scorecardresearch
 

Madarihat Result 2024: ছিল BJP-র, চলে গেল TMC-র দখলে, মাদারিহাটে কী 'খেলা' হল?

উপনির্বাচনে বাংলার ৬টি আসনেই উড়েছে তৃণমূলের বিজয় রথ। এর আগে ২০২১-এর ভোটে ৫টি আসনেই জয় পেয়েছিল তৃণমূল। খালি মাদারিহাট গিয়েছিল বিজেপির দখলে। এবার কিন্তু মাদারিহাটের জয় যেন তৃণমূলকে বাড়তি আনন্দ দিয়েছে। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়ও এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, মাদারিহাটের মানুষকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, প্রথমবার এই কেন্দ্রে আমাদের জেতানোর জন্য।

Advertisement
বিজেপি দুর্গে TMC-র দাপট বিজেপি দুর্গে TMC-র দাপট

উপনির্বাচনে বাংলার ৬টি আসনেই উড়েছে তৃণমূলের বিজয় রথ। এর আগে ২০২১-এর ভোটে ৫টি আসনেই জয় পেয়েছিল তৃণমূল। খালি মাদারিহাট গিয়েছিল বিজেপির দখলে। এবার  কিন্তু মাদারিহাটের জয় যেন তৃণমূলকে বাড়তি আনন্দ দিয়েছে। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়ও এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, মাদারিহাটের মানুষকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, প্রথমবার এই কেন্দ্রে আমাদের জেতানোর জন্য। 

মাদারিহাট। বাংলায় ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই বিধানসভা কেন্দ্রে কিছুতেই খাতা খুলতে পারত না তৃণমূল। নানাভাবে চেষ্টা করেছে ঘাসফুল শিবির। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না। তবে এবারের উপনির্বাচন যেন সব কিছুকে একেবারে ওলটপালট করে দিল। মাদারিহাট হাতছাড়়া হল বিজেপির। এই কেন্দ্রে বিজেপি পেয়েছে ৩৪.৮৩ শতাংশ ভোট। গত লোকসভা ভোটের তুলনায় বিজেপি এবার ১৫ শতাংশ কম ভোট পেয়েছে। এই কেন্দ্রে পরাজয় বিজেপির কাছে যথেষ্ট অস্বস্তির। উপনির্বাচনে হারতে হয়েছে ২৮ হাজার ১৬৮ ভোটে!

২৮ হাজারের বেশি ভোটে বিজেপির রাহুল লোহারকে পরাজিত করেছেন শাসক দলের প্রার্থী জয়প্রকাশ টোপ্পো। ভোটের দিন ছাপ্পা ও বুথ দখলের অভিযোগ তুললেও, চা বাগানে তৃণমূল সরকারের উন্নয়নই হারের অন্যতম কারণ বলে ফলপ্রকাশের পরে মেনে নিয়েছেন রাহুল লোহারও। মাদারিহাট আসন হাতছাড়া হওয়ার পরে বিজেপির অন্দরে ফের প্রকট হয়েছে ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’। হারের জন্য আলিপুরদুয়ারের সাংসদ তথা জেলা বিজেপি সভাপতি মনোজ টিগ্গাকে নিশানা করেছেন জন বার্লা। নিশানা করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকেও।

আরও পড়ুন

আলিপুরদুয়ারে মাদারিহাটই একমাত্র আসন ছিল, যেখানে তৃণমূল আগে কখনও বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়নি। তৃণমূলের রাজত্বে গত দু’টি বিধানসভা নির্বাচনে ওই আসনে জয়ী হন মনোজ টিগ্গাই। গত লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে টিগ্গা সাংসদ হওয়ায় মাদারিহাটে উপনির্বাচন হয়। প্রয়াত প্রাক্তন সিটু নেতা তারকেশ্বর লোহারের ছেলে রাহুলকে ওই আসনে প্রার্থী করে বিজেপি। তবে দলের অন্দরের খবর, নির্বাচনে গেরুয়া শিবিরের সেনাপতি ছিলেন টিগ্গাই। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিজেপি বিধায়ক বলছেন, “চা বলয় প্রধান মাদারিহাটের বাগান শ্রমিকেরা উপনির্বাচনে আমাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। এর কারণ খুঁজে বার করা জরুরি।” আলিপুরদুয়ার বিজেপির অন্দরে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে, কিছু দিন আগে পর্যন্ত জন বার্লা ‘ভারতীয় টি ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন’ বা বিটিডব্লিউইউ-এর সর্বোচ্চ নেতা ছিলেন। সম্প্রতি তার দায়িত্ব পান টিগ্গা। বার্লা বা তাঁর ঘনিষ্ঠ চা বলয়ের নেতাদের উপনির্বাচনের আগে প্রচারে নামতেও দেখা যায়নি বলে অভিযোগ।

Advertisement

এদিকে মাদারিহাটে কান পাতলেই এখন শোনা যাচ্ছে, জন বার্লা বনাম মনোজ টিগ্গার লড়াইয়ের কথা। কার্যত মনোজ টিগ্গাকে জব্দ করতেই এবার ময়দানে নেমে পড়েছিলেন জন বার্লা। কখনও প্রকাশ্যে। কখনও আড়ালে। আর ভোট মিটতেই জন বার্লা বলছেন, ওয়ান ম্যান আর্মির মতো দল চালানো হচ্ছে আলিপুরদুয়ারে। চা বাগানের নেতাদের গুরুত্ব দেওয়া হয় না। কলকাতায় বসে, দিল্লিতে বসে, দল চালায়। কলকাতায় বসে দল চালালে এটাই হয়। জেলা সভাপতি, রাজ্য সভাপতির সিদ্ধান্তের কারণেই এমন হার হল। যদিও জন বার্লার এমন মন্তব্য নিয়ে সংবাদ মাধ্যমের সামনে কিছু বলতে  চাননি রাজ্যসভার সাংসদ তথা রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য। তবে বিজেপি নেতৃত্ব মানছে এলাকায় রাজ্য সরকারের একাধিক উন্নয়ন প্রকল্প তৃণমূলকে বাড়তি সুবিধা দিয়েছে। চা শ্রমিকদের পাট্টা দেওয়া, চা শ্রমিকদের সন্তানদের জন্য ক্রেশের ব্যবস্থা করা, চা সুন্দরী প্রকল্প, চা শ্রমিকদের পি এফের জন্য় আন্দোলন সহ একাধিক কর্মসূচি এগিয়ে দিয়েছে ঘাসফুলকে। 

মাদারিহাটে হারের জন্য তৃণমূল ভোট লুঠ সংস্কৃতিকেই নিশানা করেছেন বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য। আজতক বাংলাকে শমীকবাবু জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে কাজ করতে দেওয়া হয়নি। গোট বিষয়টিই দুর্ভাগ্যজনক।   ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের প্রবল ঝড়ে বিজেপি যে তিনটি আসনে জয় পেয়েছিল, তার একটি ছিল মাদারিহাট। সে বার খড়্গপুর সদর আসনে বিজেপির তৎকালীন সভাপতি দিলীপ ঘোষ ও বৈষ্ণবনগরে স্বাধীন সরকারের সঙ্গে মাদারিহাট থেকে ভোটে জিতে বিধানসভার সদস্য হয়েছিলেন বর্তমানে আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ মনোজ। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও ওই আসন থেকে জয় পেয়েছিলেন তিনি। ঘটনাচক্রে, সাংসদ মনোজই বর্তমানে বিজেপির আলিপুরদুয়ার জেলার সভাপতি। তাই এই হারে প্রশ্নের মুখে পড়েছে তাঁর নেতৃত্ব। দলের অন্দরে অনেকেরই বক্তব্য,এলাকায় সংগঠনের ভিত ক্রমেই দুর্বল হয়ে যাচ্ছিল বিজেপির। যেদিকে নজর দিতে পারেনি গেরুয়া শিবির। তার ফলও মিলেছে হাতেনাতে।

উত্তরবঙ্গের এই আসন হাতছাড়া হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই ‘হতাশ’ বঙ্গ বিজেপি। গত লোকসভা নির্বাচনে মাদারিহাট আসন থেকে ১১ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন বিজেপি প্রার্থী মনোজ। হারের পর মনোজ টিগ্গা বলছেন, ‘‘আমি দলকে হারের বিষয়ে জানিয়েছি। এ ছাড়াও কোচবিহারের বিজেপি বিধায়ক নিখিলরঞ্জন দে এই নির্বাচনের দায়িত্বে ছিলেন। তিনিও তাঁর মতো করে পরাজয়ের কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। এ বিষয়ে আমরা প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করব না।’’ প্রসঙ্গত, আলিপুরদুয়ার লোকসভার অধীন এই আসনটি উপনির্বাচনে বিজেপির কাছে ছিল একমাত্র আশার আলো। সেটাও ধরে রাখতে পারল না গেরুয়া শিবির। রাজ্য বিজেপি সূত্রে খবর, দলের সভাপতি জেপি নাড্ডার কাছে পাঠান টিগ্গার রিপোর্টে জানানো হয়েছে, কী ভাবে শাসকদল তৃণমূল পেশিশক্তি ব্যবহার করে বিজেপির ভোটারদের ভোট দিতে দেয়নি। পাশাপাশি পুলিশ-প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে ভোট লুট করারও কৌশলও ব্যবহার করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই এই বিরাট ব্যবধানে বিজেপি প্রার্থী রাহুল লোহারকে হারতে হয়েছে তৃণমূলের জয়প্রকাশ টোপ্পোর কাছে। বিজেপি সূত্রে খবর, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই আসনে ফের পদ্মফুল ফোটানো সম্ভব বলেই ওই রিপোর্টে উল্লেখ করেছেন বিজেপি সাংসদ।

Advertisement

Advertisement