আদিবাসী সংস্কৃতির সঙ্গে ওতোপ্রতো ভাবে জড়িত ধামসা মাদল (Dhamsa Madol)। মহুয়ার নেশায় বুঁদ হয়ে ধামসা মাদলের ছন্দে মেতে ওঠেন আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ। ঝুমুর গান (Jhumur Song), টুসু গানের (Tusu Song) সঙ্গে ধামসা মাদলের ছন্দ দোলা লাগায় শহুরে মানুষের মনেও। যুগ যুগ ধরে মূলত এই দুই বাদ্যযন্ত্রের তালে ভর করেই এগিয়ে চলেছে রাঢ়বঙ্গের লোকসঙ্গীত। আর শুধু রাঢ়বঙ্গই নয়, দিনে দিনে এই দুই বাদ্যযন্ত্র জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে অন্যান্য এলাকাতেও। ধামসা ও মাদলকে হাতে তুলে নিয়েছেন আরও অনেক তালবাদ্য শিল্পী। কিন্তু জানেন কি কীভাবে তৈরি হয় এই ধামসা মাদল?
পুরুলিয়া (Purulia) জেলার সাঁতুরি এলাকার বাসিন্দা গুহিরাম রুহিদাস জানাচ্ছেন, বংশ পরম্পরায় ধামসা মাদল তৈরি করছেন তাঁরা। এলাকায় তাঁরাই একমাত্র এই পেশার সঙ্গে যুক্ত। ধামসার বডি মূলত লোহার তৈরি হয়। যাকে 'চাদরা' বলা হয়। গুহিরামবাবু জানাচ্ছেন, কামারের বাড়ি থেকে সেই 'চাদরা' এনে তার ওপরে চামড়া বসিয়ে তৈরি হয়ে ধামসা। পাশপাশি মাদলের বডি হল মাটির তৈরি। গুহিরামবাবুর কথায়, কুমোরের বাড়ি থেকে মাটি কিনে আনা হয়। কিনে আনতে হয় চামড়া। তারপর সেই সেই চামরা পরিস্কার করে নিয়ে, লাগান হয় মাদলে। 'তালা' ও 'বাদি'তে বসানো হয় পৃথক চামড়া। সবশেষে গাব দিয়ে সমান করা হয়।
গুহিরাম রুহিদাস জানাচ্ছেন, আদিবাসীদের মধ্যে ধামসা মাদলের এখনও কমবেশি চাহিদা রয়েছে। বিশেষত অদিবাসী পরব উপলক্ষে চাহিদা কিছুটা বাড়ে। মাদল বিক্রি হয় মূলত জোড়ায়। আকারের ওপর নির্ভর করে মাদলের দাম। মোটামুটি ৫ - ৬ হাজার টাকায় বিক্রি হয় মাদলের জোড়া।
বাদ্যযন্ত্র তৈরির এই শিল্পের উন্নয়নে সরকারের তরফে কোনও সহযোগিতা পেয়েছেন? জবাবে গুহিরামবাবু জানান, তাঁর দাদা অজিত রুহিদাস নিজে একজন শিল্পী। রাজ্য সরকারের লোকপ্রসার প্রকল্পের আওতাভুক্ত শিল্পী তিনি। প্রকল্পের সুযোগ সুবিধাও পান। তবে এই শিল্পের উন্নয়নে এখনও পর্যন্ত তেমন কোনও সরকারি সহযোগিতা পাওয়া যায়নি বলেই জানান তিনি।