BJP Rajyasabha MP Candidate Ananta Maharaj: বাংলা থেকে রাজ্যসভায় পাঠাচ্ছে BJP, কে এই অনন্ত মহারাজ?

BJP Rajyasabha MP Candidate Ananta Maharaj: কোচবিহারের অনন্ত রায় গ্রেটার কোচবিহারের মহারাজা বলে নিজেকে দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছেন এবং তিনি তাঁর নিজের নামের সঙ্গে মহারাজ জুড়ে দিতেই পছন্দ করেন। তাঁর রাজনীতির একমাত্র উদ্দেশ্য হলো গ্রেটার কোচবিহারকে আলাদা রাজ্যে পরিণত করা অথবা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে রূপান্তরিত করা।

Advertisement
রাজ্যসভায় পাঠাচ্ছে BJP, কে এই অনন্ত মহারাজ?বিজেপির রাজ্যসভার প্রার্থী হতেই ফের চর্চায়, কে এই অনন্ত মহারাজ?
হাইলাইটস
  • বিজেপির রাজ্যসভার প্রার্থী হতেই ফের চর্চায়
  • কে এই অনন্ত মহারাজ?
  • পৃথক রাজ্যের দাবিদার

BJP Rajyasabha MP Candidate Ananta Maharaj: বিজেপি, অনন্ত মহারাজকে (Ananta Maharaj) পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজ্যসভায় (Rajyasabha) প্রার্থী করতে চলেছে। এটা এখন ওপেন সিক্রেট। যা নিয়ে এখন নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত মিলেছে উত্তরবঙ্গে। এমনিতে পৃথক রাজ্যের দাবিতে অনন্ত মহারাজ এবং তার জিসিপিএ (GCPA) দল দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করে চলেছে। যার বিরোধিতা করে এসেছেন বঙ্গ বিজেপি নেতারা। এবার তার মধ্যেই বিজেপির তরফ থেকে তাঁর নাম রাজ্যসভার পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে হইচই শুরু হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের ৬ টি রাজ্যসভা আসনের জন্য ২৪ জুলাই নির্বাচন হবে। এর সঙ্গে উপনির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে ১ টি আসনে। অনন্ত রায় গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশন এর সভাপতি। এই সংগঠন লম্বা সময় থেকে গ্রেটার কোচবিহারকে আলাদা রাজ্য তৈরি করার জন্য দাবি জানিয়ে আসছে। অনন্ত রায় নিজে গ্রেটার কোচবিহারে মহারাজ বলে দাবি করেন।

অনন্ত রায়কে প্রার্থী করার কথা ছড়িয়ে পড়তেই তৃণমূল, বিজেপির দিকে আক্রমণ শাণিয়েছে। তৃণমূল সাংসদ এবং প্রবক্তা শান্তনু সেন জানিয়েছেন যে, "আমরা লম্বা সময় থেকে বলে আসছি যে বিজেপি উত্তরবঙ্গে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনকে মদত দিচ্ছে এবং তারা রাজ্য ভাগ চায়। তিনি বলেন যে, অনন্ত রায়কে প্রার্থী করাতে এটা প্রমাণ হয় যে বিজেপি রাজ্য ভাগ চাইছে। অন্য কিছু নয়।" যদিও বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য জানিয়েছেন যে, "আমরা সব সম্প্রদায়কে সঙ্গে নিয়ে উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলতে বিশ্বাসী। সবকা সাথ, সবকা বিকাশে বিশ্বাস রাখি।"

অনন্ত মহারাজ

কোচবিহারের অনন্ত রায় গ্রেটার কোচবিহারের মহারাজা বলে নিজেকে দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছেন এবং তিনি তাঁর নিজের নামের সঙ্গে মহারাজ জুড়ে দিতেই পছন্দ করেন। তাঁর রাজনীতির একমাত্র উদ্দেশ্য হলো গ্রেটার কোচবিহারকে আলাদা রাজ্যে পরিণত করা অথবা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে রূপান্তরিত করা। নিজের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকায় অনন্ত রায় কিছু বছর আগে অসমে চলে গিয়েছিলেন। ২০১৯-এ নির্বাচনের আগে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গেও মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। মনে করা হয়, তাঁর উপস্থিতি; বিজেপিকে ভাল ফায়দা দিয়েছিল। তাঁকে সঙ্গে রাখার কারণেই বিজেপি উত্তরবঙ্গে বিশেষ করে আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, শিলিগুড়িতে ভালো ফল করে। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচন জেতার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও অনন্ত রায়ের সঙ্গে একটি মঞ্চে দেখা গিয়েছিল।

Advertisement

বিজেপির জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ অনন্ত রায়?

