পাহাড়ে তুষারপাত অব্যাহত। সান্দাকফু থেকে ফালুট, নেপাল থেকে ভুটান কিংবা দার্জিলিং। তুষারে ঢেকে রয়েছে সর্বত্র। বুধবারও একদফা শিলাবৃষ্টি হয়ে গিয়েছে কার্শিয়াং, সোনাদা, ঘুম, টুং এলাকায়। শিলাবৃষ্টির দাপট এমনই, তা তুষারপাতের মতোই চারিদিক শ্বেত-শুভ্র চাদরে ঢেকে দিয়েছে। প্রকৃতি চলতি বছরে কোনওভাবেই কার্পণ্য করছেন না নিজের রূপের ছটায় মানুষকে মুগ্ধ করতে।
অন্য সময় হলে এতক্ষনে পাহাড়ে থিকথিক করতো পর্যটকদের ভিড়। হামলে পড়তেন জনতা। সিমলা-কুলু- মানালির স্বাদ দার্জিলিংয়ে নিতে। এমনটা হতেই পারতো। কিন্তু বিধি বাম। নতুন করে করোনা আবহে রাজ্য সরকারের তরফে কোভিড বিধি লাগু করা হয়েছে দেশের সর্বত্র। পর্যটনকেন্দ্রও তা থেকে বাদ যায়নি।
তাই ফলে হামলে পড়ার ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই। কিছু সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরা, আর স্থানীয় তুলে রাখা ভিডিও ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে যাচ্ছে চারিদিকে। তা দেখেই দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে হচ্ছে পাহাড় এবং বরফ প্রেমী মানুষকে। কারণ উজিয়ে পাহাড়ে যাওয়ার উপায় নেই। এমন সুযোগ পরের বছর আবার আসবে কি না ভগবানও জানেন না। ফলে হাত কামড়াচ্ছে প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটক মন।
অন্যদিকে কপাল চাপড়াচ্ছেন পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত লক্ষাধিক মানুষ। পর্যটন ব্যবসায়ী, গাড়িচালক, হোটেল ব্যবসায়ী, হোমস্টে মালিক, টুর গাইড সহ বিভিন্ন মানুষ। প্রায় প্রতিদিনই তরাই-ডুয়ার্সের পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত মানুষরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। আন্দোলন করছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত গঙ্গাসাগর মেলার অনুমতি থাকলেও পর্যটনের কোনও অনুমতি মিলছে না। ফলে অপেক্ষা দীর্ঘতর হচ্ছে।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় আসরে নেমেছেন উত্তর ও উত্তরকে ঘিরে আন্তর্জাতিক পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত পর্যটন সংগঠন হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্রাভেল ডেভলপমেন্ট নেটওয়ার্ক। তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন পর্যটন খোলার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখতে দাবি করে। সংগঠনের সম্পাদক সম্রাট সান্যাল জানান, সমস্ত কোভিড প্রটোকল মেনেই আমরা পর্যটন খোলার পক্ষপাতী। কারণ মহামারির সঙ্গে কোনও কিছুরই তুলনা চলে না। কিন্তু পরপর তিন বছর বন্ধ থাকলে আর ঘুরে দাঁড়ানোর জায়গা থাকবে না অনেকের।
এদিকে সিকিম গতবার ঠেকে শিখেছে। তারা গতবার নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করেও করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে পারেনি। সঙ্গে অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছিল। ফলে এবার তারা শর্তসাপেক্ষে করোনা বিধি বজায় রেখে রাজ্যে সমস্ত কিছু খোলা রাখা হচ্ছে। তাই এ রাজ্যের সমস্ত পর্যটক বাধ্য হয়েই সিকিম চলে যাচ্ছেন। যাতে আরও বেশি ক্ষতি হচ্ছে পর্যটনকেন্দ্রগুলির উপর নির্ভর ব্যবসায়ীদের। ফলে দ্রুত বিধি শিথিল না হলে অনেক দেরি হয়ে যেতে পারে। এমনটাই আশঙ্কা সকলের।