
লাগাতার বৃষ্টির জেরে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলা। একাধিক জেলায় জল জমে জীবন দূর্বিষহ। সোমবার বৃষ্টিতে সামান্য বিরতির ফলে কিছুটা আশা ফিরলেও আবহাওয়ার দফতরের পূর্বাভাসে তেমন কোনও স্থায়ী প্রতিশ্রুতি মিলছে না। উত্তরবঙ্গের কয়েক হাজার মানুষ গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে। স্বাভাবিক জনজীবন ব্যহত হয়েছে। পাশাপাশি টানা বর্ষণের জেরে সিকিমগামী ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের একাংশ ধসে যায়। মালদা, ডুয়ার্স, দক্ষিণ দিনাজপুর সর্বত্র জলের নীচে বাজার ঘাট, ঘরবাড়ি। পুজোর আগে বিপাকে উত্তর।
জলমগ্ন দক্ষিণ দিনাজপুর
ভারী বর্ষণে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে দক্ষিণ দিনাজপুরের একাঝিক এলাকা। বিশেষত গঙ্গারামপুরে গৃহবন্দি পড়েছেন শহরের হাজার হাজার মানুষ। পুরসভার তরফে তাঁদের উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে নিরাপদ জায়গায়। ইতিমধ্যে প্রায় শতাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে স্থানীয় খেলার স্টেডিয়ামে। টানা বৃষ্টির জেরে শহরের দোকানপাট বন্ধ। ভারী বর্ষণের ফলে গঙ্গারামপুরের একাধিক পুজো মণ্ডপ ডুবে গিয়েছে। প্রবল বৃষ্টিতে ভেঙেছে পুনর্ভবা নদীর বাঁধও। ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন গঙ্গারামপুর ব্লকের সুকদেবপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের হোসেনপুর চৌধুরিপাড়া এলাকার বাসিন্দারা। জলমগ্ন হয়ে পড়েছে বেশ কয়েকটি গ্রাম।
মালদা জেলাতেও জল জমে বিপাক
বৃষ্টিতে জলমগ্ন মালদা শহর। শনিবার রাতে ঘণ্টা তিনেকের বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়ে মালদা। এদিকে মালদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে জমা জলের মধ্যে দিয়েই রোগীদের মেডিকেলে নিয়ে আসা এবং জলমগ্ন ওয়ার্ডে রোগীদের চিকিৎসাধীন অবস্থায় দেখা যায়।
মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুরেও শুরু হয়েছে মুষলধারে বৃষ্টি। বৃষ্টির জেরে ধুমসাডাঙ্গি গ্রামে হাঁটু সমান জল জমে রয়েছে। এমনকী বাড়িতে প্রবেশ করতে শুরু করেছে জল। পরিবারগুলিতে দেখা দিয়েছে চরম খাদ্য সংকট। শুকনো ভাত ও খিচুড়ি খেয়ে কোনরকমে দিন গুজরান করছে পরিবারগুলি।
একটানা বৃষ্টির জেরে কার্যত বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে গাজোল ব্লকেও। বৃষ্টির জলে ডুবে গিয়েছে তিনটি জাতীয় সড়ক। গাজোল বামনগোলা পূর্ত সড়কের বেশকিছু এলাকায় রাস্তার উপর দিয়ে বইছে জল। প্রায় ৫ ফুট জলের তলায় চলে গিয়েছে সাহাজাদপুর গ্রাম পঞ্চায়েত অফিস। আদিনার কাছে ঝিকরা এলাকায় ১২ নম্বর জাতীয় সড়কের একটি লেনে যান চলাচল বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ।
উত্তর দিনাজপুরে বিপদ বাড়ছে
একটানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন উত্তর দিনাজপুরও। রায়গঞ্জ শহরের বহু বাড়িতে জল ঢুকে পড়ায় অনেকে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে আশ্রয় নিয়েছে। রায়গঞ্জ শহরের এই অবস্থার জন্য রায়গঞ্জ পুরসভাকে দায়ী করছেন বাসিন্দারা। পুরসভার তরফ থেকে জানানো হয়েছে. এত পরিমাণে বৃষ্টি হয়েছে যার জেরে শহরের বেশিরভাগ ওয়ার্ডেই জল জমেছে। বিশেষ করে নীচু এলাকাগুলি জলমগ্ন। প্রয়োজন অনুযায়ী পাম্প সেট বসিয়ে জল বের করা চেষ্টা করা হবে।
আত্রেয়ীর জল বেড়ে যাওয়ায় নদী বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে বালুরঘাট শহর ও শহর সংলগ্ন এলাকায়। মোট আটটি জায়গায় নদী বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। যার মধ্যে চকভৃগু এলাকাতে তিনটি রয়েছে। গত কয়েকদিনে আত্রেয়ী নদীর জল বেড়েছে। বর্তমানে বিপদসীমার উপর দিয়ে জল বইছে আত্রেয়ীর। এদিকে আত্রেয়ীর জল বেড়ে যাওয়ায় সোমবার সকাল থেকে জল ঢুকতে শুরু করেছে বালুরঘাট শহরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের আত্রেয়ী কলোনিতে।
প্রবল বৃষ্টিতে টাঙন নদীর বাঁধ ভেঙে যায়। জলের প্রবল চাপ সহ্য করতে না পেরে তিন জায়গায় ভেঙে গেল টাঙন নদীর বাঁধ। বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় রবিবার থেকে প্রবল গতিতে জল ঢুকতে শুরু করেছে বসতি এলাকায়। জলের তলায় চলে যেতে বসেছে একের পর এক গ্রাম। তলিয়ে গেছে ফসলের জমি। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় চরম সমস্যার মধ্যে পড়েছেন চাপ নগর এবং শালাইডাঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষেরা।
জল জমেছে ডুয়ার্সেও
গত কয়েকদিন ধরে লাগাতার বৃষ্টিতে বেড়েছে ডুয়ার্সের প্রতিটি নদীর জলস্তর। আর এর জেরেই ভেসে গেল মেটেলি ব্লকের ইনডং নদীর ওপরে থাকা বাঁশের সাঁকো। এরফলে নদী পেরিয়ে যাতায়াতের ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়েছেন মাটিয়ালি বাতাবাড়ি ২ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের বাতাবাড়ি আজিম ধুরা ও দক্ষিণ ধূপঝোরা বাংলা পাড়ার বাসিন্দারা।
উত্তরবঙ্গের আবহাওয়ার পূর্বাভাস
সোমবার থেকে উত্তরবঙ্গের পার্বত্য এলাকা এবং সংলগ্ন জেলাগুলিতে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহারে সোম এবং মঙ্গলবার হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে দেশ থেকেও বিদায় নিচ্ছে বর্ষা। পশ্চিম রাজস্থান থেকে দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ু বিদায় নিতে শুরু করবে।