অনন্ত রায়, রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষ। মতুয়ার পরে পশ্চিমবঙ্গে দ্বিতীয় সবচেয়ে বড় তপশিলি জাতি হল এই রাজবংশিরা।অনন্ত রায়কে প্রার্থী করলে বিজেপি উত্তরবঙ্গে ভালো ফল করতে পারবে বলে বিজেপির বিশ্বাস এবং এটা অনেকটা সত্যিও। কারণ অনন্ত রায়ের বেশ কিছু অনুগামী এবং সমর্থক রয়েছেন উত্তরবঙ্গে বিভিন্ন এলাকায়। বক্তব্য অনুযায়ী, লোকসভা আসনে রাজবংশীরা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। অনন্ত রায়কে প্রার্থী করে বিজেপি এক তীরে দুটি লক্ষ্য ভেদ করতে চাইছে। মনে করা হচ্ছে যে অনন্ত রায় কে রাজ্যসভা নিয়ে গেলে বিজেপির জন্য বড় জিত হবে। তা সবচেয়ে বড় কারণ হলো অনন্ত রায় রাজবংশী সম্প্রদায়ের মধ্যে ভালো প্রভাব।

কিন্তু কে এই অনন্ত মহারাজ?

রাজবংশী সমাজের নেতা অনন্ত মহারাজ। নব্বই দশকের শেষদিকে হঠাত করে উত্তাল হয়ে ওঠে কোচবিহার। উত্তরবঙ্গ ভাগের আন্দোলন ব্যাপক আকার নেয়। একদিকে কামতাপুর লিবারেশন অর্জানাইজেশন ( কেএলও) করে একেবারে জঙ্গি আন্দোলন শুরু করেন জীবন সিংহ। অন্যদিকে গণতান্ত্রিক ভাবেও আন্দোলন শুরু হয়। আর তাতে কেপিপি নেতা অতুল রায়ের মতো একাধিক নেতারা যোগ দেন। আর এর মধ্যেই মাথাচাড়া দেয় কোচবিহারের ভারতভুক্তি চুক্তি রূপায়ণের দাবি আর এই দাবিতে তৈরি হয় গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশন (জিসিপিএ)। অনন্ত রায় (মহারাজ), বংশীবদন বর্মনরা এই আন্দোলন শুরু করেন। কোচবিহার সহ উত্তরবঙ্গের বড় একটা অংশ জুড়ে রাজবংশী মানুষের বসবাস। কোচবিহারের ভারতভুক্তি চুক্তি রূপায়ণের দাবিতে সেই সমস্ত মানুষকে পাশে পান অনন্ত রায় (মহারাজ), বংশীবদন বর্মনরা। যদিও অনন্ত রায় সেই সময় অতটা সামনে আসেননি। কিন্তু এই আন্দোলন ব্যাপক আকার নিয়েছিল।

কি নিয়ে ছিল আন্দোলন?

সংগঠনের মূল দাবি ছিল, ১৯৪৯ সালে কোচবিহারের রাজা ভারতভুক্তির যে চুক্তি করেছিলেন সেটা মানা হয়নি। ভারত সরকার কোচবিহারকে জেলা করে রেখেছে। কিন্তু এটা আলাদা রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করতে হবে। তাঁর এলাকা শুধু কোচবিহার জেলা নয়, নরনারায়ণ রাজা থাকাকালীন রাজ্যের যে আয়তন ছিল, সেটাই ফেরাতে চায় জিসিপিএ। সংগঠনের দাবি অনুযায়ী, উত্তরবঙ্গের করতোয়া নদী থেকে অসমের বেশ কিছু অংশ নিয়ে গ্রেটার কোচবিহারের দাবিদার তারা। জিসিপিএ-র অনন্ত গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযোগও অনেক সংগঠনেও ভাঙন ধরে তবে সময়ের সঙ্গে এই আন্দোলনের তেজ দেখা যায় না। এমনকী সংগঠনেও ভাঙন ধরে। অনন্ত রায় (মহারাজ), বংশীবদন বর্মনরা একসঙ্গে আন্দোলন শুরু করলেও দুজনের সম্পর্কও ভেঙে যায়। দু'জন দুই মেরুতে চলে যান। কোচবিহারের একাধিক সংগঠন ধীরে ধীরে মাথা তুলে দাঁড়ায়। রাজবংশী মানুষের উপর বড় প্রভাব তৈরি হয় গ্রেটার কোচবিহার ডেমোক্রেটিক পার্টি। যদিও আজও অনন্ত মহারাজের একটা প্রভাব রয়েছে উত্তরবঙ্গের রাজনীতিতে। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের রাজবংশী মানুষের উপর প্রভাব রয়েছে মহারাজের। আর সেই প্রভাবকে কাজে লাগতেই বিজেপির এহেন কৌশল বলেই মনে করা হচ্ছে।


 

POST A COMMENT
Advertisement