আবার খবরের শিরোনামে সেই শালবনী। বাংলার মানুষের কাছে পরিচিত নাম শালবনী। ১৭ বছর আগের একটি স্বপ্নের নাম শালবনী। ২০১১-র ভোটে পরিবর্তনের আন্দোলনের অন্যতম নাম শালবনী।
একদা মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকা শালবনী। আজ যখন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিন্দল গোষ্ঠীর প্রস্তাবিত তাপবিদ্যুত্ কেন্দ্রের শিলান্যাস করছেন, তখন ২০০৭-০৮ সালের সেই দিনগুলির স্মৃতি না উস্কে দিলেই নয়! ১৭ বছর তো কম নয়! শালবনীর মানুষ অপেক্ষা করে আছেন।
বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে শালবনীতে ৮০০ মেগাওয়াটের দু’টি বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির ঘোষণা করেছে জিন্দল গোষ্ঠী। ওই গোষ্ঠীর কর্ণধার সজ্জন জিন্দল জানিয়েছেন, ওই প্রকল্পের জন্য ১৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে। অবশেষে শিল্প, কর্মসংস্থানের স্বপ্ন বুনতে শুরু করল শালবনীর বাসিন্দারা।
কিন্তু এই স্বপ্নটি তো দেখিয়েছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যই। সে বারও তো শিলান্যাস হয়েছিল ইস্পাত কারখানার। সেই শিলান্যাসের পর মাওবাদী হামলা ও জমি আন্দোলন এবং পরিবর্তন। সব ওলটপালট করে দিয়েছিল রাজ্য রাজনীতিতে।
টাইমে মেশিনে চড়া যাক। আজ যে সব ছেলে-মেয়েদের বয়স ১৭ বা ১৮, তাঁদের কাছে এই সব ঘটনা স্বাভাবিক ভাবেই অজানা ইতিহাসের মতো। কিন্তু বাংলার একটি বড় অংশের মানুষের কাছে ২০০৭-০৮ সালের সেই সব ঘটনার স্মৃতি এখনও উজ্জ্বল।
শালবনীতে জিন্দল গোষ্ঠীর প্রস্তাবিত ইস্পাত কারখানা গড়ে উঠুক, খুব চেয়েছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ২০০৮ সালের অক্টোবর সবে সিঙ্গুর ছাড়ার কথা ঘোষণা করেছেন রতন টাটা। পরের মাসেই শালবনীতে জিন্দলদের প্রস্তাবিত ইস্পাত কারখানার শিলান্যাস হয়েছিল।
২০০৮ সালের ২ নভেম্বর। শালবনীতে সেই শিলান্যাস অনুষ্ঠানে এসেছিলেন তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, তৎকালীন কেন্দ্রীয় ইস্পাতমন্ত্রী রামবিলাস পাসওয়ান, জিন্দল কর্তা সজ্জন জিন্দল প্রমুখ। শালবনীতে জিন্দলদের জমি দেবে রাজ্য, এশিয়ার সর্ববৃহৎ ইস্পাত কারখানা গড়ে উঠবে এখানে, সিদ্ধান্ত হয়েছিল ২০০৭-এই। কিন্তু শিলান্যাসের দিনই হল ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণ।
লালগড় আন্দোলনের সেই শুরু। বাকিটা ইতিহাস। জিন্দলদের ইস্পাত কারখানার শিলান্যাস করে শালবনী থেকে মেদিনীপুরে ফিরছিলেন বুদ্ধবাবু। কলাইচণ্ডী খালের কাছে আচমকা বিকট বিস্ফোরণ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল কনভয়ে থাকা পুলিশের একটি গাড়ি। কমবেশি জখম হয়েছিলেন ৬ জন পুলিশকর্মী। অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন বুদ্ধবাবু। তদন্তে উঠে আসে মাওবাদী যোগসাজশ। ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণ এবং পরবর্তী আন্দোলনে সব ওলটপালট করে দেয়।
লালগড় আন্দোলনের সেই শুরু। বাকিটা ইতিহাস। জিন্দলদের ইস্পাত কারখানার শিলান্যাস করে শালবনী থেকে মেদিনীপুরে ফিরছিলেন বুদ্ধবাবু। কলাইচণ্ডী খালের কাছে আচমকা বিকট বিস্ফোরণ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল কনভয়ে থাকা পুলিশের একটি গাড়ি। কমবেশি জখম হয়েছিলেন ৬ জন পুলিশকর্মী। অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন বুদ্ধবাবু। তদন্তে উঠে আসে মাওবাদী যোগসাজশ। ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণ এবং পরবর্তী আন্দোলনে সব ওলটপালট করে দেয়।
ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে জড়িতদের খোঁজে লালগড়ে হানা দিতে শুরু করে পুলিশ। মাওবাদী সন্দেহে ধরপাকড় শুরু হয়। এর প্রতিবাদেই গড়ে ওঠে ‘পুলিশি সন্ত্রাস বিরোধী জনগণের কমিটি’। তার পর রাজনীতির জল বহু দূর গড়িয়েছে। রাজ্যে পালাবদল হয়েছে। তবে ইস্পাত কারখানা আর পায়নি শালবনী।
২০১১ সালে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১৩ সালে শুরু হয় নতুন করে আন্দোলন। আন্দোলনের জেরে অধিগৃহীত জমির একাংশে তৈরি হয় একটি সিমেন্ট কারখানা, যেখানে বর্তমানে কিছু স্থানীয় যুবক কাজের সুযোগ পেয়েছেন। তবে এখনও পড়ে রয়েছে জমির প্রায় ৮০ শতাংশ। এর পর ২০২৩ সালে স্পেনের মাদ্রিদ শহর থেকে মেদিনীপুরে একটি ইস্পাত কারখানা তৈরির ঘোষণা করেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ।