এবার ইলিশ মাছ নিয়ে পৃথকভাবে গবেষণা করতে চাইছে রাজ্য মৎস্য দপ্তর। তাই এবার এপার বাংলায় অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গে তৈরি হতে চলেছে ইলিশের গবেষণাগার। এ রাজ্যের মুর্শিদাবাদে 'ইলিশ অভয়ারণ্যে'ই তৈরি হবে গবেষণাগার। ইতিমধ্যেই ফরাক্কায় ইলিশ নিয়ে বিশেষ প্রকল্প করা হয়েছে। এবার গবেষণাকেন্দ্র তৈরি হতে চলেছে। সারা বছর এ রাজ্যে ইলিশ রাখতে মরিয়া সরকার। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফেও বিষয়টি নিয়ে নজর দেওয়া হচ্ছে।
ইলিশের অভয়ারণ্য়ে ইলিশের গবেষণাগার
গঙ্গা, পদ্মা ও ভাগীরথী নদীতে ইলিশ কতটা পাওয়া যায়, তার উপর নির্ভর করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার রায়পুর থেকে নোদাখালি, ত্রিবেণী থেকে বলাগড় এবং মুর্শিদাবাদ জেলার লালবাগ থেকে ফারাক্কা পর্যন্ত এলাকাটিকে 'ইলিশের অভয়ারণ্য' হিসেবে ঘোষণা করা। প্রতি বছর কয়েক লক্ষ ইলিশ মাছ সমুদ্র থেকে 'আপ স্ট্রিমে' (উজান) সাঁতার কেটে এই এলাকাগুলোতে পৌঁছে যায় ডিম পাড়ার জন্য। মিষ্টি জলে ডিম পেড়ে আবার ইলিশ মাছ ফিরে যায় সমুদ্রের নোনা জলে।
নোনা জলের মাছকে মিঠা জলে পরীক্ষা
নোনা জলের ইলিশকে কীভাবে মিষ্টি জলে প্রজনন করানো যায় তা নিয়ে ইতিমধ্যেই 'নমামি গঙ্গে' প্রকল্পের অংশ হিসেবে আইসিএআর (ICAR)-এর বিজ্ঞানীরা ফারাক্কাতে গত তিন বছর ধরে গবেষণা করছেন। তাঁরা ফারাক্কার গঙ্গা থেকে মাছ ধরে আপস্ট্রিমে পাঠিয়ে দিচ্ছেন এবং পরীক্ষা করে দেখছেন এই মাছ কতদূর যাচ্ছে, কোথায় কোথায় তারা প্রজনন করছে এবং আরও বেশ কিছু তথ্য। সাফল্যও এসেছে কিছুটা। তবে পুরোপুরি সাফল্য পেতে আরও কিছুটা সময় লাগবে।
ইলিশ গবেষণাকেন্দ্রের প্রোজেক্ট রিপোর্ট দিতে হবে
রাজ্যে তৃণমূল সরকারের ১১ বছর পূর্তি উপলক্ষে জেলাগুলোর বিভিন্ন ব্লক ঘুরে সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গুলোর পর্যালোচনা করছেন রাজ্য এবং জেলা প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকেরা। মুর্শিদাবাদ জেলার ফারাক্কা ব্লক ঘুরে জেলাশাসক শরদকুমার দ্বিবেদী জেলা মৎস্য দপ্তরের কর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন ফারাক্কাতে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে একটি ইলিশ গবেষণাগার তৈরির জন্য দ্রুত 'ডিটেলড প্রজেক্ট রিপোর্ট' তৈরি করে জেলা প্রশাসনকে জমা দিতে।
ইলিশ উৎপাদন বাড়ানোই মূল লক্ষ্য
ফরাক্কা ব্যারেজ প্রোজেক্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, ৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা ইলিশ মাছের প্রজননের জন্য আদর্শ জায়গা। প্রত্যেক বছর এখানে প্রচুর ইলিশ মাছ ডিম পাড়ার জন্য আসে। একবারে একটি ইলিশ মাছ প্রায় ৫-৬ লক্ষ ডিম পাড়ে। আমাদের রাজ্যে প্রত্যেক বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত নদীতে ইলিশ মাছ ধরার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি থাকে। মূলত ওই সময় ইলিশ মাছ আমাদের এলাকার নদীতে ডিম পাড়তে আসে। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ওই সময়ও প্রশাসনের নজরদারিকে ফাঁকি দিয়ে ইলিশ মাছ ধরে। তার ফলে মুর্শিদাবাদ জেলাতে প্রত্যেক বছর ইলিশ মাছের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। এক সময় ফারাক্কা ব্লকে ৪-৭ টন পর্যন্ত ইলিশ মাছ পাওয়া যেত।’
একাধিক রাজ্যের ফায়দা হবে
পাশাপাশি এক কর্তা জানিয়েছেন ‘কেন্দ্র সরকারের তরফ থেকে ইতিমধ্যেই ফারাক্কায় দুটি পুকুরে মিষ্টি জলে ইলিশ মাছ উৎপাদনের চেষ্টা করা হচ্ছে। রাজ্য সরকারের তরফে জেলাশাসক আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন এরকম পরীক্ষা রাজ্য সরকারের তরফ থেকেও শুরু করার জন্য।’সূত্রের খবর, ফারাক্কা ব্যারেজ প্রজেক্ট এলাকা থেকে যে মাছ ধরা হয় তা কেনার জন্য মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন জায়গার পাশাপাশি ঝাড়খণ্ড, বিহার, মালদা প্রভৃতি জায়গা থেকেও মাছ ব্যবসায়ীরা আসেন। ফারাক্কার প্রায় ১০-১২ হাজার মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ইলিশ মাছ কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত।