পুজোর মুখে বড় বিপর্যয়। টানা বৃষ্টি শুরু হতেই ফের ধসে পড়ল ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের একাধিক জায়গা। মঙ্গলবার ২৮ মাইলে এবং বৃহস্পতিবার সেতিঝোরায় ধস নেমে বন্ধ সোজাপথে শিলিগুড়ি-সিকিম যোগাযোগ। যদি আরও ভাল করে বলতে হয়, তাহলে বলাই যায়, গোটা দেশের সঙ্গে সড়কপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সিকিমের। ঘুরপথ যদিও আছে, তাও এই বৃষ্টি না থামলে নিরাপদ নয়। এমন বর্ষণে সিকিমের একমাত্র বিমানবন্দরেও বিমান চলাচল সম্ভব নয়। তাই পর্যটনে বিরাট ধাক্কা।
মঙ্গলবার রাতের বৃষ্টিতে ‘ধস বিপদে’ বুধবার দিনভর যান চলাচল বন্ধই থাকল সিকিমের লাইফলাইনে। ২৮ মাইলের পাশাপাশি ধস নামে মেল্লি-রংপোর মাঝামাঝি এলাকায়। বৃহস্পতিবারও দার্জিলিং এবং কালিম্পং জেলায় লাল সতর্কতা জারি হয়েছে। ভারী বর্ষণের আশঙ্কা রয়েছে সিকিম পাহাড়েও। ফলে রাস্তাটির ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দিনের পর দিন রাস্তাটি বন্ধ থাকায় গত চার মাসে শুধু পর্যটন শিল্প মুখ থুবড়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন পর্যটন সার্কিটের বিশেষজ্ঞরা। পুজোর মুখে ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা বাড়ছে পর্যটন মহলে। এমন অশনি পরিস্থিতিতে প্রশাসনিক ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
বর্ষা শুরু হওয়ার পর থেকেই বেহাল ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। বর্তমান শরৎ কালেও সকালে রাস্তা খোলা থাকলেই বিকেলে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পুজো যত এদিয়ে আসছে, ততই সিকিমের লাইফলাইন নিয়ে ভীতি বাড়ছে। পর্যটন মহলের বক্তব্য, জুন থেকে চলতি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত একমাত্র এই রাস্তাটির জন্য ব্যবসায় ক্ষতির পরিমাণ প্রায় পাঁচশো কোটি টাকা। পুজোর সময় রাস্তাটি বন্ধ থাকলে ক্ষতির পরিমাণ হাজার কোটি টাকা ছাপিয়ে যাবে বলে পর্যটন ব্যবসায়ীদের বক্তব্য। হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড টুরিজম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যাল দাবি করেন, ‘করোনা পরবর্তী বছরে এতটা উদ্বেগে আমরা ছিলাম না, যা রয়েছি এ বছরের পুজোতে। শুধুমাত্র ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের জন্য। সমস্ত দিক হিসেব কষে আমরা দেখেছি গত চার মাসে পর্যটনে ক্ষতি হয়েছে পাঁচশো কোটি টাকা।’
সংগঠনের অভিযোগ, ‘জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির সময় তিস্তা বরাবর গার্ডওয়াল তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এনএইচপিসি। কিন্তু কিছুই করা হয়নি।' ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের ফল শুধু সিকিম, কালিম্পং ভোগ করছে তা নয়, দার্জিলিংকেও মাশুল গুনতে হচ্ছে বলে বক্তব্য পর্যটন ব্যবসায়ীদের বড় অংশের। পর্যটন ব্যবসায়ী শুভাশিস চক্রবর্তী দাবি করেন, ‘এখন সমাজমাধ্যমের জন্য দ্রুত খবর ছড়িয়ে পড়ছে। ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক বন্ধ থাকায়, অনেকেই মনে করছেন দার্জিলিংয়ে যাওয়া যাবে না। একের পর এক বুকিং বাতিল হচ্ছে। বর্তমানে সিকিমের অধিকাংশ হোটেলই লিজ নিয়ে চালাচ্ছেন সমতলের বাঙালিরা। রাস্তা বেহালে চরম সমস্যায় পড়েছেন তাঁরা। লিজের টাকা ওঠাতে পারবেন কি না, আশঙ্কায়. তাঁরা।
জাতীয় সড়কটি প্রায় দিন বন্ধ থাকায় ঘুরপথে চাকা গড়াচ্ছে গাড়ির। এর ফলে তেল খরচ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি খারাপ রাস্তায় গাড়ির ক্ষতি হচ্ছে বলে পরিবহণ ব্যবসায়ীদেরও অভিযোগ। অথচ বাড়তি ভাড়া দিতে রাজি নন কেউ। রোজই যাত্রীদের সঙ্গে গাড়িচালকদের বচসা, হাতাহাতি হচ্ছে। ফলে পুজোর আগে এখন মাথাব্যথার নাম ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক।