিম্পং যাওয়ার পথে সেবকে এই মন্দির অবস্থিত। এই মন্দির নিয়ে নানারকম গল্প ও মিথ রয়েছে। পাহাড়ের গায়ে খাড়া সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হবে বেশ খানিকটা। পুজো দিয়ে সেবকের ছোট ছোট রেস্তোরাঁয় খেয়ে ঘুরে আসতে পারেন। এখানে পুজো দিতে হাজির হন সিকিম, বাংলার রথী মহারথী থেকে সাধারণ মানুষ। একদিকে তিস্তা একদিকে পাহাড়। এখানকার সিনিক বিউটিও কম আকর্ষণীয় নয়।

বাঘপুল বা করোনেশন ব্রিজ (Coronation Bridge)- ব্রিটিশদের তৈরি শুধুমাত্র একটি আর্চের উপর ঝুলন্ত এই সেতু তিস্তার উপর দিয়ে দার্জিলিং পাহাড়ের সঙ্গে ডুয়ার্সকে কানেক্ট করেছে। আগে ছিল সাদা। বিভিন্ন সময় রং পরিবর্তন হয়েছে। শিলিগুড়ি বা তরাই-ডুয়ার্সে ঘুরতে এলে এখানে একবার ঢুঁ না মারা হলে আপনার উত্তরবঙ্গ ভ্রমণ বৃথা। এখানে খান কয়েক সেলফি আপনাকে ঘোরার এলিট তালিকায় পৌঁছে দিতে পারে। সেবকেশ্বরী কালীমন্দির থেকে ৫০০ মিটার এগোলেই এই সেতু। সেতুর দু পাশে দুটি করে বাঘের মূর্তি রয়েছে। তাই এর নাম বাঘপুল।

Advertisement

বেঙ্গল সাফারি পার্ক- উত্তর-পূর্ব ভারতের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র এখন এটি। শিলিগুড়ি ও উত্তরবঙ্গ নয়, গোটা নর্থ ইস্টে এমন প্রকৃতিকে হাতের কাছে সাজানো অবস্থায় দেখার সুযোগ কোথাও পাবেন না। এটা একটা লাইভ চিড়িয়াখানা বা ট্রু ফরেস্ট্রি চিড়িয়াখানা বলা যায়। বৈকুণ্ঠপুর জঙ্গলের একটা বড় অংশ ঘিরে এখানে রাখা হয়েছে রয়্যাল বেঙ্গল-টাইগার, ভালুক, লেপার্ড, হাজার রকমের পাখি, হরিণ, বাঁদর, গণ্ডার থেকে শুরু করে হাজার রকম প্রাণী। এলাকা এত বড় তাতে গাড়ি করে ঘুরতে হয়। পার্কের গাড়িতে টিকিট কেটে আলাদা আলাদা সাফারি দেখতে পাবেন। আফ্রিকান সাফারির ঢংয়ে বাঘ-চিতা-ভাল্লুকের ডেরায় ঢুকে কোলাকুলি করার সুযোগ পাবেন। এমনটা এই রিজিয়নে আর কোথাও পাবেন না। তাই আলিপুর চিড়িয়াখানাকে ইদানীং পিছনে ফেলে দিয়েছে এই পার্ক। এটা দেখতে ও সবকটি সাফারি করে খানাপিনা সারতে আপনার সারাদিন লেগে যাবে। ফলে একদিন এর জন্য রেখে দিন।

শালুগারা বৌদ্ধমন্দির (Salugara Monastery)-সাফারি পার্ক যেদিন ঘুরবেন সেদিন যাওয়ার পথে বা ফেরার সময় এই মনাস্ট্রি ঘুরে নিতে পারেন। ১১০ ফুট উঁচু এই মনাস্ট্রিটি কালু রিমপোচে নামে একজন তিব্বতি লামা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মনাস্ট্রির চারদিকে যে পাহাড় রয়েছে, তা নাকি এই বৌদ্ধ স্তূপকে রক্ষা করে বলে জনশ্রুতি রয়েছে! এখানে প্রবেশ করার জন্য কোনও প্রবেশমূল্য লাগে না। বেঙ্গল সাফারি পার্ক থেকে দেড় কিলোমিটার, শিলিগুড়ির দিকে এটি রয়েছে।

ইসকন মন্দির- ফেরার পথে শিলিগুড়ি ঢুকে সেবক রোড ধরেই ইসকন রোড হয়ে চলে যেতে পারেন ইসকন মন্দিরে। যে কোনও ধর্মের মানুষ এই মন্দিরে প্রবেশ করতে পারেন। দুপুর ১ টার সময় গেলে ভোগ পাবেন। সারাদিন ঘুরে সন্ধ্যায় সময় কাটাতে হলে সন্ধ্যারতি দেখতে পাবেন। তা একটা দেখার ও শোনার মতো বিষয়। সন্ধাভোগের পরও প্রসাদ পেতে পারেন। শুধু মন্দির নয়, স্থাপত্যও চোখ টানবে। সকাল সাড়ে পাঁচটা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মন্দির খোলা থাকে আবার বিকেলে সাড়ে চারটে থেকে সন্ধে সাড়ে আটটা পর্যন্ত জনসাধারণের জন্য মন্দির খোলা থাকে।

সূর্য সেন পার্ক (Surya Sen Park)- আপনার সঙ্গে যদি ছোট বাচ্চা থাকে, তা হলে বিকেলে অলস  সময় কাটাতে মহানন্দা নদীর ধারে শহরের ঠিক মাঝে  সূর্য সেন পার্ক থেকে ঘুরে আসতে পারেন। এখানে প্রবেশমূল্য নামমাত্র। এখানে বাচ্চাদের অ্যামিউজমেন্টের জন্য ছেড়ে দিয়ে আপনি গা এলিয়ে নানা রকম ফুল আর পুরনো গানের মজা নিতে পারেন। পার্ক থেকেই গান বাজানো হয়।

নর্থ বেঙ্গল সায়েন্স সেন্টার (North Bengal Science Center) হাতে আধবেলা অতিরিক্ত সময় থাকলে ঘুরে আসতে পারেন নর্থ বেঙ্গল সায়েন্স সেন্টার থেকে। মাটিগাড়া এলাকার এই বিজ্ঞানকেন্দ্রটি কলকাতা সায়েন্স সিটির মতো অত বড় না হলেও বহু কিছু রয়েছে, যা কলকাতার সায়েন্স সিটিতে সবটা নেই। বাচ্চাদের পাশাপাশি বড়দেরও নানারকম মজার বিষয় রয়েছে। যা এনজয় করতে পারেন। শিলিগুড়ি মূল শহর থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার।

ড্রিমল্যান্ড অ্যামিউজমেন্ট পার্ক (Enjoy Dreamland Amusement Park)-শিলিগুড়ি থেকে ফুলবাড়ি মাত্র ৭ কিলোমিটার। পরিবারের সকলের সঙ্গে ভাল সময় কাটানোর জন্য ড্রিমল্যান্ড অ্যামিউজমেন্ট পার্কে একবার ঘুরে আসতে পারেন। নানা ধরনের রাইড রয়েছে। এটি কলকাতার নিক্কো পার্কের মতো। এখানে যা শুধু বাচ্চাদেরই নয়, বড়দেরও আনন্দ দেবে। এছাড়া আপনি এখানে বোটিংও করতে পারেন।

হংকং মার্কেট (Hong Kong Market) শিলিগুড়ির হংকং মার্কেট বিখ্যাত ! যাঁরা শিলিগুড়িতে কয়েক ঘন্টার জন্য আসেন, তাঁরা শুধু এই মার্কেটেই ঘুরে চলে যান। কলকাতার চাঁদনি মার্কেটের মতো এখানেও সব কিছু পাওয়া যায়। নেপাল এবং চিনের জিনিস চোরাপথে ভারতে আসে, তা এখানেই বিক্রি হয় এবং সেটাও যথেষ্ট কম দামে! তবে এখন দিল্লির পণ্যও নেপাল-চিনের বলে বিক্রি হয়। তাই দেখে কিনতে হবে। তবে দরদাম না করলে ঠকতে পারেন। 

