কারুশিল্পীরা কেমন আছেন ?
কেমন আছে কারুশিল্পী আনসার আলিরা। কেউ জানে না। কেউ খোঁজ রাখে না। কাজ নেই। কিন্তু পেট তো আছে। তা চলছে কী ! চালাতে হচ্ছে। কিন্তু কীভাবে চলছে তা জানা নেই কারও। তারই হালহকিকত পেতে ঢুঁ মারল আজতক বাংলা।
পর্যটন বন্ধ তাই
উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্স মানেই টি, টিম্বার এন্ড ট্যুরিজম। চা বাগান খোলা, টিম্বার মানে গাছ কাটা নিষেধ। আর ট্যুরিজমের অবস্থা খুব ভালো নয়। কারণ বিধি-নিষেধের ফলে প্রায়ই পর্যটকশূন্য ডুয়ার্স। নিষেধ উঠছে। কিন্তু কতদিনে তা আবার স্বাভাবিক হবে, তা জানা নেই।
বিক্রিও বন্ধ
পর্যটনকে কেন্দ্র করেই ডুয়ার্সের বিভিন্ন শিল্পীরা তাঁদের তৈরি সামগ্রী নিয়ে পর্যটকদের আকর্ষণ করে। পর্যটন বন্ধ থাকায় এখন তাঁরা বিপাকে। বিভিন্ন দোকানে তৈরি সামগ্রী বিপণনের জন্য তাদের কাছে পৌঁছে দিত এই কারুশিল্পীরা।
সুযোগ হাতছাড়ায় ভিলেন করোনা
কিন্তু করোনা ভাইরাস কারুশিল্পীদের জীবনকে বেদনাময় করে তুলেছে। এমনই এক শিল্পী আনসার আলি। তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল কীভাবে ভাইরাস কেড়ে নিয়েছে তাঁদের রুটি-রুজি। বারবার সুযোগ তৈরি হয়েও কেন তা হাতছাড়া হচ্ছে তাও জানালেন তিনি।
বিক্রি করতে হয়েছে গবাদি পশু
জলপাইগুড়ি জেলার মাটিয়ালি গ্রামের কারুশিল্পী আনসার আলির বয়স ৬৪ বছর, বর্তমান অবস্থা ভাল নয়।একদিকে পর্যটকশূন্য, অপরদিকে রাজ্যের বিভিন্ন মেলাগুলো বন্ধ। তাই সংসার চালাতে হিমশিম, দুবেলা ভাল-মন্দ খাবার জন্য বাড়ির গবাদি পশু বিক্রি করে ফেলেছেন। কারুশিল্পের কাজগুলো চালিয়ে গেলেও তার বিক্রিই নেই। তাহলে চলবে কী ভাবে। অগত্যা ওই উপায়ই বেছে নিয়েছেন তিনি।
কপর্দকশূণ্য অবস্থা
এই ৬৪ বছর বয়সে নতুন করে কপর্দকশূণ্য আনসার আলি টোটো চালাতে অবস্থায় বাধ্য হয়েছে। কিন্তু বয়সের ভারে পরিবারের লোকজন নিষেধ করেন টোটো চালাতে। তিনি নিজেও হাঁপিয়ে যাচ্ছিলেন। ফলে শেষমেষ বাড়ির গরু-ছাগল বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে।
হস্তশিল্পের এমন দিন কল্পনাতীত
কারুশিল্পী আনসার আলি কোনও দিন ভাবতে পারেননি। যে হস্তশিল্প একেবারেই নিস্তেজ হয়ে যাবে। আর নেমে আসবে অন্ধকারময় জীবন। কবে সুদিন ফিরবে, তা ভেবে কূল কিনারা পাচ্ছেন না। তবু অপেক্ষায় চলে জীবন।হাতের কাজ জানা থাকলেও বাজার একেবারে নিস্তেজ ।
তবু ওরা কাজ করে
তৈরি করা জিনিস বাড়িতেই পড়ে রয়েছে। কিন্তু তাও আনসার আলি হার মানতে নারাজ। হাতে হাতুড়ি আর বাটালি নিয়ে ক্রমাগত কারুশিল্পী নতুন নতুন নিদর্শন তৈরি করে চলেছে আশায় বুক বেঁধে রেখেছে। করোনা কাল পার হলেই সরকারি মেলা শুরু হবে , সেখানে বহু লোক আসবে এবং তার সামগ্রী কিনবে। এই আশায় বুক বেঁধে আনসার আলি আজও হাতুড়ি করাত ও বাটালি সঙ্গে সম্পর্ক অক্ষুন্ন রেখেছে।