Advertisement

গজলডোবা ভোরের আলো(Bhorer Alo)- গজলডোবা প্রকল্প বেঙ্গল সাফারি পার্কের মতোই শিলিগুড়িকে আলাদা পরিচিতি দিয়েছে। হাতের কাছে পর্যটনের এত বড় সম্ভার হেলায় হারানো উচিত হবে না। এখানে শিলিগুড়ির বাসিন্দারা উইকএন্ড কাটাতে পছন্দ করেন। বেশিরভাগই সারাদিন ঘুরে সন্ধ্যায় ঘরে ফেরেন। সেটা যেমন সম্ভব, তেমনই পর্যটন দফতরের লাক্সারি ও সুদৃশ্য বাংলোতে একদিন কাটিয়ে আসাটাও মন্দ অভিজ্ঞতা নয়। একদিকে তিস্তা নদী, অন্যদিকে পাখিরালয়। খোলা হাওয়া সঙ্গে বৈকুণ্ঠপুর জঙ্গল। রাতে হাতি আসে অহরহ। তাই থ্রিলিং এক-আধদিন কাটাতে পারেন। এখানে সিডনির হারবার ব্রিজের আদলে একটি সেতু তৈরি হচ্ছে। সেটিও অত্যন্ত আকর্ষণীয়।

টয়ট্রেন (Toy Train Ride)-শিলিগুড়ি থাকবেন, আর টয় ট্রেনে চড়বেন না, তা কী কখনও হয়? শিলিগুড়ি জংশন থেকে টিকিট কেটে উঠে পড়ুন টয়ট্রেনে আর পাহাড়ি দৃশ্য দেখতে দেখতে পৌঁছে যান রংটংয়ে। এখানে জঙ্গল সাফারিও করতে পারেন। সেখানে ২০ মিনিটের একটা হল্ট নিয়ে আবার ফিরে আসতে পারেন শিলিগুড়ি। ৩২ কিলোমিটারের এই যাত্রায় সময় লাগে প্রায় তিন ঘন্টা। তা ছাড়া টয়ট্রেনে না চড়লেও হাতের কাছে সুকনা শিলিগুড়ি থেকে ১২ কিলোমিটার। সুকনা স্টেশনে গেলে বুঝবেন হেরিটেজ স্টেশন কাকে বলে?

চা বাগান ভ্রমণ (Lash Green Tea Garden) শিলিগুড়িতে থেকে হাতে কয়েক ঘন্টা সময় থাকলে, যেদিকে ইচ্ছে সোজা গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যান। চা বাগান পাবেন। শিলিগুড়ির আশেপাশে অনেক চা-বাগান রয়েছে যারা চা বাগানে সারাদিনের ট্যুর করানোর ব্যবস্থা করেন। হ্যাপি ভ্যালি টি গার্ডেন, গুডরিক টি গার্ডেন ইত্যদি সব বিখ্যাত চা বাগান। কীভাবে চা গাছ থেকে চা পাতা তোলা হয়, কীভাবে ফ্যাক্টরিতে চা তৈরি হয় – সবই দেখতে পাবেন এই ট্যুরে।

মহানন্দা ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারি (Experience Mahananda Wildlife Sanctuary)- শিলিগুড়ি শহরের গা ঘেঁষে বৈকুণ্ঠপুর জঙ্গল, মহানন্দা অভয়ারন্য। যেখান থেকে মাঝে মধ্যেই শহরের মাঝখানে হাতি, লেপার্ড ঢুকে পড়ে। এই স্যাংচুয়ারিতে আপনি নানা বন্য জন্তু দেখতে পেতে পারেন, তার সঙ্গে নানা পাখিও দেখতে পাবেন। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার থেকে শুরু করে হরিণ, হাতি সবই দেখতে পাবেন।

এছাড়া রয়েছে আরও কিছু। শিলিগুড়িে দেড় হাজারের বেশি ছোট-বড় নামী রেস্তোরাঁ আছে। তাহলে আর কী? ম্যাপ দেখুন আর শিলিগুড়ি উপভোগ করুন। বাণিজ্য নগরী শিলিগুড়ির এই সৌন্দর্য উপভোগ করার আগে প্রতিবেদনটি একবার পড়ে নিতে ভুলবেন না।

 

Advertisement